শ্রী নিখিলনাথ রায়
চিরদিন হইতে মহারাণী মহোদয়ার সুনাম দিদিগন্তে বিঘোষিত হইতেছে; কিন্তু সত্যের অনুরোধে বলিতে হইতেছে যে, শেষকালে তাঁহার সুনামের চতুদ্দিকে কটু একটু করিয়া যেন কালিমা পড়িয়াছিল। স্বজনবর্জন, প্রজাপীড়ন, দান- সঙ্কোচের কলঙ্কচ্ছায়া যেন ধীরে ধীরে তাঁহার যশোভাতির নিকট ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল। আমাদের বিশ্বাস, মহারাণী মহোদয়ার অজ্ঞাতসারে ইহাদের সৃষ্টি হইয়া থাকিবে। নতুবা যিনি মূর্তিমতী দয়া, তাঁহার যশঃকিরণের নিকট কখনও কলঙ্কচ্ছায়া কি অগ্রসর হইতে পারে?
মুক্তহস্ততার জন্য তিনি মহারাণী, ও এম, আই ও সি, আই, উপাধি লাভ করেন, এবং দুর্ভিক্ষের সময় অর্থসাহায্য করায় তাঁহার উত্তরাধিকারী মহারাজ উপাধিতে ভূষিত হইবেন বলিয়া গবর্ণমেন্ট অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। ১৩০৪ সালের ভাদ্রমাসে স্বর্ণময়ী স্বর্গধামে গমন করেন। রাজা কৃষ্ণনাথের ভাগিনেয় শ্রীযুক্ত মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী মহারাণী মহোদয়ার পর কাশীমবাজারের সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়াছেন।
মণীন্দ্রচন্দ্র বঙ্গদেশের একটি উজ্জ্বল রত্ন। এমন স্বজনপ্রতিপালক, উদারহৃদয়, মহত্ত্বের জ্বলন্ত আদর্শ অল্পই দৃষ্ট হইয়া থাকে। তাঁহার গার্হস্থ্যজীবন প্রত্যেক বাঙ্গালীর শিক্ষণীয়। দেশহিতব্রতে ও বঙ্গসাহিত্যের উন্নতিকল্পে মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র সর্ব্বদাই অগ্রসর। বাঙ্গলার জমীদারগণের প্রতিনিধিস্বরূপ তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য পদেও আসীন হইয়াছিলেন।
এক্ষণে ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্যপদও লাভ করিয়াছেন; গবর্নমেন্ট-কর্তৃক তিনি মহারাজ ও কে, সি আই, ই উপাধিতে ভূষিত হইয়াছেন। তাঁহার উত্ত-রাধিকারীও মহারাজ উপাধি পাইবেন। ভগবানের আশীর্ব্বাদে তিনি দীর্ঘজীবনলাভপূর্ব্বক কাশীমবাজার রাজাসন অলঙ্কৃত করুন।
Leave a Reply