শ্রী নিখিলনাথ রায়
দ্বারা অনেকবার মণিবেগমপ্রভৃতি হেষ্টিংস সাহেবকে উৎকোচ প্রদান করিয়াছেন। একবার হেষ্টিংস মুর্শিদাবাদে গমন করেন। তিনি কাশীম-বাজারে অবস্থান করিয়া, মধ্যে মধ্যে নবাব-প্রাসাদে গমন করিতেন। কিছুদিন পরে তিনি কলিকাতায় প্রতিগমন করিলে, মণিবেগম রাজা গুরুদাসকে বলেন, গবর্ণরকে কিছু নজর দেওয়া উচিত এবং মহারাজ নন্দকুমারকে লিখিয়া পাঠান হউক যে, মণিবেগম গবর্ণরকে ১,৫০,০০০ টাকা দিতে চাহেন। তিনি নগদ টাকা, কি হুণ্ডী দিবেন, তাহাই জানিতে ইচ্ছা করেন।
নন্দকুমার হেষ্টিংসকে সে কথা জিজ্ঞাসা করিলে, হেষ্টিংস বলেন যে, কান্তবাবুর ভ্রাতা নৃসিংহ কাশীমবাজারে আমার ব্যবসায়ের পরিচালনা করিয়া থাকেন; তাঁহার নিকট উক্ত টাকা দিলেই হইবে। তদনুসারে নৃসিংহকে ১,৫০,০০০ টাকা দেওয়া হয়। কান্ত বাবু এই সময়ে প্রায়ই কলিকাতায় বাস করিতেন। নৃসিংহ বাবু কাশীমবাজারে থাকিতেন। তিনি কান্ত বাবুর পরামর্শানুসারে হেষ্টিংসের এতদঞ্চলের যাৰতীয় ‘কার্য্য নির্ব্বাহ করিতেন। কি উৎকোচ-গ্রহণ, কি ব্যবসায়সম্বন্ধে বন্দোবস্ত, সকল কার্য্যই নৃসিংহ বাবুর দ্বারা সংসাধিত হইত।
বলা বাহুল্য, এ সমস্তই কান্ত বাবুর পরামর্শানুসারেই হইত। এই সকল কার্য্য একরূপে কান্তবাবুর নিজেরই কাৰ্য্য। তিনি কাশীমবাজারে সে সময় থাকিতেন না বলিয়া, স্বীয় ভ্রাতা নৃসিংহকে সমস্ত কার্য্য নির্ব্বাহের পরামর্শ দিতেন। দুই ভ্রাতায় হেষ্টিংস সাহেবের সকল কার্য্য সম্পন্ন করিতেন। সুতরাং কান্ত বাবুর ন্যায় নৃসিংহ বাবুও হেষ্টিংস-সংক্রান্ত ব্যাপারের একজন অভিনেতা ছিলেন। মহারাজ নন্দকুমার নৃসিংহের দ্বারা অনেক বার হেষ্টিংস সাহেবের উৎকোচ গ্রহণের কথা. তাঁহার অভিযোগপত্রে নির্দেশ করিয়াছেন।
বাহুল্যভয়ে সমস্তের উল্লেখ করা গেল না। আমরা বারংবার বলিয়াছি যে, মণিবেগমের নিকট হইতে উৎকোচ লওয়া সম্বন্ধে কান্ত বাবু বিশেষরূপে জড়িত ছিলেন। মহারাজ নন্দকুমার ইহা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করিয়াছেন। কলিকাতা কাউন্সিলের নিকট তিনি সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত হইয়া, মণিবেগমের এক পত্র উপস্থাপিত করেন। তাহাতে মণি বেগমের পদোন্নতির জন্য হেষ্টিংস সাহেবকে এক লক্ষ টাকা মুর্শিদাবাদে ও আর এক লক্ষ টাকা কলিকাতায় দেওয়ার কথা উল্লিখিত থাকে।