০১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন শান্তি চুক্তির আরও কাছাকাছি, তবু ডনবাসে রয়ে গেল জটিলতা জেজু এয়ার দুর্ঘটনার বর্ষপূর্তিতে সত্য উন্মোচনের অঙ্গীকার, নিহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা রাষ্ট্রপতির ট্রাম্প–নেতানিয়াহুর বৈঠক আজ, গাজা যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে বাড়ছে কূটনৈতিক চাপ মিয়ানমারে ব্যালটের নীরবতা, ভোট হলেও আস্থা নেই থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক ধীরগতির ছায়ায় বিদেশমুখী ক্রুঙ্গসরি ব্যাংক আলোর দিকে হেঁটে যাওয়া, বন্ধুত্বের ছায়ায় ফাটল নিউইয়র্কে টারটুফের নতুন পাঠ, মলিয়েরের ব্যঙ্গ আজকের রাজনীতির আয়নায় নীরব পর্দায় অর্গানের জাদু: শতবর্ষ পেরিয়েও কেন সিনেমা হলে ফিরে আসছে জীবন্ত সুর স্বাধীনতার সাহস থেকে ভবিষ্যতের প্রেম: নতুন বইয়ে দাসত্ব, ধনকুবের আর জলবায়ুর গল্প শব্দের ঘর কি ভেঙে পড়ছে অভিধান টিকে থাকবে তো

মানব চিন্তা আপনার ইন্টারনেট সংযোগের তুলনায় অনেক ধীরগতির

  • Sarakhon Report
  • ০১:৩০:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 98

কার্ল জিমার

একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যেমানব মস্তিষ্কের জটিলতা ও শক্তি সম্পর্কে যে অতিরঞ্জন চলেতার বিপরীতে এটি একটি ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছেবলেছেন গবেষকদের একজন।

আমাদের ডিজিটাল যুগেধীরগতির ইন্টারনেট সংযোগ বিরক্তিকর খুব কম বিষয়ই আছে। ওয়েব ব্রাউজার হঠাৎ ঝিমিয়ে পড়েভিডিও কলে বন্ধুদের মুখ স্থির হয়ে যায়। তথ্য প্রবাহ থমকে গেলে আমরা যেন সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।

ইঞ্জিনিয়াররা এই তথ্য প্রবাহকে বিট-পার-সেকেন্ড বা বিপিএস (bps) দ্বারা মাপেন। একটি হাই-ডেফিনিশন ভিডিও স্ট্রিমিং করতে প্রায় ৫ মিলিয়ন বিপিএস লাগে। সাধারণ আমেরিকান বাড়িতে গড়ে ২৬২ মিলিয়ন বিপিএস ডাউনলোড গতি থাকে।

কিন্তু সম্প্রতি গবেষকরা হিসাব করে দেখেছেনমানুষের মস্তিষ্কে তথ্য প্রবাহের গতি মাত্র ১০ বিপিএস। তাঁদের গবেষণা রিপোর্টটি চলতি মাসে নিউরন নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছেযার শিরোনাম: “The unbearable slowness of being”

মানব মস্তিষ্কের অবিশ্বাস্য জটিলতা ও ক্ষমতা নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি চলে,” বললেন ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির স্নায়ুবিজ্ঞানী মার্কাস মেইস্টারযিনি গবেষণার অন্যতম লেখক। কিন্তু সংখ্যায় মাপতে গেলে দেখা যায়আমাদের গতি আশ্চর্যজনকভাবে ধীর।

ড. মেইস্টারের মনে এই গবেষণার ভাবনা আসে যখন তিনি একটি প্রাথমিক স্নায়ুবিজ্ঞান কোর্স পড়াচ্ছিলেন। তিনি ছাত্রদেরকে মস্তিষ্কের কয়েকটি মৌলিক পরিসংখ্যান বোঝাতে চাইছিলেন। কিন্তু মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে সেকেন্ডে কী পরিমাণ তথ্য প্রবাহিত হয়সেই সঠিক সংখ্যা তখনো বের করা হয়নি।

এরপর তিনি বুঝতে পারেনকিছু দৈনন্দিন কাজের গতি বিশ্লেষণ করলেই এই প্রবাহের হার মোটামুটি নিরূপণ করা সম্ভব। ধরুনকেউ টাইপ করছেনপ্রতিটি অক্ষর দেখছেনচিনে নিচ্ছেনতারপর সঠিক কী চেপে লেখাটি তৈরি করছেন। এই পুরো প্রক্রিয়ায় চোখ থেকে মস্তিষ্ক হয়ে আঙুলের পেশিতে তথ্য পৌঁছায়। তথ্য প্রবাহের হার যত বেশি হবেটাইপ করার গতি তত বেশি হবে।

২০১৮ সালেফিনল্যান্ডের একদল গবেষক ১ লাখ ৬৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ১৩৬ মিলিয়ন কীস্ট্রোক বিশ্লেষণ করে দেখেনগড়ে মানুষ মিনিটে ৫১টি শব্দ টাইপ করে। খুব অল্প কিছু মানুষ মিনিটে ১২০ শব্দ বা তার চেয়েও বেশি টাইপ করতে সক্ষম হন। ড. মেইস্টার ও তাঁর স্নাতক শিক্ষার্থী জিয়েয়ু ঝেং তথ্য তত্ত্বের (information theory) গণনায় দেখলেন১২০ শব্দ-প্রতি-মিনিট টাইপ করার জন্য সেকেন্ডে মাত্র ১০ বিট তথ্য প্রবাহের প্রয়োজন হয়।

আমি ভেবেছিলামনিশ্চয়ই আরও গতিময় কাজ আছে,” বললেন ঝেং। তিনি ধারণা করেছিলেনপেশাদার ভিডিওগেমাররা হয়তো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় এর থেকেও বেশি তথ্য প্রবাহ ব্যবহার করেন। ইউটিউবে দেখলে দেখা যায়তাঁদের আঙুল এত দ্রুত চলে যে ভিডিওতে ঝাপসা লাগে।

গেমাররা খুব দ্রুত আঙুল চালালেওতাঁরা টাইপিস্টদের তুলনায় কম বোতাম ব্যবহার করেন। তাই বিশ্লেষণে দেখা গেলগেমারদের ক্ষেত্রেও সেই তথ্য প্রবাহের হার প্রায় ১০ বিপিএস-এর কাছাকাছি।

গবেষকরা ভাবলেনহয়তো আমাদের দেহের শারীরিক সীমাবদ্ধতার ফলেই এই তথ্য প্রবাহের বোতল-গলদ তৈরি হয়। তাই তাঁরা এমন কিছু মানসিক দক্ষতা পরীক্ষা করলেনযেখানে কায়িক গতির বিশেষ দরকার পড়ে না।

সেই রকম একটি দক্ষতা হলো ব্লাইন্ড স্পিডকিউবিংযেখানে প্রতিযোগী প্রথমে রুবিকস কিউব দেখে নেনতারপর চোখ বেঁধে দ্রুত সমাধান করেন। ২০২৩ সালের এক প্রতিযোগিতায়আমেরিকান স্পিডকিউবার টমি চেরি কিউবটি পর্যবেক্ষণে মাত্র ৫.৫ সেকেন্ড ব্যয় করেএরপর চোখ বেঁধে ৭.৫ সেকেন্ডে সেটি সমাধান করেন। মেইস্টার ও ঝেং-এর হিসাবে দেখা গেছেসেই পর্যবেক্ষণের সময় চেরির তথ্য প্রবাহ ছিল মাত্র ১১.৮ বিপিএস।

এমনকি অসাধারণ স্মরণশক্তির অধিকারীদের ক্ষেত্রেও তথ্য প্রবাহের গতি অপেক্ষাকৃত কম। ৫ মিনিট বাইনারি (5 Minute Binary) নামে এক ধরনের স্মৃতি-খেলায় খেলোয়াড়রা ১ ও ০ দিয়ে গঠিত একটি দীর্ঘ শৃঙ্খল মুখস্থ করার চেষ্টা করেন। পাঁচ মিনিট ধরে হাজারো সংখ্যা লেখা পৃষ্ঠাগুলো তারা দেখে নেনতারপর ১৫ মিনিট বিরতি নিয়ে যত বেশি সম্ভব সংখ্যার সঠিক ক্রম মনে করার চেষ্টা করেন।

২০১৯ সালে এই খেলায় বিশ্বরেকর্ড গড়েন মঙ্গোলিয়ার মেমরি চ্যাম্পিয়ন মানখশুর নারমানডাখ। তিনি ১,৪৬৭টি সংখ্যা নির্ভুলভাবে মনে রেখেছিলেন। মেইস্টার ও ঝেং-এর হিসাবেএটি করতে তাঁর তথ্য প্রবাহের গতি ছিল সেকেন্ডে মাত্র ৪.৯ বিট।

মানুষের চিন্তার এই গতি আমাদের ইন্দ্রিয়ে আসা বিপুল তথ্যের তুলনায় নগণ্য। গবেষকরা হিসাব করে দেখেছেনশুধু একটি চোখের কয়েক মিলিয়ন ফটোরিসেপ্টর সেলে সেকেন্ডে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন বিপিএস তথ্য চলে। অর্থাৎ আমরা আসলে প্রাপ্ত তথ্যের প্রতি ১০ কোটিতে মাত্র ১ বিট বাছাই করে সংরক্ষণ করি।

মানসিক প্রক্রিয়ায় এত বিশাল ফারাক রয়েছেএটা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের মধ্যে পর্যাপ্ত আলোচনা হয়নি,” বললেন ড. মেইস্টার। কেন আমরা এত তথ্য ফেলে দিই কিন্তু অল্প তথ্য দিয়ে দিব্যি কাজ চালিয়ে নিইসে প্রশ্নের উত্তর আরও বিস্তারিত গবেষণার দাবি রাখে।

কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিজ্ঞানী ব্রিটন সাওয়ারব্রাইযিনি এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন নামন্তব্য করেছেন যে মেইস্টার ও ঝেং হয়তো স্নায়ুতন্ত্রের মোট তথ্য প্রবাহের পুরোটাই ধরতে পারেননি। আমাদের দেহে দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটা কিংবা হোঁচট খাওয়ার পর সামলে নেওয়ার মতো অচেতন প্রক্রিয়াগুলোর তথ্য প্রবাহের হার যদি ধরা হয়, “তাহলে ওই হার অনেক অনেক বেশি বেড়ে যাবে,” বললেন তিনি।

কিন্তু সচেতন কাজ ও স্মৃতি সম্পর্কিত তথ্য প্রবাহের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ যে খুব বেশি নয়সে বিষয়ে ড. সাওয়ারব্রাই একমত। এই যুক্তি আমার কাছে বেশ দৃঢ় বলে মনে হচ্ছে,” বললেন তিনি।

জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী মার্টিন উইনার বলেনএই নতুন গবেষণা বিজ্ঞানীদেরকে অন্যান্য প্রাণীর তথ্য প্রবাহের হার নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করবে।

অনেকেই অন্য প্রাণীদের দিকে তেমন নজর দেননি,” বললেন ড. উইনার। হতে পারে কিছু প্রাণী আরও ধীরগতির তথ্য প্রবাহে টিকে থাকে। আবার উড়ন্ত পোকামাকড়ের ক্ষেত্রেযাদের উড়ন্ত অবস্থায় মুহূর্তের মধ্যে দিক পাল্টাতে হয়হয়তো মানুষের কল্পনাতীত অতি দ্রুত গতিতে তথ্য প্রবাহ ঘটে।

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন শান্তি চুক্তির আরও কাছাকাছি, তবু ডনবাসে রয়ে গেল জটিলতা

মানব চিন্তা আপনার ইন্টারনেট সংযোগের তুলনায় অনেক ধীরগতির

০১:৩০:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

কার্ল জিমার

একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যেমানব মস্তিষ্কের জটিলতা ও শক্তি সম্পর্কে যে অতিরঞ্জন চলেতার বিপরীতে এটি একটি ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছেবলেছেন গবেষকদের একজন।

আমাদের ডিজিটাল যুগেধীরগতির ইন্টারনেট সংযোগ বিরক্তিকর খুব কম বিষয়ই আছে। ওয়েব ব্রাউজার হঠাৎ ঝিমিয়ে পড়েভিডিও কলে বন্ধুদের মুখ স্থির হয়ে যায়। তথ্য প্রবাহ থমকে গেলে আমরা যেন সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।

ইঞ্জিনিয়াররা এই তথ্য প্রবাহকে বিট-পার-সেকেন্ড বা বিপিএস (bps) দ্বারা মাপেন। একটি হাই-ডেফিনিশন ভিডিও স্ট্রিমিং করতে প্রায় ৫ মিলিয়ন বিপিএস লাগে। সাধারণ আমেরিকান বাড়িতে গড়ে ২৬২ মিলিয়ন বিপিএস ডাউনলোড গতি থাকে।

কিন্তু সম্প্রতি গবেষকরা হিসাব করে দেখেছেনমানুষের মস্তিষ্কে তথ্য প্রবাহের গতি মাত্র ১০ বিপিএস। তাঁদের গবেষণা রিপোর্টটি চলতি মাসে নিউরন নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছেযার শিরোনাম: “The unbearable slowness of being”

মানব মস্তিষ্কের অবিশ্বাস্য জটিলতা ও ক্ষমতা নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি চলে,” বললেন ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির স্নায়ুবিজ্ঞানী মার্কাস মেইস্টারযিনি গবেষণার অন্যতম লেখক। কিন্তু সংখ্যায় মাপতে গেলে দেখা যায়আমাদের গতি আশ্চর্যজনকভাবে ধীর।

ড. মেইস্টারের মনে এই গবেষণার ভাবনা আসে যখন তিনি একটি প্রাথমিক স্নায়ুবিজ্ঞান কোর্স পড়াচ্ছিলেন। তিনি ছাত্রদেরকে মস্তিষ্কের কয়েকটি মৌলিক পরিসংখ্যান বোঝাতে চাইছিলেন। কিন্তু মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে সেকেন্ডে কী পরিমাণ তথ্য প্রবাহিত হয়সেই সঠিক সংখ্যা তখনো বের করা হয়নি।

এরপর তিনি বুঝতে পারেনকিছু দৈনন্দিন কাজের গতি বিশ্লেষণ করলেই এই প্রবাহের হার মোটামুটি নিরূপণ করা সম্ভব। ধরুনকেউ টাইপ করছেনপ্রতিটি অক্ষর দেখছেনচিনে নিচ্ছেনতারপর সঠিক কী চেপে লেখাটি তৈরি করছেন। এই পুরো প্রক্রিয়ায় চোখ থেকে মস্তিষ্ক হয়ে আঙুলের পেশিতে তথ্য পৌঁছায়। তথ্য প্রবাহের হার যত বেশি হবেটাইপ করার গতি তত বেশি হবে।

২০১৮ সালেফিনল্যান্ডের একদল গবেষক ১ লাখ ৬৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ১৩৬ মিলিয়ন কীস্ট্রোক বিশ্লেষণ করে দেখেনগড়ে মানুষ মিনিটে ৫১টি শব্দ টাইপ করে। খুব অল্প কিছু মানুষ মিনিটে ১২০ শব্দ বা তার চেয়েও বেশি টাইপ করতে সক্ষম হন। ড. মেইস্টার ও তাঁর স্নাতক শিক্ষার্থী জিয়েয়ু ঝেং তথ্য তত্ত্বের (information theory) গণনায় দেখলেন১২০ শব্দ-প্রতি-মিনিট টাইপ করার জন্য সেকেন্ডে মাত্র ১০ বিট তথ্য প্রবাহের প্রয়োজন হয়।

আমি ভেবেছিলামনিশ্চয়ই আরও গতিময় কাজ আছে,” বললেন ঝেং। তিনি ধারণা করেছিলেনপেশাদার ভিডিওগেমাররা হয়তো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় এর থেকেও বেশি তথ্য প্রবাহ ব্যবহার করেন। ইউটিউবে দেখলে দেখা যায়তাঁদের আঙুল এত দ্রুত চলে যে ভিডিওতে ঝাপসা লাগে।

গেমাররা খুব দ্রুত আঙুল চালালেওতাঁরা টাইপিস্টদের তুলনায় কম বোতাম ব্যবহার করেন। তাই বিশ্লেষণে দেখা গেলগেমারদের ক্ষেত্রেও সেই তথ্য প্রবাহের হার প্রায় ১০ বিপিএস-এর কাছাকাছি।

গবেষকরা ভাবলেনহয়তো আমাদের দেহের শারীরিক সীমাবদ্ধতার ফলেই এই তথ্য প্রবাহের বোতল-গলদ তৈরি হয়। তাই তাঁরা এমন কিছু মানসিক দক্ষতা পরীক্ষা করলেনযেখানে কায়িক গতির বিশেষ দরকার পড়ে না।

সেই রকম একটি দক্ষতা হলো ব্লাইন্ড স্পিডকিউবিংযেখানে প্রতিযোগী প্রথমে রুবিকস কিউব দেখে নেনতারপর চোখ বেঁধে দ্রুত সমাধান করেন। ২০২৩ সালের এক প্রতিযোগিতায়আমেরিকান স্পিডকিউবার টমি চেরি কিউবটি পর্যবেক্ষণে মাত্র ৫.৫ সেকেন্ড ব্যয় করেএরপর চোখ বেঁধে ৭.৫ সেকেন্ডে সেটি সমাধান করেন। মেইস্টার ও ঝেং-এর হিসাবে দেখা গেছেসেই পর্যবেক্ষণের সময় চেরির তথ্য প্রবাহ ছিল মাত্র ১১.৮ বিপিএস।

এমনকি অসাধারণ স্মরণশক্তির অধিকারীদের ক্ষেত্রেও তথ্য প্রবাহের গতি অপেক্ষাকৃত কম। ৫ মিনিট বাইনারি (5 Minute Binary) নামে এক ধরনের স্মৃতি-খেলায় খেলোয়াড়রা ১ ও ০ দিয়ে গঠিত একটি দীর্ঘ শৃঙ্খল মুখস্থ করার চেষ্টা করেন। পাঁচ মিনিট ধরে হাজারো সংখ্যা লেখা পৃষ্ঠাগুলো তারা দেখে নেনতারপর ১৫ মিনিট বিরতি নিয়ে যত বেশি সম্ভব সংখ্যার সঠিক ক্রম মনে করার চেষ্টা করেন।

২০১৯ সালে এই খেলায় বিশ্বরেকর্ড গড়েন মঙ্গোলিয়ার মেমরি চ্যাম্পিয়ন মানখশুর নারমানডাখ। তিনি ১,৪৬৭টি সংখ্যা নির্ভুলভাবে মনে রেখেছিলেন। মেইস্টার ও ঝেং-এর হিসাবেএটি করতে তাঁর তথ্য প্রবাহের গতি ছিল সেকেন্ডে মাত্র ৪.৯ বিট।

মানুষের চিন্তার এই গতি আমাদের ইন্দ্রিয়ে আসা বিপুল তথ্যের তুলনায় নগণ্য। গবেষকরা হিসাব করে দেখেছেনশুধু একটি চোখের কয়েক মিলিয়ন ফটোরিসেপ্টর সেলে সেকেন্ডে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন বিপিএস তথ্য চলে। অর্থাৎ আমরা আসলে প্রাপ্ত তথ্যের প্রতি ১০ কোটিতে মাত্র ১ বিট বাছাই করে সংরক্ষণ করি।

মানসিক প্রক্রিয়ায় এত বিশাল ফারাক রয়েছেএটা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের মধ্যে পর্যাপ্ত আলোচনা হয়নি,” বললেন ড. মেইস্টার। কেন আমরা এত তথ্য ফেলে দিই কিন্তু অল্প তথ্য দিয়ে দিব্যি কাজ চালিয়ে নিইসে প্রশ্নের উত্তর আরও বিস্তারিত গবেষণার দাবি রাখে।

কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিজ্ঞানী ব্রিটন সাওয়ারব্রাইযিনি এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন নামন্তব্য করেছেন যে মেইস্টার ও ঝেং হয়তো স্নায়ুতন্ত্রের মোট তথ্য প্রবাহের পুরোটাই ধরতে পারেননি। আমাদের দেহে দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটা কিংবা হোঁচট খাওয়ার পর সামলে নেওয়ার মতো অচেতন প্রক্রিয়াগুলোর তথ্য প্রবাহের হার যদি ধরা হয়, “তাহলে ওই হার অনেক অনেক বেশি বেড়ে যাবে,” বললেন তিনি।

কিন্তু সচেতন কাজ ও স্মৃতি সম্পর্কিত তথ্য প্রবাহের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ যে খুব বেশি নয়সে বিষয়ে ড. সাওয়ারব্রাই একমত। এই যুক্তি আমার কাছে বেশ দৃঢ় বলে মনে হচ্ছে,” বললেন তিনি।

জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী মার্টিন উইনার বলেনএই নতুন গবেষণা বিজ্ঞানীদেরকে অন্যান্য প্রাণীর তথ্য প্রবাহের হার নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করবে।

অনেকেই অন্য প্রাণীদের দিকে তেমন নজর দেননি,” বললেন ড. উইনার। হতে পারে কিছু প্রাণী আরও ধীরগতির তথ্য প্রবাহে টিকে থাকে। আবার উড়ন্ত পোকামাকড়ের ক্ষেত্রেযাদের উড়ন্ত অবস্থায় মুহূর্তের মধ্যে দিক পাল্টাতে হয়হয়তো মানুষের কল্পনাতীত অতি দ্রুত গতিতে তথ্য প্রবাহ ঘটে।