সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
১. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে
২. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে
৩. অর্থনীতির দুর্বল অবস্থার কারণে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে
৪. “দ্রব্যমূল্য এভাবে বাড়তে থাকলে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা যাবে না।”
সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) চেয়ারম্যান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেছেন, “উৎপাদন আর কর্মসংস্থান ছাড়া শুধু দোয়া-দরুদ পড়ে অর্থনীতিকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়।” তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ কমছে, যা অর্থনীতির জন্য সংকট সৃষ্টি করছে। এই অবস্থায় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব থেকে বিকল্প উৎস খুঁজে বের করাই হবে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও রাজস্বের প্রয়োজনীয়তা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও এর প্রভাব
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
রেমিট্যান্স ও রিজার্ভের হ্রাস
বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থের (রেমিট্যান্স) পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ড. মজিদ অভ্যন্তরীণ উৎসের সন্ধান করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিকল্প উৎস খোঁজার আহ্বান
ড. মজিদ মনে করেন, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমেই অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্য এভাবে বাড়তে থাকলে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা যাবে না।”
বাজেট ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
নির্বাচনকালের বাজেট
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটটি নির্বাচনী বছরের বাজেট হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। সাধারণত নির্বাচনী বছরে দুইটি বাজেট থাকে— পুরাতন সরকার প্রথম ছয় মাস বাস্তবায়ন করে, এরপর নতুন সরকার বাকি অংশের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
উচ্চ ব্যয়ের বাজেট ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
- গতবারের বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ অত্যধিক ছিল, যেখানে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে।
- ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেই উচ্চ ব্যয়ের বাজেটের মধ্যেই সরকার চলতে হচ্ছে, তবে অর্থনীতির দুর্বল অবস্থার কারণে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের সম্ভাবনা
ড. মজিদ মনে করেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট তুলনামূলকভাবে ছোট হতে পারে এবং সেখানে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কিংবা আত্মসাতের সুযোগ কম থাকবে।
যাকাতের সম্ভাবনা ও সামাজিক সুরক্ষা
যাকাত ব্যবস্থার সঠিক প্রয়োগ
ড. মজিদ বলেন, যদি সঠিকভাবে যাকাত ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো যায়, তবে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য আলাদা বাজেটের প্রয়োজন কমে আসতে পারে।
- যাকাতের সঠিক ব্যবহার সামাজিক নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করবে এবং তা সরাসরি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করবে।
- এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের জন্য আলাদা বাজেট নিয়ে সমস্যাও অনেকটাই হ্রাস পেতে পারে।
সেমিনারের আয়োজক ও অন্যান্য উপস্থাপন
সেমিনারের আয়োজন ও শিরোনাম
- আয়োজক: ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টস অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন
- স্থান ও সময়: রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি), জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হল
- শিরোনাম: ‘জাতীয় বাজেট জনগণের প্রত্যাশা’
অন্যান্য বক্তারা
- ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টস অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম
- ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক
উপসংহার
ড. মজিদ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে দোয়া-দরুদের ওপর নির্ভর না করে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তিনি যাকাত ব্যবস্থার কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করারও পরামর্শ দিয়েছেন। তার এই বক্তব্য দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।