পিওতর মান্তেইফেল
পার্সেল
পার্সেলটা এসেছিল নভোসিবিষ্ক থেকে। এ শহরের পশূদ্যানের কিশোর জীববিদরা তা পাঠায় তাদের মস্কো সহযোগীদের কাছে।
সাগ্রহে কাঠের প্যাকিং বাক্সটা খুলতে লাগল ছেলেরা: সবারই ইচ্ছে তাড়াতাড়ি দেখে ভেতরে কী আছে। অবশেষে ঢাকনা খোলা হল, দেখা গেল দুটো কুসিয়ান মাছ।
পড়ে আছে একেবারে নিশ্চল হয়ে। মনে হল মারা গেছে।
যে বাক্সে মাছ পাঠানো হয়েছিল তার ছিল দু’দফা পাটাতন। মস্কোয় পাঠাবার সময় নভোসিবিষ্কের ছেলেরা তার ফাঁকে বরফ ভরে দিয়েছিল। কিন্তু আসতে আসতে বরফ গলে যায়, জল বেরিয়ে যায় ফাটল দিয়ে।
মাছদুটোকে রাখা হল জলে। এক ঘণ্টা পরে একটা মাছ কানকো নাড়িয়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগল। কিছুক্ষণ পর গামলার জলের মধ্যে সাঁতরাতেও শুরু করল সেটা। দ্বিতীয় মাছটা কিন্তু মারা গিয়েছিল।
নভোসিবিষ্ক থেকে মস্কো পর্যন্ত পাড়ি দিয়ে এসে যে মাছটা পুনর্জীবিত হল, দুঃখের বিষয় তার গায়ে দেখা গেল শয্যাক্ষত। পার্সেল পাঠাবার সময় কিশোর প্রকৃতিবিদরা যদি বুদ্ধি করে বাক্সে নরম তোষকের মতো কিছু পেতে দিত, তাহলে এটা ঘটত না।
মস্কো কমরেডদের কাছে চিঠিতে নভোসিবিষ্কের ছেলেরা জানিয়েছে যে তারা বহুদিন থেকে বিনা জলে মাছ বাঁচিয়ে রাখার পরীক্ষা চালাচ্ছে। লিখেছে, ‘এভাবে আমরা মাছ বাঁচিয়ে রেখেছি এগারো দিন পর্যন্ত। সব সময় আমরা তাপমাত্রা রেখেছি শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। এগারো দিন পরে মাছ জলে ছাড়লে তা ফের বে’চে উঠেছে।’
মস্কো চিড়িয়াখানার কিশোর জীববিদরাও ঋণী হয়ে রইল না নভোসিবিষ্ক পশুদ্যানে পার্সেল পাঠাল তারা। তাতে ছিল কয়েকটা সোনালী মাছ। এই সুদূর অস্বাভাবিক যাত্রায় তাদের পাঠাবার আগে ছেলেরা একটা পরীক্ষা চালায়। মাছগুলোকে একটা কৌটোয় পুরে তিন দিন ধরে তা রাখে বরফের মধ্যে। বাহাত্তর ঘণ্টা পরে জলে ছাড়ায় তারা আবার বে’চে ওঠে।
কিশোর প্রকৃতিবিদদের এই পরীক্ষাটার ব্যবহারিক তাৎপর্য অনেক। জলের মধ্যে রেখে জীবন্ত মাছ আমদানি করা খুব জটিল ব্যাপার, সব সময় তা সম্ভবপরও নয়। পরিবহণের এ পদ্ধতিতে প্রায়ই ধাক্কা লেগে মাছেদের গা ছড়ে যায় খুব। মাছকে বাঁচিয়ে রেখে শুকনো প্যাকেটে পাঠানো অনেক সহজ।
মস্কো আর নভোসিবিস্ফে’র ছেলেদের মধ্যে পার্সেল বিনিময়ের পর আমরা খবর পেলাম যে রেফ্রিজারেটর শিল্পের লেনিনগ্রাদ ইনস্টিটিউটেও একই রকম পরীক্ষা চলছে। আমাদের কিশোর জীববিদদের মতো সেখানেও পুনরুজ্জীবন সম্ভব হয়েছে কেবল সেইসব ক্ষেত্রে যেখানে ঠান্ডায় জমানো হয়েছে কেবল মাছের গায়ের ওপরের স্তরটা। সে সময় মাছ থাকে তথাকথিত অ্যানাবিওসিস, বা ‘আপাত-মৃত্যুর’ অবস্থায়।
লেনিনগ্রাদ ইনস্টিটিউটে বরফ দিয়ে মাছেদের ঠান্ডা করা হয় শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত। ল্যাবরেটরিতে ছোটো ছোটো কার্প মাছ নিয়ে পরীক্ষা করার পর ইনস্টিটিউটের কর্মীরা বড়ো বড়ো মাছ নিয়ে শুরু করেন। আস্ত্রাখানের কাছে একটা মৎস্য-কেন্দ্রে বড়ো বড়ো পাঁচটা স্টার্জ’ন মাছকে ঠান্ডা করা হয়। মাছগুলো ছিল সাড়ে ষোলো ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপের জল-ভরা দুটো পিপেতে। জলের মধ্যে ক্রমেই বেশি বেশি বরফ দিয়ে তার তাপমাত্রা নামানো হয় শূন্য ডিগ্রিতে। নড়চড়া বন্ধ হয়ে যায় মাছেদের, ‘আপাত-মৃত্যুর’ অবস্থায় পৌঁছয় তারা। দু’ঘণ্টা পরে মাছগুলোকে বার করে রাখা হয় বরফে, প্যাক করা হয় বিশেষ এক ধরনের বাক্সে।
তারপর বাক্সগুলোকে তোলা হয় রেফ্রিজারেটর-জাহাজের খোলে। পরের দিন জাহাজ পৌঁছয় আস্তাখানে। খোলা হল বাক্স। আগের মতোই মাছগুলো নিশ্চল, মনে হল মরে গেছে। কিন্তু উফ (১৭ ডিগ্রি) জলে তাদের রাখতেই তারা চাঙ্গা হয়ে ওঠে! বলাই বাহুল্য, বিনা জলে জ্যান্ত মাছ পরিবহণ একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে ওঠার আগে আরো পরীক্ষা চালাতে হবে কম নয়। তবে এখনি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে এ রকম পদ্ধতি পুরোপুরি সম্ভবপর, অদূর ভবিষ্যতে কিশোর জীববিদদের পরীক্ষা ব্যাপকভাবে কাজে লাগবে।
Leave a Reply