০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৬৩)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
  • 18

শশাঙ্ক মণ্ডল

রূপভান পালা কাহিনীর সংক্ষিপ্ত রূপ এখানে দেওয়া হল। আকবর বাদশার কোন সন্তান সেই; রাজ্যে নানা রকম অশান্তি লেগেই আছে, কারোর মনে কোন সুখ নেই; এই অশান্তির জন্য প্রজারা আঁটকুড়ে রাজাকে দায়ী করল। বাদশা মনের দুঃখে রাজত্ব উজিরের হাতে ছেড়ে দিয়ে বনে গেলেন আত্মহত্যার জন্য; বনের বাঘ পর্যন্ত রাজা আঁটকুড়ে হবার জন্য তাকে খেলো না। এক ধ্যানমগ্ন মুনির গায়ে রাজার পা লাগল। মুনি অভিশাপ দেন তার ছেলে মুনির শাপে ভস্ম হবে। রাজা বলেন তার কোন সন্তান নেই। মুনি বাদশাকে বলেন রাজার সন্তান হবে কিন্তু জন্মের ১২ দিন পরে ভগ্ন হবে।

অনেক অনুনয় বিনয়ের পর মুনি উপায় বলে দিলেন- জন্মের ১২ দিনের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে বার বৎসরের কোন মেয়ের সাথে এবং বারো বছরের জন্য বনে পাঠাতে হবে তবে জীবন রক্ষা পাবে। যথা সময়ে বাদশার ছেলে হল, এই ছেলের নাম রহিম। কেউই মেয়ে দিতে চায় না, অনেক অনুনয় বিনয়ের পরও কেউ রাজী হল না। রূপভান উজিরের মেয়ে কিছুতেই বিয়েতে রাজী নয় কিন্তু পিতাকে হত্যা করা হচ্ছে শুনে শেষ পর্যন্ত সে রাজী হল। পিতা-মাতা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বনবাসের জন্য প্রস্তুত হল। এসময়ে করুণ সুরে রূপভান গান গেয়ে ওঠে ‘জন্মের মত বিদায় হইলাম যে গো মা ধন।’

স্বামীকে নিয়ে রূপভান পথে বের হল। গভীর রাত, সামনে নদী। বৈষ্ণব পদাবলীর অভিসারের সঙ্গে অনেক মিল লক্ষণীয়; মাঝরাতে নদীতে মাঝিরা গান গায়- ‘আমার হাড় কালা করলাম রে কালারই তরে। অন্তর কালা করলাম রে দুঃসহ পরবাসে।’ গান শুনে রূপভান কেঁদে ওঠে; মাঝি ভাই এ গান তোমরা আমার সামনে গেয়ো না। মাঝিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে এ গান শুনতে সে চায় না কেন? নদী পার হয়ে রূপভান গহন অরণ্যে প্রবেশ করে জংলি রাজার রাজত্বে আশ্রয় পায়; রূপভানের স্বামী রহিমকে বাঘে নিয়ে যায়। জংলি রাজা তীর বিদ্ধ করে রহিমকে উদ্ধার করে। তারপর স্বামী রহিমকে এখানকার বাদশার পাঠশালায় লেখা পড়া শিখতে পাঠায়। পড়াশুনায় রহিমের খুব অগ্রগতি ঘটে; বাদশার মেয়ে তাজোলকে সে পড়াশুনায় ছাড়িয়ে গেলে বাদশাহের কোপে রহিম পড়ে যায়। বাদশা বলে দিলেন, রহিম যদি ভাল পোষাকে পাঠশালায় না আসে তা হলে পড়াশুনা বাদ।

বাদশাকন্যা তাজোল রহিমকে সব কিছু কিনে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে শর্ত দেয় তাকে ভালোবাসতে হবে। রহিম বলে, দিদি রাগ করবে। রহিম মুখ কালো করে বাড়ি ফেরে, সব ঘটনা রূপভান শুনে ফেলে। পরদিন জংলি রাজার কাছ থেকে পোষাক ও ঐরাবত ঘোড়া নিয়ে পাঠশালায় যায়। বাদশা আবার হুকুম জারি করেন – হাতি চড়ে আসতে হবে। তাজোল তাকে বলে, তুমি আমার সাথে খেলা করো, আমি তোমাকে হাতি কিনে দেব। তাজোলের প্রস্তাবে রহিম রাজী হল। রহিম তাজোলের প্রেমে পড়ে। রহিমের সঙ্গে রূপভানের প্রতিনিয়ত ঝগড়া শুরু হয়। তার রান্না রহিমের ভালো লাগে না- পাঠশালা থেকে ফিরতে দেরি করে। রূপভান একদিন তাজোলের বাড়ি গিয়ে বুঝল রহিম তাজোলের প্রেমে পড়েছে। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর জীবন নিয়ে ছিনি মিনি খেলার বিষয়টা পালাকার সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলেন। রূপভান কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর পদতলে পড়ে। রহিম তাকে পদাঘাত করে চরম ভাবে অপমান করে।

 

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৬৩)

১২:০০:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

শশাঙ্ক মণ্ডল

রূপভান পালা কাহিনীর সংক্ষিপ্ত রূপ এখানে দেওয়া হল। আকবর বাদশার কোন সন্তান সেই; রাজ্যে নানা রকম অশান্তি লেগেই আছে, কারোর মনে কোন সুখ নেই; এই অশান্তির জন্য প্রজারা আঁটকুড়ে রাজাকে দায়ী করল। বাদশা মনের দুঃখে রাজত্ব উজিরের হাতে ছেড়ে দিয়ে বনে গেলেন আত্মহত্যার জন্য; বনের বাঘ পর্যন্ত রাজা আঁটকুড়ে হবার জন্য তাকে খেলো না। এক ধ্যানমগ্ন মুনির গায়ে রাজার পা লাগল। মুনি অভিশাপ দেন তার ছেলে মুনির শাপে ভস্ম হবে। রাজা বলেন তার কোন সন্তান নেই। মুনি বাদশাকে বলেন রাজার সন্তান হবে কিন্তু জন্মের ১২ দিন পরে ভগ্ন হবে।

অনেক অনুনয় বিনয়ের পর মুনি উপায় বলে দিলেন- জন্মের ১২ দিনের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে বার বৎসরের কোন মেয়ের সাথে এবং বারো বছরের জন্য বনে পাঠাতে হবে তবে জীবন রক্ষা পাবে। যথা সময়ে বাদশার ছেলে হল, এই ছেলের নাম রহিম। কেউই মেয়ে দিতে চায় না, অনেক অনুনয় বিনয়ের পরও কেউ রাজী হল না। রূপভান উজিরের মেয়ে কিছুতেই বিয়েতে রাজী নয় কিন্তু পিতাকে হত্যা করা হচ্ছে শুনে শেষ পর্যন্ত সে রাজী হল। পিতা-মাতা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বনবাসের জন্য প্রস্তুত হল। এসময়ে করুণ সুরে রূপভান গান গেয়ে ওঠে ‘জন্মের মত বিদায় হইলাম যে গো মা ধন।’

স্বামীকে নিয়ে রূপভান পথে বের হল। গভীর রাত, সামনে নদী। বৈষ্ণব পদাবলীর অভিসারের সঙ্গে অনেক মিল লক্ষণীয়; মাঝরাতে নদীতে মাঝিরা গান গায়- ‘আমার হাড় কালা করলাম রে কালারই তরে। অন্তর কালা করলাম রে দুঃসহ পরবাসে।’ গান শুনে রূপভান কেঁদে ওঠে; মাঝি ভাই এ গান তোমরা আমার সামনে গেয়ো না। মাঝিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে এ গান শুনতে সে চায় না কেন? নদী পার হয়ে রূপভান গহন অরণ্যে প্রবেশ করে জংলি রাজার রাজত্বে আশ্রয় পায়; রূপভানের স্বামী রহিমকে বাঘে নিয়ে যায়। জংলি রাজা তীর বিদ্ধ করে রহিমকে উদ্ধার করে। তারপর স্বামী রহিমকে এখানকার বাদশার পাঠশালায় লেখা পড়া শিখতে পাঠায়। পড়াশুনায় রহিমের খুব অগ্রগতি ঘটে; বাদশার মেয়ে তাজোলকে সে পড়াশুনায় ছাড়িয়ে গেলে বাদশাহের কোপে রহিম পড়ে যায়। বাদশা বলে দিলেন, রহিম যদি ভাল পোষাকে পাঠশালায় না আসে তা হলে পড়াশুনা বাদ।

বাদশাকন্যা তাজোল রহিমকে সব কিছু কিনে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে শর্ত দেয় তাকে ভালোবাসতে হবে। রহিম বলে, দিদি রাগ করবে। রহিম মুখ কালো করে বাড়ি ফেরে, সব ঘটনা রূপভান শুনে ফেলে। পরদিন জংলি রাজার কাছ থেকে পোষাক ও ঐরাবত ঘোড়া নিয়ে পাঠশালায় যায়। বাদশা আবার হুকুম জারি করেন – হাতি চড়ে আসতে হবে। তাজোল তাকে বলে, তুমি আমার সাথে খেলা করো, আমি তোমাকে হাতি কিনে দেব। তাজোলের প্রস্তাবে রহিম রাজী হল। রহিম তাজোলের প্রেমে পড়ে। রহিমের সঙ্গে রূপভানের প্রতিনিয়ত ঝগড়া শুরু হয়। তার রান্না রহিমের ভালো লাগে না- পাঠশালা থেকে ফিরতে দেরি করে। রূপভান একদিন তাজোলের বাড়ি গিয়ে বুঝল রহিম তাজোলের প্রেমে পড়েছে। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর জীবন নিয়ে ছিনি মিনি খেলার বিষয়টা পালাকার সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলেন। রূপভান কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর পদতলে পড়ে। রহিম তাকে পদাঘাত করে চরম ভাবে অপমান করে।