০৫:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সাভার–কেরানীগঞ্জসহ শিল্পাঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে ভালুকায় সহিংস ঘটনার পর মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন গাজীপুরে শীত বেড়ে যাওয়ায় অসহায়দের জন্য জরুরি সহায়তা কক্সবাজার–হাতিয়া সমুদ্রপথে ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া, নৌ চলাচলে সতর্কতা ময়মনসিংহে তীব্র শীত ও কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত গ্রাহক বৃদ্ধি কমায় বড় বাজেটের সিরিজ নিয়ে নতুন হিসাব কষছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো শীত ও জলবায়ু চাপে শহরমুখী হচ্ছে বন্যপ্রাণী, বাড়ছে মানব-প্রাণী সংস্পর্শ চরম শীতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে, বৈশ্বিক জ্বালানি অবকাঠামোর দুর্বলতা প্রকাশ সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর লাইফ এন্ডাওমেন্ট উদ্যোগে গুরুতর রোগীদের নতুন আশার আলো, একশ চল্লিশ রোগীর চিকিৎসায় টেকসই অর্থায়ন শুরু

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-১৯)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 55

পিওতর মান্তেইফেল

নুনের খিদে

মস্কোর আশেপাশের পাড়া থেকে প্রায়ই পাখি উড়ে আসে চিড়িয়াখানায়। বেশি আসে চড়ুই, মাঝে মাঝে সিসকিন, লিনেৎ, বুলফিপ্তের ভ্রাম্যমাণ ঝাঁক। পশুদের খাবার জায়গায় যেতে চায় তারা, যদিও খাবার জোটে নি, এমন নয়। সবচেয়ে বেশি করে তাদের টান নুনে, খুরওয়ালা জন্তুদের খাবার জায়গায় তা সাধারণত থাকে বড়ো বড়ো দানায়।
প্রকৃতি আমাদের কাছে মনে হয় বেশ সুসমঞ্জস, কিন্তু আসলে তাতে গরমিলও আছে। যেমন, বন্য অবস্থায় উদ্ভিদভোজী অধিকাংশ প্রাণীরই নূনুনের খিদে মেটে না। তামারিস্ক ঝোপের পাতা থেকে নোনতা শিশির চাটতে কিংবা কোনো নোনা ভাই পেয়ে গেলে তা আঁকড়ে ধরতে আমরা স্থলচর কাছিমদের দেখেছি একাধিকবার।
গরু-ভেড়া-ছাগল-ঘোড়া নূন চাটে সাগ্রহে। শীতকালটা বিনা নুনে কাটাবার পর হরিণের পাল গ্রীষ্মে ছোটে নোনা ভাইয়ে, গভীর গর্ত করে দেয় তাতে।
একবার চিড়িয়াখানায় উটপাখিদের দিকে আমি এক মুঠো নুন ধরেছিলাম। চঞ্চল হয়ে তারা তা লুফে নেয়, তারপর থেকে যতবার আমি ওদের কাছাকাছি দিয়ে গেছি ততবারই ছটফট করেছে তারা। কাঠ-বেড়ালি, খরগোস, মেঠো ইঁ’দুর সবারই নুন দরকার।
নিজেদের ‘নির্ম’ল’ রক্ত লবণাক্ত করার জন্যে প্রায়ই জায়গা বদল করতে হয় বন্য জন্তুদের। এক্ হরিণ, উত্তরী হরিণ প্রভৃতি অনেক জন্তু লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছয় সমুদ্র তীরে, তরঙ্গ-ভঙ্গের পর যে নোনা ফেনা পড়ে থাকে, সেটা চাটে।
মাংসাশী জন্তু ছাড়া প্রায় সব প্রাণীই দুনের অভাব বোধ করে, সেটা না জুটলে দুর্বল হয়ে পড়ে তারা, খিদে কমে যায়।
হিংস্র পশুর নুনের খিদে নেই, কেননা যেসব তৃণভোজীদের তারা খায়, তাদের মাংস, হাড়, রক্ত থেকেই প্রয়োজনীয় নূন পায় তারা।
তৃণভোজীদের ভিন্ন ব্যাপার। তাদের খাদ্য উদ্ভিদ। কিন্তু উদ্ভিদে সোডিয়ম ক্লোরাইড (অর্থাৎ খাবার নূন) কম, কেননা উদ্ভিদের শিকড় মাটি থেকে বেছে বেছে পটাশিয়ম লবণ আহরণ করে। খেতে যে সার দেওয়া হয়, সেটাও সোডিয়ম নয়, পটাশিয়ম লবণ। উদ্ভিদ‌ভোজী প্রাণী যখন নোনা ভাইয়ে এসে খাবার নূন বা সোডিয়ম সালফেট চেটে খায়, তখন সোডিয়ম লবণ তাদের রক্ত থেকে উদ্বৃত্ত পটাশিয়ম নিষ্কাশন করে, বেরিয়ে আসে তা প্রস্রাবের সঙ্গে। এইজন্যেই বনে, কৃত্রিম লবণস্থলে সাগ্রহেই এসে জোটে এক হরিণ, রো হরিণেরাই শুধু নয়, খরগোস, কাঠ-বেড়ালি, ই’দুর, আর উত্তরের বনে আসে লেতিয়াগাও। এদের সবারই ঘাটতি পড়ে খাবার নুনে, তা নইলে রক্তের বিন্যাস হয় অস্বাভাবিক, আর পাকস্থলীর পাচক রসে প্রয়োজনীয় হাইড্রো- ক্লোরিক অ্যাসিড মেলে না। নুন ছাড়া প্রাণীরা হয়ে পড়ে মরকুটে, প্রায়ই নানা রকম ব্যাধি দেখা দেয় তাদের। উদ্ভিদ‌ভোজী প্রাণীদের জন্যে নূনই যে সবচেয়ে ভালো টোপ, তাতে অবাক হবার কিছু নেই।
জনপ্রিয় সংবাদ

সাভার–কেরানীগঞ্জসহ শিল্পাঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-১৯)

০৮:০০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পিওতর মান্তেইফেল

নুনের খিদে

মস্কোর আশেপাশের পাড়া থেকে প্রায়ই পাখি উড়ে আসে চিড়িয়াখানায়। বেশি আসে চড়ুই, মাঝে মাঝে সিসকিন, লিনেৎ, বুলফিপ্তের ভ্রাম্যমাণ ঝাঁক। পশুদের খাবার জায়গায় যেতে চায় তারা, যদিও খাবার জোটে নি, এমন নয়। সবচেয়ে বেশি করে তাদের টান নুনে, খুরওয়ালা জন্তুদের খাবার জায়গায় তা সাধারণত থাকে বড়ো বড়ো দানায়।
প্রকৃতি আমাদের কাছে মনে হয় বেশ সুসমঞ্জস, কিন্তু আসলে তাতে গরমিলও আছে। যেমন, বন্য অবস্থায় উদ্ভিদভোজী অধিকাংশ প্রাণীরই নূনুনের খিদে মেটে না। তামারিস্ক ঝোপের পাতা থেকে নোনতা শিশির চাটতে কিংবা কোনো নোনা ভাই পেয়ে গেলে তা আঁকড়ে ধরতে আমরা স্থলচর কাছিমদের দেখেছি একাধিকবার।
গরু-ভেড়া-ছাগল-ঘোড়া নূন চাটে সাগ্রহে। শীতকালটা বিনা নুনে কাটাবার পর হরিণের পাল গ্রীষ্মে ছোটে নোনা ভাইয়ে, গভীর গর্ত করে দেয় তাতে।
একবার চিড়িয়াখানায় উটপাখিদের দিকে আমি এক মুঠো নুন ধরেছিলাম। চঞ্চল হয়ে তারা তা লুফে নেয়, তারপর থেকে যতবার আমি ওদের কাছাকাছি দিয়ে গেছি ততবারই ছটফট করেছে তারা। কাঠ-বেড়ালি, খরগোস, মেঠো ইঁ’দুর সবারই নুন দরকার।
নিজেদের ‘নির্ম’ল’ রক্ত লবণাক্ত করার জন্যে প্রায়ই জায়গা বদল করতে হয় বন্য জন্তুদের। এক্ হরিণ, উত্তরী হরিণ প্রভৃতি অনেক জন্তু লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছয় সমুদ্র তীরে, তরঙ্গ-ভঙ্গের পর যে নোনা ফেনা পড়ে থাকে, সেটা চাটে।
মাংসাশী জন্তু ছাড়া প্রায় সব প্রাণীই দুনের অভাব বোধ করে, সেটা না জুটলে দুর্বল হয়ে পড়ে তারা, খিদে কমে যায়।
হিংস্র পশুর নুনের খিদে নেই, কেননা যেসব তৃণভোজীদের তারা খায়, তাদের মাংস, হাড়, রক্ত থেকেই প্রয়োজনীয় নূন পায় তারা।
তৃণভোজীদের ভিন্ন ব্যাপার। তাদের খাদ্য উদ্ভিদ। কিন্তু উদ্ভিদে সোডিয়ম ক্লোরাইড (অর্থাৎ খাবার নূন) কম, কেননা উদ্ভিদের শিকড় মাটি থেকে বেছে বেছে পটাশিয়ম লবণ আহরণ করে। খেতে যে সার দেওয়া হয়, সেটাও সোডিয়ম নয়, পটাশিয়ম লবণ। উদ্ভিদ‌ভোজী প্রাণী যখন নোনা ভাইয়ে এসে খাবার নূন বা সোডিয়ম সালফেট চেটে খায়, তখন সোডিয়ম লবণ তাদের রক্ত থেকে উদ্বৃত্ত পটাশিয়ম নিষ্কাশন করে, বেরিয়ে আসে তা প্রস্রাবের সঙ্গে। এইজন্যেই বনে, কৃত্রিম লবণস্থলে সাগ্রহেই এসে জোটে এক হরিণ, রো হরিণেরাই শুধু নয়, খরগোস, কাঠ-বেড়ালি, ই’দুর, আর উত্তরের বনে আসে লেতিয়াগাও। এদের সবারই ঘাটতি পড়ে খাবার নুনে, তা নইলে রক্তের বিন্যাস হয় অস্বাভাবিক, আর পাকস্থলীর পাচক রসে প্রয়োজনীয় হাইড্রো- ক্লোরিক অ্যাসিড মেলে না। নুন ছাড়া প্রাণীরা হয়ে পড়ে মরকুটে, প্রায়ই নানা রকম ব্যাধি দেখা দেয় তাদের। উদ্ভিদ‌ভোজী প্রাণীদের জন্যে নূনই যে সবচেয়ে ভালো টোপ, তাতে অবাক হবার কিছু নেই।