শশাঙ্ক মণ্ডল
দ্বিতীয় অধ্যায়
ফাল্গুন-চৈত্র মাসে দক্ষিণা বাতাসে নদী উত্তাল হয়ে ওঠে, ছোট নৌকা এ পথে চলতে পারে না। তা ছাড়া অনেক এলাকা সুন্দরবনের গভীর অরণ্যের মধ্যে থাকায় যাত্রীদের পক্ষে এ-পথে যাতায়াত সম্ভব ছিল না। সে যুগে এ পথকে বলা হত দক্ষিণের সুন্দরবন পথ। সুন্দরবন, পূর্ববাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিজাত পণ্যাদি এ পথেই কলকাতা বন্দরে নিয়ে আসা হত। ১৭৭২ খ্রীষ্টাব্দে মেজর উইলিয়াম টলি সরকারকে প্রস্তাব দিলেন আদিগঙ্গার পুরাণো প্রবাহ নতুন করে খনন করার এবং এই প্রবাহকে বিদ্যাধরীর সঙ্গে মিশিয়ে দেবার কথা বললেন। কোম্পানি এই প্রস্তাব অনুমোদন করায় ১৭৭৩ খ্রীষ্টাব্দে টালির নালার কাজ শুরু হল। খিদিরপুর থেকে পূর্ব দিকে গড়িয়া পর্যন্ত ৮ মাইল আদিগঙ্গার মজাখাত পুনরায় চওড়া করে কাটা হল এবং এই খালের সঙ্গে বিদ্যাধরীকে মিশিয়ে দেওয়ায় খিদিরপুর থেকে শামুকপোতা পর্যন্ত ১৭ মাইল এই খাল টালিয় নালা নামে পরিচিত।
এই পথ দিয়ে কলকাতা থেকে বের হয়ে বর্তমান ক্যানিং টাউনের পাশ দিয়ে সুন্দরবনের কয়েকটি নদী পার হয়ে হিঙ্গলগঞ্জ-হাসনাবাদের পথ ধরে আরও কয়েকটা নদী পার হয়ে বরিশালের নদীতে পড়া যেত। উনিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এই খাল দিয়ে অসংখ্য নৌকা যাতায়াত করত। ১৮২১ সালের দিকে যাতায়াতের দরুন টাকা বাবদ নৌকার কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে (১)
১৮১৯/২০ সাল
১৮২০/২১ সাল
৮৮,৪০১ টাকা ৮ আ. ১১পাই
৭৮,৪৯৫টা ৬আ. ৫পাই
এ সময় টালির নালার ওপর বাঁশদ্রোণী গড়িয়া গড়িয়াহাট চিতি কালীঘাট প্রভৃতিস্থানে খেয়াঘাট চালানোর জন্য বাৎসরিক চুক্তিতে বন্দোবস্ত দেওয়া হত। ১৮২১ – এ কালীঘাট ব্রীজ তৈরি হলে খেয়া বন্ধ হয়ে গেল। এ পথের নাম ছিল সেদিন Outer Sundarban Passage- বাহিরসুন্দরবন পথ।(১০)
কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের নিকট থেকে একটা খাল ধাপার মধ্য দিয়ে বিদ্যাধরীতে গিয়ে পড়ত এর পাশেই ছিল বৈঠকখানার হাট। এই স্মৃতি নিয়ে ক্রীক লেন এখনও অটুট আছে। ১৭৩৭ এর প্রচণ্ড ঝড়ে এই খালে অসংখ্য ডিঙি নৌকা ধ্বংস হয়েছিল বলে এই খাল ডিঙি ভাঙা খাল নামে পরিচিত ছিল। ১৮১০ খ্রীষ্টাব্দে শেষবারের মত এই খাল সংস্কার করা হয়েছিল কিন্তু ক্যানিং পর্যন্ত রেল লাইন-এর প্রয়োজনে এই খাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পথ ধরে ১৭৯৪ এর ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পুত্র পরিবার সহ উইলিয়াম কেরী আশ্রয়ের সন্ধানে রামরাম বসুর পিতৃব্যের নিকটে হাসনাবাদ লস্করনগরে আসেন।(১৬)
Leave a Reply