০৯:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৭) সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ? ‘আকাশ হয়ে যাই’ মিউজিক ভিডিতে প্রশংসিত পূর্ণিমা বৃষ্টি সাউথ চায়নান মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ইরান আক্রমনে লাভ ক্ষতি ইউক্রেন দাবি করেছে বাংলাদেশের কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিক ইইউ কলকাতার কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার তিন ‘চুরির গম’ আমদানি: বাংলাদেশের ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা চায় ইউক্রেন চীনের বৃহত্তম গভীর সমুদ্র গ্যাসক্ষেত্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন শুরু

ষোলশহর রেল স্টেশন ও চট্টগ্রামে শেষ রাত (পর্ব-১)

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 17

দিলরুবা আহমেদ

চট্রগ্রাম কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়লাম।

এরপর গেলাম ষোলশহর রেলস্টেশনে। সুদীর্ঘ ২২ বছর পর আম্মার সাথে আমার আবার আসা চট্রগ্রামে, তাও মাত্র ২/৩টা দিনের জন্য।

এক সময়ে প্রতিদিন আসা হতো এই রেলস্টেশনে। তারপর শাটল ট্রেনে করে ইউনিভার্সিটি। এখনো যায় আজকের সময়ের ছাত্র ছাত্রীরা, হয়তোবা তারা কেবল এখনো জানে না সময়ের পথে কি এক অসাধারণ গৌরবগাথাময় পদ চিহ্ন তারা তৈরী করছে। আজকের এই আমার মতন করে এক সময় তারাই এসে ফিরে ফিরে দেখবে এই পথ।এই পথের পানে চেয়ে থেকেই যেন অনেক কিছু ফিরে পাওয়া হয়ে যায়। অন্তত অনন্ত ফিরে পাওয়ার ভাব খানি যেন জাগে।তবে পুরাতন সময় আসলে হারিয়েই যায়। সময়টা রয়ে যায় কেবল মনে মনে, থাকে কেবল মনে পরা, মনে পরে, অনেক কিছু উঠে আসে স্মৃতি থেকে, পাতাল খুঁড়ে, তারপরও ফিরে পাওয়া যায় না সেই সময়টুকুকে। গুনগুনিয়ে এলো যেন একটি সুর। আমারও  গুনগুনাতে ইচ্ছে হলো সেটি — ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মন রে আমার।’

রবি ঠাকুর সবই জানতেন, সবার সব কথা, সব সময়ের সব পরিবেশেরই অবগাহন যেন তিনি করেছেন —

‘যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ এখন ভুলে গেলি–

কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন, মন রে আমার॥’

কোথাও ফিরে না কেউ, ফিরে ভিন্ন সময়ে, এটি তখন আর সেই আগের পথ নয়, কেবলি ধাবমান এক মায়া ।

তারপরও,

“মনে হয় যে পাব খুঁজি ফুলের ভাষা যদি বুঝি,

যে পথ গেছে সন্ধ্যাতারার পারে মন, মন রে আমার॥”

এটুকু লিখেই আমার মনে হলো, এই সেরেছে, পাঠক ভাববে বুঝি আমি এবার কোনো এক প্রেম কাহিনী শুরু করতে যাচ্ছি। কোনো এক যুবক আর কোন একজন মানবীর প্রেম। মন যে কেন প্রেম শুনলেই ওই এক জোড়া কপোত -কোপতিতেই তীর বেগে গিয়ে ঠেকে কে জানে !!

আসলেই মন নিয়েই যত ঝালাপালা। কান্ডকারখানা। মাতামাতি।

একদা আমার এক বান্ধবীর মন পেতে এক ছেলে দিন রাত ষোলশহর স্টেশনের এখানে-ওখানে -সেখানে দাড়িয়ে থাকতো। দেখতো চেয়ে চেয়ে ওদিক এদিক কোথায় সে।আমরাও স্টেশনে এসেই খবর নিতাম, কোথায় সেই পাগলা ঠাকুর। আমরা যদি দেখতাম পাগলা এদিকে, চলে যেতাম ওদিকে, সে এদিকে গেলে চলে যেতাম বান্ধবীকে নিয়ে অন্যদিকে। স্টেশনের এধার থেকে ওইধারে ঘুরে বাড়ানোই হতো প্রতি সকালে আমাদের দুরন্ত  দুর্দান্ত কাজ। আর আমাদের পিছু পিছু তারও। এবার এসে জানলাম ছেলেটি মারা গেছে কিছুকাল আগে। আমার সেই বান্ধবীকে জানালাম। আশ্চর্য বান্ধবীটি মনেই করতে পারলো না দশক দশক আগে কোন স্টেশনে কোন দর্শক হা করে তার জন্য দাড়িয়ে থাকতো! জীবন বড় ব্যস্ততাময়। বাস্তবতা ভুলিয়ে দেয় অনেকের প্রতীক্ষার ইতিহাস।

মুভি বা উপন্যাস হলে আজকে এখানে ভার্সিটির রেল স্টেশনে অবশ্যই পুরাতন দিন থেকে তুলে আনা হতো কোনো চরিত্রকে।প্রেমিক ধরণের কাউকে। অথবা যে ভালোবাসতো মনে মনে কিন্তু বলে নি কোনোদিন।এতো বছর পরে চুল পাকিয়ে মনের ভার কমিয়ে যেতে এসে আরো ভারাক্রান্ত চোখে চেয়ে থেকেছে এই রকম কিছু। 🙂 । না, এতো নাটকীয়তার জায়গা হয় না সাধারণ মানুষের জীবনে। এসব অধিকাংশ সময়েই কেবল লেখক লেখিকার কলমের সঙ্গী।

তবে আমার হঠাৎ আপন মনে, মনে এলো কেমন হতো যদি একজন কেও, ভার্সিটি জীবনে, এই রেল স্টেশন শুধু একটি মাত্র লাল গোলাপ হাতে দাড়ায়ে থাকতো, আমাকে দিতে, আমার কোন এক জন্মদিনের ক্ষনে, সকালে বা বিকালে!! সাথে থাকতো কিছু টিপ্।কেমন হতো! হায়, দিলো না কেও কখনো!! ধুর ধুর।নিজেই নিজেকে বললাম, ওয়েক আপ লেডি, এক পড়ন্ত বিকেলে বহুদিনের পুরাতন স্টেশনে দাড়ায়ে দাড়ায়ে উলকো-ঝুলকো চুলের চাল-চুলোহীন একজন ভাবুক কবি হয়ে যেয়ো না যেন। বললাম বটে নিজেকে, তবে চমৎকার দুটো লাইন হঠাৎ যেন মনে উঠে এলো,

“তোমার সাথে আমার একটা প্রেম ছিল ,

ভালোবাসার গল্প  ছিল|”

আমি সযত্নে এড়িয়ে যাই, যেতে চাই, আমার নূন্যতম কবি প্রতিভাকে, যা থাকুক বা না থাকুক, আমি এড়িয়ে যেতে চাই কবিত্বকে।কবিত্বের একধারে যেমন রয়েছে অসাধারণত্বকে ধারণ করতে পারার অনেকের বিশাল মেধা, আরেক পাশে অনেকেই  থাকে অতি অল্পে এক লাফে দুইতিন লাইন নিয়েই একটা প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে যেতে পারার আস্ফালনকারী। আমি বিনয়ের সাথে তাই এড়িয়ে যাই কবি হবার সামান্যতম সম্ভাবনাকেও।

তবে আমার ভার্সিটির উদ্দেশে যা এই মুহূর্তে চোখের সীমানার বাহিরে তার উদ্দেশেই  অতি গোপনে ছুড়ে দিলাম উক্ত পংক্তিদ্বয়। আমার শাটল ট্রেনের স্টেশনকেও ফিসফিসিয়ে  বললাম —

“তোমার সাথে আমার একটা প্রেম ছিল ,

ভালোবাসার গল্প  ছিল |”

ওরাই আমার প্রেম।যন্ত্রের (রেলগাড়ি) সাথে প্রেম, ভার্সিটির সাথে প্রেম, সেই সময়ের সাথে প্রেম। আহা, হাজার রকমের প্রেমের পয়দা হয়েছে এই ধরাধামে, ময়দা হয়ে কত রকমের পিঠা হয়ে যে সে তেলে ভেসে উঠে ফুলে ফুলে শীতের সকালে অথবা হঠাৎ পাওয়া এক পৌষের বা মাঘের কুসুমিত আলোকে ছেয়ে যাওয়া উড়ন্ত লালচে বিকেলে।

স্টেশনে একটিও ট্রেন নেই। পাশের ফুটপাতের এক দোকানি বললো, তিনটার দিকে আসবে একটা। বন্ধের দিনে ওই সময়ে আসে।বুঝলাম তাই মনে হয় এতো চুপচাপ চারদিক। নাহলে তো হুরুস্থুল থাকবার কথা চারদিকে। দোকানিটি আগ বাড়িয়ে আরো বললো, ট্রেন খালি থাকবে, বসে বসে এই সময়ে ভার্সিটিতে চলে যেতে পারবেন। মনে পড়লো আমাদের সেই সময়ের কি দুর্দান্ত সাহসী মেয়েগুলো পা-দানিতে বসেই চলে যেত ভার্সিটিতে।ট্রেন ছুটতো হুইসেল বাজিয়ে, ধানক্ষেত কাঁপিয়ে, কাঁশবন ছুঁয়ে, ছোট ছোট ৮/৯ হাতের ব্রিজ মাতিয়ে। ব্রিজের নিচে থাকা সামান্য পানিপ্রবাহ যা দেখতে নালার মতন অথচ মনে হতো তখনের চোখে জল সরোবর সেটি, আর একটু হলেই তাতে যেন বইবে জলপ্রপাত, সেই নালাতে যেন খুজতাম নীলা। সেই সব ব্রিজের নিচে বা পাশেই কোনো ঝোপের ধারে পরে থাকা কোনো কলসি বা বাক্স যেন আমাদের আহব্বান জানাতো তার ভিতর খুঁজতে কোনো সোনার ভান্ডার। জল্পনা কল্পনাও কম হতো না একাকী কোনো এক ছাগল দেখতে পেলে ওই খালের পাশে কাশবনের ধারে। সব কিছু ঘিরেই ছিল সে কি এক অপার গল্পের ইতিহাসের সূচনা!! আজ জানি শুধু ওই বয়সেই জীবনের ওই সময়েই এতটা চোখ বড় বড়ো করে সব দিকে চাওয়া যায়।

আহা, কি অসাধারণ সময় গেছে আমাদের জীবনে। চট্ট্রগ্রাম ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের জীবনে শাটল ট্রেনে আসা যাওয়া করার অভিজ্ঞতা সকল যুগেই এক অপার আনন্দময় অধ্যায়।

 

ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য

ষোলশহর রেল স্টেশন ও চট্টগ্রামে শেষ রাত (পর্ব-১)

০৪:০০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দিলরুবা আহমেদ

চট্রগ্রাম কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়লাম।

এরপর গেলাম ষোলশহর রেলস্টেশনে। সুদীর্ঘ ২২ বছর পর আম্মার সাথে আমার আবার আসা চট্রগ্রামে, তাও মাত্র ২/৩টা দিনের জন্য।

এক সময়ে প্রতিদিন আসা হতো এই রেলস্টেশনে। তারপর শাটল ট্রেনে করে ইউনিভার্সিটি। এখনো যায় আজকের সময়ের ছাত্র ছাত্রীরা, হয়তোবা তারা কেবল এখনো জানে না সময়ের পথে কি এক অসাধারণ গৌরবগাথাময় পদ চিহ্ন তারা তৈরী করছে। আজকের এই আমার মতন করে এক সময় তারাই এসে ফিরে ফিরে দেখবে এই পথ।এই পথের পানে চেয়ে থেকেই যেন অনেক কিছু ফিরে পাওয়া হয়ে যায়। অন্তত অনন্ত ফিরে পাওয়ার ভাব খানি যেন জাগে।তবে পুরাতন সময় আসলে হারিয়েই যায়। সময়টা রয়ে যায় কেবল মনে মনে, থাকে কেবল মনে পরা, মনে পরে, অনেক কিছু উঠে আসে স্মৃতি থেকে, পাতাল খুঁড়ে, তারপরও ফিরে পাওয়া যায় না সেই সময়টুকুকে। গুনগুনিয়ে এলো যেন একটি সুর। আমারও  গুনগুনাতে ইচ্ছে হলো সেটি — ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মন রে আমার।’

রবি ঠাকুর সবই জানতেন, সবার সব কথা, সব সময়ের সব পরিবেশেরই অবগাহন যেন তিনি করেছেন —

‘যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ এখন ভুলে গেলি–

কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন, মন রে আমার॥’

কোথাও ফিরে না কেউ, ফিরে ভিন্ন সময়ে, এটি তখন আর সেই আগের পথ নয়, কেবলি ধাবমান এক মায়া ।

তারপরও,

“মনে হয় যে পাব খুঁজি ফুলের ভাষা যদি বুঝি,

যে পথ গেছে সন্ধ্যাতারার পারে মন, মন রে আমার॥”

এটুকু লিখেই আমার মনে হলো, এই সেরেছে, পাঠক ভাববে বুঝি আমি এবার কোনো এক প্রেম কাহিনী শুরু করতে যাচ্ছি। কোনো এক যুবক আর কোন একজন মানবীর প্রেম। মন যে কেন প্রেম শুনলেই ওই এক জোড়া কপোত -কোপতিতেই তীর বেগে গিয়ে ঠেকে কে জানে !!

আসলেই মন নিয়েই যত ঝালাপালা। কান্ডকারখানা। মাতামাতি।

একদা আমার এক বান্ধবীর মন পেতে এক ছেলে দিন রাত ষোলশহর স্টেশনের এখানে-ওখানে -সেখানে দাড়িয়ে থাকতো। দেখতো চেয়ে চেয়ে ওদিক এদিক কোথায় সে।আমরাও স্টেশনে এসেই খবর নিতাম, কোথায় সেই পাগলা ঠাকুর। আমরা যদি দেখতাম পাগলা এদিকে, চলে যেতাম ওদিকে, সে এদিকে গেলে চলে যেতাম বান্ধবীকে নিয়ে অন্যদিকে। স্টেশনের এধার থেকে ওইধারে ঘুরে বাড়ানোই হতো প্রতি সকালে আমাদের দুরন্ত  দুর্দান্ত কাজ। আর আমাদের পিছু পিছু তারও। এবার এসে জানলাম ছেলেটি মারা গেছে কিছুকাল আগে। আমার সেই বান্ধবীকে জানালাম। আশ্চর্য বান্ধবীটি মনেই করতে পারলো না দশক দশক আগে কোন স্টেশনে কোন দর্শক হা করে তার জন্য দাড়িয়ে থাকতো! জীবন বড় ব্যস্ততাময়। বাস্তবতা ভুলিয়ে দেয় অনেকের প্রতীক্ষার ইতিহাস।

মুভি বা উপন্যাস হলে আজকে এখানে ভার্সিটির রেল স্টেশনে অবশ্যই পুরাতন দিন থেকে তুলে আনা হতো কোনো চরিত্রকে।প্রেমিক ধরণের কাউকে। অথবা যে ভালোবাসতো মনে মনে কিন্তু বলে নি কোনোদিন।এতো বছর পরে চুল পাকিয়ে মনের ভার কমিয়ে যেতে এসে আরো ভারাক্রান্ত চোখে চেয়ে থেকেছে এই রকম কিছু। 🙂 । না, এতো নাটকীয়তার জায়গা হয় না সাধারণ মানুষের জীবনে। এসব অধিকাংশ সময়েই কেবল লেখক লেখিকার কলমের সঙ্গী।

তবে আমার হঠাৎ আপন মনে, মনে এলো কেমন হতো যদি একজন কেও, ভার্সিটি জীবনে, এই রেল স্টেশন শুধু একটি মাত্র লাল গোলাপ হাতে দাড়ায়ে থাকতো, আমাকে দিতে, আমার কোন এক জন্মদিনের ক্ষনে, সকালে বা বিকালে!! সাথে থাকতো কিছু টিপ্।কেমন হতো! হায়, দিলো না কেও কখনো!! ধুর ধুর।নিজেই নিজেকে বললাম, ওয়েক আপ লেডি, এক পড়ন্ত বিকেলে বহুদিনের পুরাতন স্টেশনে দাড়ায়ে দাড়ায়ে উলকো-ঝুলকো চুলের চাল-চুলোহীন একজন ভাবুক কবি হয়ে যেয়ো না যেন। বললাম বটে নিজেকে, তবে চমৎকার দুটো লাইন হঠাৎ যেন মনে উঠে এলো,

“তোমার সাথে আমার একটা প্রেম ছিল ,

ভালোবাসার গল্প  ছিল|”

আমি সযত্নে এড়িয়ে যাই, যেতে চাই, আমার নূন্যতম কবি প্রতিভাকে, যা থাকুক বা না থাকুক, আমি এড়িয়ে যেতে চাই কবিত্বকে।কবিত্বের একধারে যেমন রয়েছে অসাধারণত্বকে ধারণ করতে পারার অনেকের বিশাল মেধা, আরেক পাশে অনেকেই  থাকে অতি অল্পে এক লাফে দুইতিন লাইন নিয়েই একটা প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে যেতে পারার আস্ফালনকারী। আমি বিনয়ের সাথে তাই এড়িয়ে যাই কবি হবার সামান্যতম সম্ভাবনাকেও।

তবে আমার ভার্সিটির উদ্দেশে যা এই মুহূর্তে চোখের সীমানার বাহিরে তার উদ্দেশেই  অতি গোপনে ছুড়ে দিলাম উক্ত পংক্তিদ্বয়। আমার শাটল ট্রেনের স্টেশনকেও ফিসফিসিয়ে  বললাম —

“তোমার সাথে আমার একটা প্রেম ছিল ,

ভালোবাসার গল্প  ছিল |”

ওরাই আমার প্রেম।যন্ত্রের (রেলগাড়ি) সাথে প্রেম, ভার্সিটির সাথে প্রেম, সেই সময়ের সাথে প্রেম। আহা, হাজার রকমের প্রেমের পয়দা হয়েছে এই ধরাধামে, ময়দা হয়ে কত রকমের পিঠা হয়ে যে সে তেলে ভেসে উঠে ফুলে ফুলে শীতের সকালে অথবা হঠাৎ পাওয়া এক পৌষের বা মাঘের কুসুমিত আলোকে ছেয়ে যাওয়া উড়ন্ত লালচে বিকেলে।

স্টেশনে একটিও ট্রেন নেই। পাশের ফুটপাতের এক দোকানি বললো, তিনটার দিকে আসবে একটা। বন্ধের দিনে ওই সময়ে আসে।বুঝলাম তাই মনে হয় এতো চুপচাপ চারদিক। নাহলে তো হুরুস্থুল থাকবার কথা চারদিকে। দোকানিটি আগ বাড়িয়ে আরো বললো, ট্রেন খালি থাকবে, বসে বসে এই সময়ে ভার্সিটিতে চলে যেতে পারবেন। মনে পড়লো আমাদের সেই সময়ের কি দুর্দান্ত সাহসী মেয়েগুলো পা-দানিতে বসেই চলে যেত ভার্সিটিতে।ট্রেন ছুটতো হুইসেল বাজিয়ে, ধানক্ষেত কাঁপিয়ে, কাঁশবন ছুঁয়ে, ছোট ছোট ৮/৯ হাতের ব্রিজ মাতিয়ে। ব্রিজের নিচে থাকা সামান্য পানিপ্রবাহ যা দেখতে নালার মতন অথচ মনে হতো তখনের চোখে জল সরোবর সেটি, আর একটু হলেই তাতে যেন বইবে জলপ্রপাত, সেই নালাতে যেন খুজতাম নীলা। সেই সব ব্রিজের নিচে বা পাশেই কোনো ঝোপের ধারে পরে থাকা কোনো কলসি বা বাক্স যেন আমাদের আহব্বান জানাতো তার ভিতর খুঁজতে কোনো সোনার ভান্ডার। জল্পনা কল্পনাও কম হতো না একাকী কোনো এক ছাগল দেখতে পেলে ওই খালের পাশে কাশবনের ধারে। সব কিছু ঘিরেই ছিল সে কি এক অপার গল্পের ইতিহাসের সূচনা!! আজ জানি শুধু ওই বয়সেই জীবনের ওই সময়েই এতটা চোখ বড় বড়ো করে সব দিকে চাওয়া যায়।

আহা, কি অসাধারণ সময় গেছে আমাদের জীবনে। চট্ট্রগ্রাম ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের জীবনে শাটল ট্রেনে আসা যাওয়া করার অভিজ্ঞতা সকল যুগেই এক অপার আনন্দময় অধ্যায়।