আর্কাদি গাইদার
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
ঘোড়ার রেকাবের ওপর তখনও একটা পা রেখে লোকটি বললেন, ‘একজন লোকেরে? তা, কে সে?’
‘ও কইচে, ও আমাদেরই নোক। অনুমান করি, সঙ্গে ওর কাগজপত্তর আচে।’
লাফিয়ে জিনের ওপর চড়ে বসতে-বসতে কম্যান্ডার বললেন, ‘আমার এখন সময় নেই। তুমি তো পড়তি পার, তা তুমিই কাগজপত্তর পরীক্ষে কর না কেন, চুবুক? ও যদি বন্ধু হয় তো যেখানে যেতি চায় যেতি দাও না কেন।’
আবার একা পড়ে যাওয়ার ভয় চেপে ধরল আমায়। আমি বলে উঠলুম, ‘না-না, আমি আর কোথাও যাব না। গত দু-দিন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমি। আর-না। এখন আপনাদের সঙ্গে থাকতে এসেছি।’
‘আমাদের সঙ্গে?’ কালো পাপাখা-মাথায় লোকটি প্রশ্ন করলেন। ‘কিন্তু আমাদের তো তোমারে দরকার না-ও থাকতি পারে!’
‘হ্যাঁ, দরকার আছে!’ জিদ ধরে বললুম আমি। ‘একা-একা নিজেকে নিয়ে কী করব তাহলে?’
এবার আমার সঙ্গীও সায় দিলেন, ‘ঠিক কথা। ও যদি আমাদের নোক হয়, তবে একা-একা করবে কাঁ ও? আজকাল এ-সব এলেকায় একা-একা ঘুরে বেড়ালি কত বিপদ-আপদ ঘটতি পারে। শেবালভ, একটু বৃদ্ধি করে চলা দরকার। যদি ও মিথ্যে কয়ে থাকে তো ভেন্ন কথা, তবে যদি ও আমাদের নোক হয় তাইলে ওরে অযথা ঝুলিয়ে রাখচ কেন? ঘোড়া থেকে নাবো দেখি, অনেক সময় আচে এখনও।’
‘আঃ, চুবুক,’ এবার কড়া সুরে বললেন কম্যান্ডার। ‘পেরধানের সঙ্গে ওইভাবে কথা বলতি হয়? আমি কি কম্যান্ডার, না, না? বলি, শুধোই তোমারে কম্যান্ডার কিনা?’ আমি ‘তা তো বটেই,’ নির্বিকারভাবে মেনে নিলেন চুবুক।
‘তাই যদি হয় তবে তুমি কইলে কি কইলে না বয়েই গেল আমার। আমি নাবব।’
বলে এক লাফে মাটিতে নেমে পড়ে লাগামটা ছুড়ে বেড়ার গায়ে আটকে দিলেন ঘোড়সওয়ার। তারপর তরোয়ালের ঝন্ঝন্ আওয়াজ করতে-করতে কুঁড়েঘরটার দিকে চললেন।