০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৮৬)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • 65

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তিনি ইংলণ্ডের মহাসভায় এইরূপ বলিয়াছিলেন যে, গঙ্গাগোবিন্দের নামে সমস্ত ভারতবাসী বিবর্ণ হইয়া উঠে এবং ভারতের ব্রিটিশ রাজকর্মচারী-দের মধ্যে ইহার ন্যায় দুর্বৃত্ত, দুর্দান্ত, নির্ভীক ও শঠ কখন দেখা যায় নাই। আমরা কিন্তু তাঁহাকে সেরূপ শয়তানপদবাচ্য করিতে ইচ্ছুক নহি। তবে স্বার্থসিদ্ধি ও উচ্চাশার বেদীতলে তিনি যে ন্যায়, ধৰ্ম্ম, স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রীতি বলি দিয়াছিলেন, তাহা অস্বীকার করা যায় না। ভগবান্ তাঁহাকে অপরিমিত বুদ্ধি ও ক্ষমতা প্রদান করিয়াছিলেন। তিনি ইচ্ছা করিলে দেশের যথেষ্ট মহোপকার সংসাধিত করিতে পারিতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁহার বুদ্ধি ও ক্ষমতা কুপথেই পরিচালিত হইয়াছিল।

বঙ্গের তৎকালীন রাজস্ববন্দোবস্ত গঙ্গাগোবিন্দ ব্যতীত সম্পন্ন হয় নাই, ইহা একটি জ্বলন্ত সত্য; এমন কি লর্ড কর্ণওয়ালিসের অক্ষয় কীর্ত্তি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সহিতও গঙ্গাগোবিন্দের সম্বন্ধ বিজড়িত রহিয়াছে। আজ যদি সেই গঙ্গাগোবিন্দকে আমরা হ্যায়পথে চলিতে দেখিতাম, যাঁহার উপর বাঙ্গলার ইংরেজ রাজত্বের সম্পূর্ণ ভার ছিল বলিলে অত্যুক্তি হয় না, গবর্ণর জেনারেল যাঁহার করতলগত, আজ যদি ন্যায় ও ধর্ম্মের বিশাল প্রবাহে তাঁহাকে ভাসমান দেখিতাম, তাহা হইলে জগতে বাঙ্গলার গৌরব ও সুনাম চিরবিঘোষিত হইত।

দুঃখের বিষয়, সে সময়ে যে কয়জন বাঙ্গালীর সহিত ইংরেজ-রাজ্যের সম্বন্ধ ছিল, তাঁহাদের মধ্যে অধিকাংশই স্বার্থপর ও স্বদেশদ্রোহী। হেষ্টিংসের অপূরণীয় অর্থলালসা মিটাইবার জন্য গঙ্গাগোবিন্দ যে সমস্ত কুকীর্ত্তি রাখিয়া গিয়াছেন, তাহাতে জগৎসমক্ষে চিরকাল বাঙ্গালীকে হেয় বলিয়া পরিচয় দিতেছে। আমাদের দুরদৃষ্টবশতঃ তাই বৈদেশিকগণের মধুর বিশেষণে আমরা প্রতিনিয়ত অভিহিত হইয়া থাকি!

আমরা প্রথমতঃ গমাগোবিন্দ সিংহের পূর্ব্বপুরুষগণের কিঞ্চিৎ বিবরণ প্রদান করিতে ইচ্ছা করিতেছি। গঙ্গাগোবিন্দের পূর্ব্বপুরুষগণ অনেক দিন হইতে মুর্শিদাবাদের অন্তর্গত কান্দীতে বাস করিতেছিলেন। তাঁহারা জাতিতে উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থ। উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থগণ বহুদিন হইতে মুর্শিদাবাদের ফতেসিংহ প্রভৃতি স্থানে আবাসস্থান স্থাপন করিয়াছিলেন। সাধারণতঃ কান্দীনিবাসী হরকৃষ্ণ সিংহ হইতে গঙ্গাগোবিন্দের ধারা গৃহীত হইয়া থাকে। হরকৃষ্ণ প্রথমতঃ কুসীদজীবীর ব্যবসায় করিতেন। পরে ক্রমে ক্রমে রেশমের ব্যবসায় আরম্ভ করিয়া, প্রচুর লাভ করিতে আরম্ভ করেন।

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৮৬)

১১:০০:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তিনি ইংলণ্ডের মহাসভায় এইরূপ বলিয়াছিলেন যে, গঙ্গাগোবিন্দের নামে সমস্ত ভারতবাসী বিবর্ণ হইয়া উঠে এবং ভারতের ব্রিটিশ রাজকর্মচারী-দের মধ্যে ইহার ন্যায় দুর্বৃত্ত, দুর্দান্ত, নির্ভীক ও শঠ কখন দেখা যায় নাই। আমরা কিন্তু তাঁহাকে সেরূপ শয়তানপদবাচ্য করিতে ইচ্ছুক নহি। তবে স্বার্থসিদ্ধি ও উচ্চাশার বেদীতলে তিনি যে ন্যায়, ধৰ্ম্ম, স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রীতি বলি দিয়াছিলেন, তাহা অস্বীকার করা যায় না। ভগবান্ তাঁহাকে অপরিমিত বুদ্ধি ও ক্ষমতা প্রদান করিয়াছিলেন। তিনি ইচ্ছা করিলে দেশের যথেষ্ট মহোপকার সংসাধিত করিতে পারিতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁহার বুদ্ধি ও ক্ষমতা কুপথেই পরিচালিত হইয়াছিল।

বঙ্গের তৎকালীন রাজস্ববন্দোবস্ত গঙ্গাগোবিন্দ ব্যতীত সম্পন্ন হয় নাই, ইহা একটি জ্বলন্ত সত্য; এমন কি লর্ড কর্ণওয়ালিসের অক্ষয় কীর্ত্তি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সহিতও গঙ্গাগোবিন্দের সম্বন্ধ বিজড়িত রহিয়াছে। আজ যদি সেই গঙ্গাগোবিন্দকে আমরা হ্যায়পথে চলিতে দেখিতাম, যাঁহার উপর বাঙ্গলার ইংরেজ রাজত্বের সম্পূর্ণ ভার ছিল বলিলে অত্যুক্তি হয় না, গবর্ণর জেনারেল যাঁহার করতলগত, আজ যদি ন্যায় ও ধর্ম্মের বিশাল প্রবাহে তাঁহাকে ভাসমান দেখিতাম, তাহা হইলে জগতে বাঙ্গলার গৌরব ও সুনাম চিরবিঘোষিত হইত।

দুঃখের বিষয়, সে সময়ে যে কয়জন বাঙ্গালীর সহিত ইংরেজ-রাজ্যের সম্বন্ধ ছিল, তাঁহাদের মধ্যে অধিকাংশই স্বার্থপর ও স্বদেশদ্রোহী। হেষ্টিংসের অপূরণীয় অর্থলালসা মিটাইবার জন্য গঙ্গাগোবিন্দ যে সমস্ত কুকীর্ত্তি রাখিয়া গিয়াছেন, তাহাতে জগৎসমক্ষে চিরকাল বাঙ্গালীকে হেয় বলিয়া পরিচয় দিতেছে। আমাদের দুরদৃষ্টবশতঃ তাই বৈদেশিকগণের মধুর বিশেষণে আমরা প্রতিনিয়ত অভিহিত হইয়া থাকি!

আমরা প্রথমতঃ গমাগোবিন্দ সিংহের পূর্ব্বপুরুষগণের কিঞ্চিৎ বিবরণ প্রদান করিতে ইচ্ছা করিতেছি। গঙ্গাগোবিন্দের পূর্ব্বপুরুষগণ অনেক দিন হইতে মুর্শিদাবাদের অন্তর্গত কান্দীতে বাস করিতেছিলেন। তাঁহারা জাতিতে উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থ। উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থগণ বহুদিন হইতে মুর্শিদাবাদের ফতেসিংহ প্রভৃতি স্থানে আবাসস্থান স্থাপন করিয়াছিলেন। সাধারণতঃ কান্দীনিবাসী হরকৃষ্ণ সিংহ হইতে গঙ্গাগোবিন্দের ধারা গৃহীত হইয়া থাকে। হরকৃষ্ণ প্রথমতঃ কুসীদজীবীর ব্যবসায় করিতেন। পরে ক্রমে ক্রমে রেশমের ব্যবসায় আরম্ভ করিয়া, প্রচুর লাভ করিতে আরম্ভ করেন।