০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

গাড়ল – আবু ইসহাক

  • Sarakhon Report
  • ০৬:৫৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • 16
আবু ইসহাক
কোনো এক বইয়ে ইলিয়াস পড়েছিলেন: পাঠানদের কিছু আছে ঘড়েল আর বেশির ভাগই গাড়ল। তিনি ধুরন্ধর পাঠানও দেখেছেন আবার বোকাটে পাঠানও দেখেছেন। যারা ঘড়েল তাদের প্রায় সবাই কিছুটা বেঁটে এবং শক্তপোক্ত। ঢ্যাঙা ও ঢিলেঢালা পাঠানদের অনেককেই তাঁর গাড়ল বলে মনে হয়েছে।
জানুয়ারি মাস থেকে করাচিতে আসা শুরু করে বিভিন্ন জাতের আঙুর। সাদাটে ছোট গোলাকৃতির ও সাদাটে ছোট লম্বাকৃতির আঙুর বেশ ভালো। এই দুই জাতের কোনোটায় দানা নেই। বাজারজাত করার পর আঙুরের চাষীরা বাড়তি এসব আঙুর শুকিয়ে কিশমিশ বানায়। কোয়েটার দুই শ’ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত চমন নামে একটা জায়গা আছে। সেখানকার দানাবিহীন ছোট লম্বাকৃতির আঙুর সর্বোৎকৃষ্ট।
আর আছে সাদাটে বড় আঙুর। এগুলোর ভেতর দানা আছে। এগুলো শুকিয়ে মনক্কা তৈরি হয়। এ ছাড়াও আছে লালচে, কালচে ও মিশকালো রঙের আঙুর।
১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক বিকেলবেলা। ফেরিওয়ালার হাঁক শোনা গেল, আঙুর-খোরমানি-কেলা-।
ইলিয়াস তাঁর জাহাঙ্গির রোড-এর বাসা থেকে বেরিয়ে দেখেন, চার-চাকাওয়ালা ঠেলাগাড়ি ঠেলে তাঁর বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছে এক ঢ্যাঙা পাঠান। তাঁকে দেখে ফেরিওয়ালা তার গাড়ি থামায়।
-মেওয়া লেঙ্গে বাঙালি বাবু?
-কোন ছে মেওয়া হায় আপকা পাছ?
-আঙুর হায়, খোরমানি হায়, কেলা হায়।
ইলিয়াস এগিয়ে যান ঠেলাগাড়ির সামনে। সাদাটে গোল আঙুর আছে। কিন্তু এ আঙুর তাঁর পছন্দ নয়।
-ইয়ে তো বহত আচ্ছা আঙুর বাঙালি বাবু। আপ ক্যায়সা আঙুর মাংতা?
-ম্যয় চমনকা লম্বেওয়ালা আঙুর মাংতা।
-আপ লম্বেওয়ালা মাংতা তো কেলা লে যাইয়ে।
এ তো আচ্ছা এক গাড়ল! ভাবেন ইলিয়াস। তিনি কোনো কথা না বলে বাসায় চলে যান।
ঐ বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়। করাচির জাহাঙ্গির রোডের কাছে এক ফুটপাতে চার-চাকাওয়ালা ঠেলাগাড়ির উপর নানা ধরনের ফল সাজিয়ে বিক্রি করছে এক ঢ্যাঙা পাঠান।
ঠেলাগাড়ির উপর পাকা আম দেখে ইলিয়াস একটু অবাক হন। এত আগে তো আম পাকার কথা নয়! আরো অন্তত মাসখানেক পরে পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করবে। নিশ্চয়ই ওগুলো জাগ দেওয়া আম। তিনি ঠেলাগাড়ির কাছে গিয়ে একটা আম তুলে কানের কাছে নিয়ে এদিক-ওদিক ঝাঁকুনি দেন।
-ইয়ে তো ঝুমঝুমি নেহি হায় যো বাজেগা! শ্লেষাত্মক কন্ঠে বলে ওঠে ফলওয়ালা। ম্যয় শুনা হায় বাঙাল মুলুক কা আদমি বহত আকলমন্দ হোতা হায়। লেকিন তুম তো বুদ্দু হায়।
পাঠানের টিটকারি গায়ে না মেখে তিনি আর একটা আম তুলে কানের কাছে নিয়ে ঝাঁকুনি দেন। এটার ভেতর আঁটি ঢকঢক করছে। অপরিণত আম জাগ দিয়ে পাকালে ভেতরের নরম আঁটি সঙ্কুচিত হয়ে আম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং আঁটির খোঁড়লে ফাঁক সৃষ্টি হওয়ায় ঝাঁকুনি দিলে ঢকঢক শব্দ হয়।
ইলিয়াস আমটা ফলওয়ালার কানের কাছে নিয়ে ঝাঁকুনি দিতে দিতে বলেন,- দেখো ভাই, ইয়ে হায় ঝুমঝুমি। হায় কি নেহি?
পাঠানের মুখে লজ্জার হাসি।
ইলিয়াস আবার বলেন,- আভি বাতাও, হাম বুদ্দু হায়, ইয়া তুম বুদ্দু হায়?
পাঠান কোনো উত্তর দিতে পারে না। লজ্জায় সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

গাড়ল – আবু ইসহাক

০৬:৫৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
আবু ইসহাক
কোনো এক বইয়ে ইলিয়াস পড়েছিলেন: পাঠানদের কিছু আছে ঘড়েল আর বেশির ভাগই গাড়ল। তিনি ধুরন্ধর পাঠানও দেখেছেন আবার বোকাটে পাঠানও দেখেছেন। যারা ঘড়েল তাদের প্রায় সবাই কিছুটা বেঁটে এবং শক্তপোক্ত। ঢ্যাঙা ও ঢিলেঢালা পাঠানদের অনেককেই তাঁর গাড়ল বলে মনে হয়েছে।
জানুয়ারি মাস থেকে করাচিতে আসা শুরু করে বিভিন্ন জাতের আঙুর। সাদাটে ছোট গোলাকৃতির ও সাদাটে ছোট লম্বাকৃতির আঙুর বেশ ভালো। এই দুই জাতের কোনোটায় দানা নেই। বাজারজাত করার পর আঙুরের চাষীরা বাড়তি এসব আঙুর শুকিয়ে কিশমিশ বানায়। কোয়েটার দুই শ’ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত চমন নামে একটা জায়গা আছে। সেখানকার দানাবিহীন ছোট লম্বাকৃতির আঙুর সর্বোৎকৃষ্ট।
আর আছে সাদাটে বড় আঙুর। এগুলোর ভেতর দানা আছে। এগুলো শুকিয়ে মনক্কা তৈরি হয়। এ ছাড়াও আছে লালচে, কালচে ও মিশকালো রঙের আঙুর।
১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক বিকেলবেলা। ফেরিওয়ালার হাঁক শোনা গেল, আঙুর-খোরমানি-কেলা-।
ইলিয়াস তাঁর জাহাঙ্গির রোড-এর বাসা থেকে বেরিয়ে দেখেন, চার-চাকাওয়ালা ঠেলাগাড়ি ঠেলে তাঁর বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছে এক ঢ্যাঙা পাঠান। তাঁকে দেখে ফেরিওয়ালা তার গাড়ি থামায়।
-মেওয়া লেঙ্গে বাঙালি বাবু?
-কোন ছে মেওয়া হায় আপকা পাছ?
-আঙুর হায়, খোরমানি হায়, কেলা হায়।
ইলিয়াস এগিয়ে যান ঠেলাগাড়ির সামনে। সাদাটে গোল আঙুর আছে। কিন্তু এ আঙুর তাঁর পছন্দ নয়।
-ইয়ে তো বহত আচ্ছা আঙুর বাঙালি বাবু। আপ ক্যায়সা আঙুর মাংতা?
-ম্যয় চমনকা লম্বেওয়ালা আঙুর মাংতা।
-আপ লম্বেওয়ালা মাংতা তো কেলা লে যাইয়ে।
এ তো আচ্ছা এক গাড়ল! ভাবেন ইলিয়াস। তিনি কোনো কথা না বলে বাসায় চলে যান।
ঐ বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়। করাচির জাহাঙ্গির রোডের কাছে এক ফুটপাতে চার-চাকাওয়ালা ঠেলাগাড়ির উপর নানা ধরনের ফল সাজিয়ে বিক্রি করছে এক ঢ্যাঙা পাঠান।
ঠেলাগাড়ির উপর পাকা আম দেখে ইলিয়াস একটু অবাক হন। এত আগে তো আম পাকার কথা নয়! আরো অন্তত মাসখানেক পরে পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করবে। নিশ্চয়ই ওগুলো জাগ দেওয়া আম। তিনি ঠেলাগাড়ির কাছে গিয়ে একটা আম তুলে কানের কাছে নিয়ে এদিক-ওদিক ঝাঁকুনি দেন।
-ইয়ে তো ঝুমঝুমি নেহি হায় যো বাজেগা! শ্লেষাত্মক কন্ঠে বলে ওঠে ফলওয়ালা। ম্যয় শুনা হায় বাঙাল মুলুক কা আদমি বহত আকলমন্দ হোতা হায়। লেকিন তুম তো বুদ্দু হায়।
পাঠানের টিটকারি গায়ে না মেখে তিনি আর একটা আম তুলে কানের কাছে নিয়ে ঝাঁকুনি দেন। এটার ভেতর আঁটি ঢকঢক করছে। অপরিণত আম জাগ দিয়ে পাকালে ভেতরের নরম আঁটি সঙ্কুচিত হয়ে আম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং আঁটির খোঁড়লে ফাঁক সৃষ্টি হওয়ায় ঝাঁকুনি দিলে ঢকঢক শব্দ হয়।
ইলিয়াস আমটা ফলওয়ালার কানের কাছে নিয়ে ঝাঁকুনি দিতে দিতে বলেন,- দেখো ভাই, ইয়ে হায় ঝুমঝুমি। হায় কি নেহি?
পাঠানের মুখে লজ্জার হাসি।
ইলিয়াস আবার বলেন,- আভি বাতাও, হাম বুদ্দু হায়, ইয়া তুম বুদ্দু হায়?
পাঠান কোনো উত্তর দিতে পারে না। লজ্জায় সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।