যুক্তরাষ্ট্র অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করে—গবেষণা, বিস্তৃত সরকারি কর্মসূচি ও বহুল প্রচারিত উদ্যোগে প্রতি বছর শত শত বিলিয়ন ডলার ঢেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এই বিপুল বিনিয়োগের ফল কী? খরচ ক্রমবর্ধমান, সেবার সুযোগে গভীর বৈষম্য, আর স্বাস্থ্য পরিসংখ্যানে উন্নত অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা। দেশটির চিকিৎসা ও গবেষণা অবকাঠামো ওভারহেডে ভারী, রোগীদের বাস্তব চাহিদা থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন।
এই ব্যর্থতার ক্লাসিক উদাহরণ ‘ইউএস ক্যানসার মুনশট’। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উদ্যোগটি চালু করেছিলেন, তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছিলেন এর প্রধান মুখ। তারা দাবি করেছিলেন, পাঁচ বছরে ক্যানসার চিকিৎসায় দশ বছরের অগ্রগতি আনা হবে। প্রকল্পটি পেয়েছিল ২০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থায়ন। বাইডেন পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হয়ে সেটিকে আরও বাড়িয়েছেন। প্রায় এক দশক পেরিয়ে ফলাফল নগণ্য—ঘোষণা আর গবেষণা পত্র ছাড়া তেমন কিছু নেই। এর সম্পূর্ণ বিপরীতে, ভারত স্বল্প সম্পদেই আসল উদ্ভাবন দেখাচ্ছে।
কারকিনোস হেলথকেয়ার নামের একটি বেসরকারি উদ্যোগ (যার মেন্টর ও উপদেষ্টা আমি) মাত্র ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগে ক্যানসার সেবায় বিপ্লব ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েছে—যে অর্থ আমেরিকার বাজেটে প্রায় অদৃশ্য। মাত্র চার বছরে—মুনশটের মূল সময়সীমারও কম—কারকিনোস সারা ভারতে একটি ক্যানসার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, যা গণহারে, পরিমাপ করা যায় এমন ফল দিচ্ছে; এই স্কেল যুক্তরাষ্ট্রের প্রকল্প কল্পনাও করতে পারেনি।
আজ কারকিনোস ১২টি রাজ্যে ৮০টি কেন্দ্র চালায়; ৩০ লাখের বেশি মানুষকে স্ক্রিনিং করেছে, ৬০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত করেছে। এদের মধ্যে ৩৫ হাজারই প্রত্যন্ত গ্রাম ও ছোট শহরের, যেখানে আগে কোনো ক্যানসার চিকিৎসাই ছিল না। হাজারো জীবন ইতিমধ্যে রক্ষা পেয়েছে। এটিকে কোনো প্রচার কৌশল বলা যাবে না—এটা বাস্তব অগ্রগতি, সুনির্দিষ্ট ও প্রভাবশালী।
কারকিনোসের সাফল্যের ভিত্তি কার্যকর বাস্তবায়ন আর স্মার্ট অংশীদারিত্ব। তারা বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সঙ্গে কাজ করে, বাসার কাছেই স্ক্রিনিং ও ডায়াগনস্টিকস দেয়; জটিল কেস কেবল প্রয়োজনে উচ্চ স্তরের কেন্দ্রে পাঠানো হয়। একটি ডিজিটাল ব্যাকবোন প্রতিটি রোগীর যাত্রা ট্র্যাক করে, কম সম্পদ পরিস্থিতির পরিচিত ফাঁক বন্ধ করে। পুরো অভিজ্ঞতা অ্যাপভিত্তিক—একটি ‘উবার সুলভ’ ক্যানসার কেয়ার—সবকিছু ডিজিটাল ও সমন্বিত। প্রতিটি কেস টিউমার বোর্ডে পর্যালোচিত হয়, ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘সেকেন্ড ওপিনিয়ন’ যুক্ত থাকে। টেস্ট ও চিকিৎসার দর আগেই ঠিক করা, সাধারণ দামে বা বিমা দরের চেয়ে অনেক কম। সিস্টেমটি দ্রুত, দক্ষ ও সম্পূর্ণ রোগীকেন্দ্রিক।
পথ সহজ ছিল না। একপর্যায়ে কারকিনোস বড় সংকটে পড়ে—লজিস্টিক, অর্থায়ন, সংশয়; টিকে থাকাই কঠিন ছিল। কিন্তু সংকল্প, সমস্যা সমাধান আর টাইট এক্সিকিউশনে তারা ঘুরে দাঁড়ায় এবং যা আমেরিকা পারল না, তা করে দেখায়।
অন্যদিকে মোটা বাজেট ও উচ্চ প্রচার সহ ‘মুনশট’ প্রকল্প আসলে বড়জোর প্রেস রিলিজ আর কমিটি মিটিং বাড়িয়েছে। এর নেতৃত্বের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের বৈঠকসহ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখি, তারা ভারতের সঙ্গী হতে উৎসাহবিহীন। কারকিনোস জমা করা মেডিকেল ডেটা ও প্রযুক্তি বিনা মূল্যে ভাগ করার প্রস্তাবও তারা আমলেই নেয়নি; বরং পরিচিত ছকে থেকে পছন্দের গবেষকের কাছে অনুদান বিলিয়ে গেছে, যাদের কাজ প্রায়ই বাস্তবে পৌঁছায় না। ভারতের সক্ষমতাকে তারা প্রায়ই অবজ্ঞা করেছে।
চাপে তাড়া ছিল কেবল কথার; রোগীরা কষ্ট পেতে পেতে মারা গেছেন, আর সরকারের চাকা শ্লথ গতিতে ঘুরেছে। সমস্যাটা শুধু মুনশটে নয়; গোটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থা একাডেমিক গবেষণায় আসক্ত, যা খুব কমই বড় স্কেলে বাস্তবায়িত হয়। ফল—আবিষ্কারে অগ্রগতি আছে, প্রভাব পড়ে কম। কারকিনোস নিয়ম ভেঙে দেখিয়েছে, বিদ্যমান প্রযুক্তিতে বাস্তব সমস্যা এখনই সমাধান করা যায় এবং স্কেলে করা যায়।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ কারকিনোস অধিগ্রহণ করে এবং মুকেশ আম্বানি সহানুভূতির সঙ্গে সম্প্রসারণে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। রিলায়েন্সের পুঁজি, বিস্তার ও পরিচালন দক্ষতা কারকিনোস মডেলকে সারা ভারতে—এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশেও—নিয়ে যাবে। যেটি একসময় সাহসী স্টার্টআপ ছিল, তা দ্রুতই ক্যানসারসহ স্বাস্থ্যসেবার সামগ্রিক নকশা হয়ে উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্র জিডিপির প্রায় ১৮%—প্রতিবছর ৪ লক্ষ কোটি ডলারেরও বেশি—স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করেও দুর্বল ফলাফল দেয়। আরও খারাপ, এর বড় অংশই গবেষণায় আটকা পড়ে, যা বাস্তবে খুব কমই রূপ নেয়। ভারতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরাও গবেষণায় বেশি সরকারি অর্থ ঢালার পরামর্শ দেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ‘গবেষণার জন্য গবেষণা’ মডেল নকল না করে, ভারতের নীতিনির্ধারকদের উচিত ইতিমধ্যেই যা কাজ করছে—সরকার-শিল্প অংশীদারির সেই নির্বাহ, স্কেল ও ফলাফলে মনোনিবেশ করা।
বিশ্ব নতুন আরেকটি ব্যর্থ মুনশট নয়; কারকিনোস ধরনের বিপ্লব চায়, যা বাস্তবে ডেলিভার করে।
বিবেক ওয়াধওয়া, সিইও, ভায়োনিক্স বায়োসায়েন্সেস। এখানে প্রকাশিত মতামত লেখকের ব্যক্তিগত।