১০:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

বৈঠক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি সয়াবিনের দাম নিয়ে, বাজারে এর প্রভাব পড়বে কি?

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
  • 48

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ভূমিকা

রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও, ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এখনো কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে এই অনিশ্চয়তায় ভোক্তা ও শিল্পমালিক—উভয় পক্ষই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রস্তাবিত মূল্যবৃদ্ধির কারণ

  • দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব: বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ভানাস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (BVORVMA) গত ২৭ মার্চ বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা থেকে ১৯৩ টাকা করার প্রস্তাব দেয়।
  • ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ: ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভোজ্যতেলের আমদানি ও উৎপাদনে যে ভ্যাট অব্যাহতি ছিল, তা শেষ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
  • খোলা তেলের দাম: খোলা সয়াবিন তেলের দামও ১৫৭ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বৈঠকের মূল আলোচনা

  • বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা: প্রস্তাবিত মূল্যবৃদ্ধি পর্যালোচনার জন্য রবিবার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীর উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মাইনুল খান, অতিরিক্ত সচিব আবদুর রাজ্জাক, এনবিআরের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রিফাইনারির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
  • সিদ্ধান্তহীনতা: অতিরিক্ত সচিব আবদুর রাজ্জাক জানান, ভোক্তার ওপর প্রভাব ও আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে রবিবারের সভা কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়। ট্যারিফ কমিশনের মুখপাত্র মাহমুদুল হাসান জানান, পরবর্তী বৈঠক মঙ্গলবার হতে পারে।

এনবিআর-এর ভূমিকা

  • কর ও ভ্যাট অব্যাহতি: ২০২৪ সালের মধ্য ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সূর্যমুখী, ক্যানোলা, সয়াবিন ও পাম অয়েলের ওপর কর ও ভ্যাট অব্যাহতি ছিল।
  • শুল্ক ও আয়কর মওকুফ: ওই সময় আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রক শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর (AIT) মওকুফ করা হয়।
  • ভ্যাট হ্রাস: ভোক্তাপর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার এবং আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল।
  • মেয়াদ শেষ: ৩১ মার্চের পর এই সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগের শুল্ক কাঠামোই পুনরায় কার্যকর হতে পারে, ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
  • বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চায়, চলতি অর্থবছরের বাকি সময় পর্যন্ত যেন ভ্যাট অব্যাহতি বজায় থাকে। এ বিষয়ে এনবিআরকে অনুরোধ করা হবে।

ভোক্তাদের উদ্বেগ ও বাজার পরিস্থিতি

  • নিম্ন আয়ের মানুষের চাপ: কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় ইতোমধ্যেই বেড়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট অব্যাহতি বাতিল হলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে।
  • সরবরাহ পরিস্থিতি: রাজধানীতে দোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ এখনো আছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী বলছেন, কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটররা অর্ডার নিতে দেরি করছেন।
  • ভবিষ্যৎ দাম: খুচরা বিক্রেতারা মনে করছেন, বর্তমানে মজুত থাকা তেল শেষ হলে বাজারে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি

  • ছয় মাসের মূল্য ওঠানামা: গত ছয় মাস ধরে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি ১,০৫০ থেকে ১,১০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে উঠানামা করছে।
  • আন্তর্জাতিক প্রভাব: সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী, যা দেশীয় বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

  • রিফাইনারদের আশা: রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, এনবিআর ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ালে তাদের খরচ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
  • সরকারের ভূমিকা: সরকার বলছে, সবদিক বিবেচনা করে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
  • ভোজ্যতেলের চাহিদা: বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৩–২৪ লাখ টন ভোজ্যতেল ব্যবহার হয়, যার ৯৫ শতাংশই আমদানি-নির্ভর।

উপসংহার

বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, ডলারের উচ্চমূল্য ও ভ্যাট অব্যাহতি নিয়ে অনিশ্চয়তার ফলে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রবিবারের বৈঠক কোনো নিষ্পত্তি ছাড়াই শেষ হওয়ায় সবার উদ্বেগ আরও বেড়েছে। আগামী বৈঠক বা এনবিআরের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার কোনো কার্যকর সমাধান নিয়ে আসবে—এমনটাই প্রত্যাশা ভোক্তা থেকে ব্যবসায়ী সবার।

বৈঠক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি সয়াবিনের দাম নিয়ে, বাজারে এর প্রভাব পড়বে কি?

০৪:০০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ভূমিকা

রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও, ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এখনো কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে এই অনিশ্চয়তায় ভোক্তা ও শিল্পমালিক—উভয় পক্ষই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রস্তাবিত মূল্যবৃদ্ধির কারণ

  • দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব: বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ভানাস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (BVORVMA) গত ২৭ মার্চ বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা থেকে ১৯৩ টাকা করার প্রস্তাব দেয়।
  • ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ: ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভোজ্যতেলের আমদানি ও উৎপাদনে যে ভ্যাট অব্যাহতি ছিল, তা শেষ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
  • খোলা তেলের দাম: খোলা সয়াবিন তেলের দামও ১৫৭ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বৈঠকের মূল আলোচনা

  • বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা: প্রস্তাবিত মূল্যবৃদ্ধি পর্যালোচনার জন্য রবিবার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীর উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মাইনুল খান, অতিরিক্ত সচিব আবদুর রাজ্জাক, এনবিআরের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রিফাইনারির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
  • সিদ্ধান্তহীনতা: অতিরিক্ত সচিব আবদুর রাজ্জাক জানান, ভোক্তার ওপর প্রভাব ও আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে রবিবারের সভা কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়। ট্যারিফ কমিশনের মুখপাত্র মাহমুদুল হাসান জানান, পরবর্তী বৈঠক মঙ্গলবার হতে পারে।

এনবিআর-এর ভূমিকা

  • কর ও ভ্যাট অব্যাহতি: ২০২৪ সালের মধ্য ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সূর্যমুখী, ক্যানোলা, সয়াবিন ও পাম অয়েলের ওপর কর ও ভ্যাট অব্যাহতি ছিল।
  • শুল্ক ও আয়কর মওকুফ: ওই সময় আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রক শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর (AIT) মওকুফ করা হয়।
  • ভ্যাট হ্রাস: ভোক্তাপর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার এবং আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল।
  • মেয়াদ শেষ: ৩১ মার্চের পর এই সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগের শুল্ক কাঠামোই পুনরায় কার্যকর হতে পারে, ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
  • বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চায়, চলতি অর্থবছরের বাকি সময় পর্যন্ত যেন ভ্যাট অব্যাহতি বজায় থাকে। এ বিষয়ে এনবিআরকে অনুরোধ করা হবে।

ভোক্তাদের উদ্বেগ ও বাজার পরিস্থিতি

  • নিম্ন আয়ের মানুষের চাপ: কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় ইতোমধ্যেই বেড়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট অব্যাহতি বাতিল হলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে।
  • সরবরাহ পরিস্থিতি: রাজধানীতে দোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ এখনো আছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী বলছেন, কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটররা অর্ডার নিতে দেরি করছেন।
  • ভবিষ্যৎ দাম: খুচরা বিক্রেতারা মনে করছেন, বর্তমানে মজুত থাকা তেল শেষ হলে বাজারে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি

  • ছয় মাসের মূল্য ওঠানামা: গত ছয় মাস ধরে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি ১,০৫০ থেকে ১,১০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে উঠানামা করছে।
  • আন্তর্জাতিক প্রভাব: সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী, যা দেশীয় বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

  • রিফাইনারদের আশা: রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, এনবিআর ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ালে তাদের খরচ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
  • সরকারের ভূমিকা: সরকার বলছে, সবদিক বিবেচনা করে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
  • ভোজ্যতেলের চাহিদা: বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৩–২৪ লাখ টন ভোজ্যতেল ব্যবহার হয়, যার ৯৫ শতাংশই আমদানি-নির্ভর।

উপসংহার

বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, ডলারের উচ্চমূল্য ও ভ্যাট অব্যাহতি নিয়ে অনিশ্চয়তার ফলে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রবিবারের বৈঠক কোনো নিষ্পত্তি ছাড়াই শেষ হওয়ায় সবার উদ্বেগ আরও বেড়েছে। আগামী বৈঠক বা এনবিআরের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার কোনো কার্যকর সমাধান নিয়ে আসবে—এমনটাই প্রত্যাশা ভোক্তা থেকে ব্যবসায়ী সবার।