০১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

ক্রিকালেভ যেভাবে মহাকাশ থেকে দেখেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন

  • Sarakhon Report
  • ১২:১৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪
  • 18

সারাক্ষণ ডেস্ক

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ঘটনাটি ছিল দ্রুত এবং একইসাথে ধীর। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে বার্লিন প্রাচীরের পতন সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষের সূচনা করে। একের পর এক উপগ্রহ রাষ্ট্রগুলো স্বাধীনতার আন্দোলনে শক্তি অর্জন করতে থাকে এবং ১৯৯০ সালের মে মাসে বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে, ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর, মস্কোর ক্রেমলিন থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল পতাকা সরিয়ে বর্তমানের রাশিয়ার ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলন করা হয়। মিখাইল গর্ভাচভ তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং বরিস ইয়েলতসিন নতুন রাশিয়ান সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় ৭৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসন রাশিয়ায় শেষ হয়।

এই পরিবর্তন প্রক্রিয়াটি মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও একেবারে মসৃণ ছিল না। শেষ মাসগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে অর্থনৈতিক উথাল-পাথালও দেখা দেয়। বিশ্ব এটি দেখার জন্য শ্বাস রুদ্ধ করে অপেক্ষা করছিল, কিন্তু মির স্পেস স্টেশনে অপেক্ষমাণ এক মহাকাশচারীর কথা খুব কম মানুষই ভাবছিল। সেই মহাকাশচারী ছিলেন সের্গেই ক্রিকালেভ।

সের্গেই ক্রিকালেভ ১৯৫৮ সালে লেনিনগ্রাদে জন্মগ্রহণ করেন। লেনিনগ্রাদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৮১ সালে দেশটির বৃহত্তম মহাকাশ নকশা সংস্থা এনপিও এনার্জিয়ায় যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি স্যাল্যুট ৭ স্পেস স্টেশনের উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন এবং মহাকাশচারী হিসেবে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তিনি প্রথমবার মির স্টেশন পরিদর্শন করেন ১৯৮৮ সালে।

১৯৯১ সালের মে মাসে, ক্রিকালেভ দ্বিতীয়বার মির স্টেশনে যান। তখন তার সঙ্গী ছিলেন কমান্ডার আনাতোলি আরতসেবারস্কি এবং ব্রিটিশ মহাকাশচারী হেলেন শারম্যান। তারা সোভিয়েত বেইকনুর কসমোড্রোম থেকে উৎক্ষেপণ হন। মির স্টেশনে পৌঁছানোর সময় নেভিগেশন সিস্টেম ব্যর্থ হয়, কিন্তু ক্রিকালেভ নিজের দক্ষতায় নিরাপদে ডক করতে সক্ষম হন। তার মিশনটি পাঁচ মাস ধরে পরিচালিত হয়েছিল এবং এর অংশ হিসেবে ছয়টি মহাকাশে হাঁটা সম্পন্ন করতে হয়েছিল।

মহাকাশে অবস্থানকালে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিতে বিশাল পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আগস্টে গর্ভাচভের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা হয়, যা সোভিয়েত সরকারের ফাটলকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। যদিও গর্ভাচভ অভ্যুত্থান থেকে বেঁচে যান, তবুও এটি তার শাসনের শক্তি হারানোর আরও একটি প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৯১ সালের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সমস্যা তীব্র হয়।

এদিকে, ক্রিকালেভের ফিরে আসার জন্য নির্ধারিত সিটটি একটি কাজাখ মহাকাশচারীকে প্রদান করা হয়, কারণ সোভিয়েত সরকার কাজাখ কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করতে চেয়েছিল। নতুন দল মিরে পৌঁছানোর কথা ছিল অক্টোবর মাসে, কিন্তু তাদের কারোই ক্রিকালেভের মতো অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে তাকে স্টেশনে থাকতে বলা হয়।

ক্রিকালেভের স্ত্রী এলেনা মিশন কন্ট্রোলে থেকে তার সাথে যোগাযোগ রাখতেন। তাদের একটি ছোট মেয়ে ছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সংকটের কারণে তাদের পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এলেনা বলেন, “আমি কখনোই কষ্টের কথা বলতাম না কারণ আমার মনে হতো ওর জন্য এটা কঠিন হবে।”

মির স্টেশনে থেকে ক্রিকালেভ দেখছিলেন পৃথিবীর পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। সেই সময়ে মহাকাশ প্রোগ্রামটির অর্থায়নে সমস্যা দেখা দেয় এবং সয়ুজ রকেটের আসন বিক্রি হতে থাকে। এভাবেই এক মহাকাশচারী মহাকাশ থেকে তার দেশের পতন প্রত্যক্ষ করেন, যা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।ক্রিকালেভের মহাকাশে অবস্থান দীর্ঘায়িত হতে থাকায়, তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল। মহাকাশে দীর্ঘকাল অবস্থানের ফলে পেশি ক্ষয়, বিকিরণজনিত ঝুঁকি, ক্যান্সারের আশঙ্কা, হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, এবং স্নায়ুজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্রিকালেভের জন্য তা ছিল আরও ঝুঁকিপূর্ণ কারণ পৃথিবীতে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ কর্মসূচি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল।

সেসময় সোভিয়েত মহাকাশ সংস্থার কাছে দুটি বিকল্প ছিল: ক্রিকালেভ এবং তার সহকর্মী ইউক্রেনীয় মহাকাশচারী আলেকজান্ডার ভলকভকে মির স্টেশন থেকে রাডুগা ক্যাপসুল ব্যবহার করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা অথবা তাদের স্টেশন তত্ত্বাবধান করার জন্য সেখানে রেখে দেওয়া। স্টেশনটি বিক্রি করা হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল, তাই তাদের উপস্থিতি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

অবশেষে, ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে, প্রায় ৩১১ দিন মহাকাশে কাটানোর পর, ক্রিকালেভ পৃথিবীতে ফিরে আসেন। এত দীর্ঘ সময় মহাকাশে অবস্থানের ফলে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় পরিবর্তন ঘটেছিল। কিন্তু তিনি ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় হয়ে উঠেছিলেন কারণ তিনি একমাত্র মহাকাশচারী ছিলেন, যিনি পৃথিবীর রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তনের সময় মহাকাশে আটকে ছিলেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

সোভিয়েত পতনের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকালেভের জীবনের এই অধ্যায় মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে একটি বিরল এবং গভীর স্মৃতি হয়ে থাকবে, যা কেবল একজন মহাকাশচারীর অভিজ্ঞতা নয়, বরং এক বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাক্ষ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকালেভের এই অভিজ্ঞতা শুধু মহাকাশ অভিযানের একটি ঘটনা নয়; এটি পৃথিবীর একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তিরও প্রতীক। তিনি একা মহাকাশে অবস্থানকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন প্রত্যক্ষ করেছিলেন, যা বিশ্বের জন্য এক যুগান্তকারী মুহূর্ত। এই সময়ে তার সহনশীলতা ও মনোবল তাকে শুধু একজন মহাকাশচারী হিসেবে নয়, বরং মানবিক দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

মহাকাশে কাটানো দীর্ঘ সময় এবং সোভিয়েত পতনের চাপ সত্ত্বেও, ক্রিকালেভ নিজের মিশনে পুরোপুরি নিবেদিত ছিলেন। তার এই আত্মত্যাগ এবং ধৈর্য তাকে মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে অমর করে তুলেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তিনি নতুন রাশিয়ান মহাকাশ সংস্থার অধীনে কাজ চালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে আরও অনেক মহাকাশ মিশনে অংশ নেন। ক্রিকালেভ শেষ পর্যন্ত মহাকাশে ৮০০ দিনেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন এবং মহাকাশ অভিযানে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন।

ক্রিকালেভের এই যাত্রা মানবিক দৃঢ়তা এবং বিজ্ঞানী হিসেবে তার আত্মত্যাগের অনন্য উদাহরণ হয়ে রয়েছে। সোভিয়েত পতনের প্রেক্ষাপটে মহাকাশে তার একাকী অবস্থান এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে তার অবিচলিত ধৈর্য ও সাহস তাকে ইতিহাসের অন্যতম মহান মহাকাশচারী হিসেবে স্মরণীয় করে তুলেছে।

ক্রিকালেভ যেভাবে মহাকাশ থেকে দেখেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন

১২:১৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

সারাক্ষণ ডেস্ক

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ঘটনাটি ছিল দ্রুত এবং একইসাথে ধীর। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে বার্লিন প্রাচীরের পতন সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষের সূচনা করে। একের পর এক উপগ্রহ রাষ্ট্রগুলো স্বাধীনতার আন্দোলনে শক্তি অর্জন করতে থাকে এবং ১৯৯০ সালের মে মাসে বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে, ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর, মস্কোর ক্রেমলিন থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল পতাকা সরিয়ে বর্তমানের রাশিয়ার ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলন করা হয়। মিখাইল গর্ভাচভ তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং বরিস ইয়েলতসিন নতুন রাশিয়ান সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় ৭৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসন রাশিয়ায় শেষ হয়।

এই পরিবর্তন প্রক্রিয়াটি মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও একেবারে মসৃণ ছিল না। শেষ মাসগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে অর্থনৈতিক উথাল-পাথালও দেখা দেয়। বিশ্ব এটি দেখার জন্য শ্বাস রুদ্ধ করে অপেক্ষা করছিল, কিন্তু মির স্পেস স্টেশনে অপেক্ষমাণ এক মহাকাশচারীর কথা খুব কম মানুষই ভাবছিল। সেই মহাকাশচারী ছিলেন সের্গেই ক্রিকালেভ।

সের্গেই ক্রিকালেভ ১৯৫৮ সালে লেনিনগ্রাদে জন্মগ্রহণ করেন। লেনিনগ্রাদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৮১ সালে দেশটির বৃহত্তম মহাকাশ নকশা সংস্থা এনপিও এনার্জিয়ায় যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি স্যাল্যুট ৭ স্পেস স্টেশনের উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন এবং মহাকাশচারী হিসেবে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তিনি প্রথমবার মির স্টেশন পরিদর্শন করেন ১৯৮৮ সালে।

১৯৯১ সালের মে মাসে, ক্রিকালেভ দ্বিতীয়বার মির স্টেশনে যান। তখন তার সঙ্গী ছিলেন কমান্ডার আনাতোলি আরতসেবারস্কি এবং ব্রিটিশ মহাকাশচারী হেলেন শারম্যান। তারা সোভিয়েত বেইকনুর কসমোড্রোম থেকে উৎক্ষেপণ হন। মির স্টেশনে পৌঁছানোর সময় নেভিগেশন সিস্টেম ব্যর্থ হয়, কিন্তু ক্রিকালেভ নিজের দক্ষতায় নিরাপদে ডক করতে সক্ষম হন। তার মিশনটি পাঁচ মাস ধরে পরিচালিত হয়েছিল এবং এর অংশ হিসেবে ছয়টি মহাকাশে হাঁটা সম্পন্ন করতে হয়েছিল।

মহাকাশে অবস্থানকালে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিতে বিশাল পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আগস্টে গর্ভাচভের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা হয়, যা সোভিয়েত সরকারের ফাটলকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। যদিও গর্ভাচভ অভ্যুত্থান থেকে বেঁচে যান, তবুও এটি তার শাসনের শক্তি হারানোর আরও একটি প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৯১ সালের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সমস্যা তীব্র হয়।

এদিকে, ক্রিকালেভের ফিরে আসার জন্য নির্ধারিত সিটটি একটি কাজাখ মহাকাশচারীকে প্রদান করা হয়, কারণ সোভিয়েত সরকার কাজাখ কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করতে চেয়েছিল। নতুন দল মিরে পৌঁছানোর কথা ছিল অক্টোবর মাসে, কিন্তু তাদের কারোই ক্রিকালেভের মতো অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে তাকে স্টেশনে থাকতে বলা হয়।

ক্রিকালেভের স্ত্রী এলেনা মিশন কন্ট্রোলে থেকে তার সাথে যোগাযোগ রাখতেন। তাদের একটি ছোট মেয়ে ছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সংকটের কারণে তাদের পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এলেনা বলেন, “আমি কখনোই কষ্টের কথা বলতাম না কারণ আমার মনে হতো ওর জন্য এটা কঠিন হবে।”

মির স্টেশনে থেকে ক্রিকালেভ দেখছিলেন পৃথিবীর পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। সেই সময়ে মহাকাশ প্রোগ্রামটির অর্থায়নে সমস্যা দেখা দেয় এবং সয়ুজ রকেটের আসন বিক্রি হতে থাকে। এভাবেই এক মহাকাশচারী মহাকাশ থেকে তার দেশের পতন প্রত্যক্ষ করেন, যা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।ক্রিকালেভের মহাকাশে অবস্থান দীর্ঘায়িত হতে থাকায়, তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল। মহাকাশে দীর্ঘকাল অবস্থানের ফলে পেশি ক্ষয়, বিকিরণজনিত ঝুঁকি, ক্যান্সারের আশঙ্কা, হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, এবং স্নায়ুজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্রিকালেভের জন্য তা ছিল আরও ঝুঁকিপূর্ণ কারণ পৃথিবীতে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ কর্মসূচি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল।

সেসময় সোভিয়েত মহাকাশ সংস্থার কাছে দুটি বিকল্প ছিল: ক্রিকালেভ এবং তার সহকর্মী ইউক্রেনীয় মহাকাশচারী আলেকজান্ডার ভলকভকে মির স্টেশন থেকে রাডুগা ক্যাপসুল ব্যবহার করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা অথবা তাদের স্টেশন তত্ত্বাবধান করার জন্য সেখানে রেখে দেওয়া। স্টেশনটি বিক্রি করা হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল, তাই তাদের উপস্থিতি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

অবশেষে, ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে, প্রায় ৩১১ দিন মহাকাশে কাটানোর পর, ক্রিকালেভ পৃথিবীতে ফিরে আসেন। এত দীর্ঘ সময় মহাকাশে অবস্থানের ফলে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় পরিবর্তন ঘটেছিল। কিন্তু তিনি ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় হয়ে উঠেছিলেন কারণ তিনি একমাত্র মহাকাশচারী ছিলেন, যিনি পৃথিবীর রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তনের সময় মহাকাশে আটকে ছিলেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

সোভিয়েত পতনের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকালেভের জীবনের এই অধ্যায় মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে একটি বিরল এবং গভীর স্মৃতি হয়ে থাকবে, যা কেবল একজন মহাকাশচারীর অভিজ্ঞতা নয়, বরং এক বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাক্ষ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকালেভের এই অভিজ্ঞতা শুধু মহাকাশ অভিযানের একটি ঘটনা নয়; এটি পৃথিবীর একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তিরও প্রতীক। তিনি একা মহাকাশে অবস্থানকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন প্রত্যক্ষ করেছিলেন, যা বিশ্বের জন্য এক যুগান্তকারী মুহূর্ত। এই সময়ে তার সহনশীলতা ও মনোবল তাকে শুধু একজন মহাকাশচারী হিসেবে নয়, বরং মানবিক দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

মহাকাশে কাটানো দীর্ঘ সময় এবং সোভিয়েত পতনের চাপ সত্ত্বেও, ক্রিকালেভ নিজের মিশনে পুরোপুরি নিবেদিত ছিলেন। তার এই আত্মত্যাগ এবং ধৈর্য তাকে মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে অমর করে তুলেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তিনি নতুন রাশিয়ান মহাকাশ সংস্থার অধীনে কাজ চালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে আরও অনেক মহাকাশ মিশনে অংশ নেন। ক্রিকালেভ শেষ পর্যন্ত মহাকাশে ৮০০ দিনেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন এবং মহাকাশ অভিযানে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন।

ক্রিকালেভের এই যাত্রা মানবিক দৃঢ়তা এবং বিজ্ঞানী হিসেবে তার আত্মত্যাগের অনন্য উদাহরণ হয়ে রয়েছে। সোভিয়েত পতনের প্রেক্ষাপটে মহাকাশে তার একাকী অবস্থান এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে তার অবিচলিত ধৈর্য ও সাহস তাকে ইতিহাসের অন্যতম মহান মহাকাশচারী হিসেবে স্মরণীয় করে তুলেছে।