শ্রী নিখিলনাথ রায়
যুদ্ধবিগ্রহ, দেশশাসন, কেহ বা আপনাদের আমোদপ্রমোদ লইয়াই ব্যস্ত থাকিতেন; সুতরাং রায়রায়ান রাজস্বমন্ত্রিপদে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তাঁহার দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুতরই ছিল। রায়রায়ান ও কাননগো ব্যতীত রাজস্ব-সংক্রান্ত বিষয়ে জগৎশেঠদিগকেও একটি পদ লইতে হইয়াছিল। তাঁহারা বাদশাহের পেস্কারস্বরূপ দিল্লীতে বাঙ্গলার রাজস্ব পৌঁছাইয়া দিতেন।
ইষ্টইণ্ডিয়া কোম্পানীর দেওয়ানীগ্রহণের পর এই সমস্ত বিষয়ের কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু অনেকগুলি নিয়ম রক্ষিতও হইয়াছিল। ক্লাইব মহম্মদ রেজা খাঁ ও সেতাব রায়কে যথা-ক্রমে মুশিদাবাদ ও পাটনায় নায়েব দেওয়ানী পদে নিযুক্ত করিয়া রাজস্ব-সংক্রান্ত যাবতীয় ভার তাঁহাদের উপর প্রদান করেন। কাননগো প্রভৃতি কর্মচারী তাঁহাদের অধীন হন। এই সময়ে বঙ্গাধিকারী লক্ষ্মীনারায়ণ ও মহেন্দ্রনারায়ণ দুই জনে মুর্শিদাবাদে কাননগোর কার্য্য করিতে-ছিলেন। পুরুষানুক্রমে তাঁহারা উক্ত কার্য্য করিয়া আসিয়াছেন মুসল্যান রাজত্বকালে তাঁহাদের কাননগোগিরিতে সবিশেষ দক্ষতা থাকায়, কোম্পানীও তাঁহাদিগকে আপনাদিগের কার্য্যে নিযুক্ত করেন।
বিশেষতঃ পুরুষানুক্রমে জমিসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র তাঁহাদের হস্তে অবস্থিত; সুতরাং তাঁহারা দেশের জমাজমির বিষয় যেরূপ অবগত থাকিবেন, এবং তাঁহাদের দ্বারা যেরূপ সুচারুরূপে কার্য্য সম্পন্ন হইবে, নূতন লোকের দ্বারা তাহা সম্ভবপর নহে; কাজেই কোম্পানী তাঁহাদিগকে রাখিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। তাঁহারা সমস্ত কাগজপত্র দেখিয়া নায়েব দেওয়ানুকে রাজস্বসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের পরামর্শ দিতেন বলিয়া, নূতন বন্দোবস্তের সময় কোম্পানীকে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হয় নাই।
গঙ্গাগোবিন্দের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাধাকান্ত বরাবরই বঙ্গাধিকারীদিগের সেরেস্তায় কার্য্য করিতেন। কোম্পানীর রাজত্বেও তিনি উক্তকার্য্য দক্ষতার সহিত নির্ব্বাহ করিয়াছিলেন। গঙ্গাগোবিন্দ বাল্যকাল হইতে অত্যন্ত বুদ্ধিমান্ ছিলেন বলিয়া, অনেক কার্য্যে রাধাকান্তের সাহায্য করিতেন এবং অনেক সময়ে রাজস্বসম্বন্ধে তাঁহাকে সংপরামর্শ দিতেন। রাধাকান্ত উক্ত কার্য্য পরিত্যাগ করিলে, গঙ্গাগোবিন্দ সেই পদে নিযুক্ত হন এবং নিজ দক্ষতা প্রকাশ করিয়া মহম্মদ রেজা খাঁর প্রিয়পাত্র হইয়া উঠেন।