শিক্ষার্থী আন্দোলনের শুরুর পটভূমি
২০২০ সালের গ্রীষ্মে অনলাইন পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ ঘনীভূত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বাধাগ্রস্ত নীতিমালা, সহপাঠীদের কল্যাণে তথ্য-পরামর্শের অভাব—এসব জমে ওঠা ক্ষোভ সড়কে আসার সূত্রপাত। “শিক্ষা আমাদের অধিকার, অনলাইনেই না, আমরা চাই ইন-সিটু পরীক্ষা!”—এ কমিটমেন্টের স্লোগান দিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়।
বন্ধ ক্লাসরুম, স্থগিত পরীক্ষা, অনিশ্চিত সিট
জুলাই আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস-পরীক্ষা পরিচালনা বন্ধ রাখে।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে পরীক্ষা পুনঃনির্ধারণ করে, কিন্তু পরবর্তী লকডাউন এবং আন্দোলনের কারণে তা স্থগিত হয়।
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও পুলিশের উপস্থিতি বাড়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে ভয় পায়।
কলেজ-ও কলেজ: অর্থনৈতিক প্রতিকূলতায় পড়া-লেখার ভয়াবহতা
“আমার টিউশন ফি আছে, কিন্তু ক্লাস তো চলছে না। এখন কি ফি দিলাম আর কী লাভ?”—এমন প্রশ্ন করেন অনেকে। জুনিয়র কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আয়-ব্যয় হিসেব করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে সরকারের কোনও আর্থিক সহায়তা না থাকায় তাঁরা পড়াশোনার খরচ ঠিক মতো মেটাতে পারছিলেন না।
- পিডিইউ (পোলিসি ডেইরি ইউনিভার্সিটি)–এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে অভিভাবকদের ৪২% অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে সন্তানের টিউশন ও কোচিং ফি বন্ধ করে দেয়।
রাজনীতি বনাম শিক্ষা: কেমন সমাধান?
রাজনৈতিক দৃষ্টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? শিক্ষার্থী আন্দোলন যখন নৈতিক দাবি হিসেবে উঠে আসে, তখন সরকার কী পদক্ষেপ নেবে? অনেকেই মনে করেন, সরকার যদি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসত, তবে হয়তো আন্দোলন এতটা ক্ষণস্থায়ী হত না।
- গভীর প্রতিবাদ: শিক্ষার্থীরা মূলত চেয়েছিল নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও ন্যায্য পরীক্ষাপদ্ধতি। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অনলাইন পরীক্ষা নীতি তৈরি করা হয়েছিল হঠাৎ করে, সুরক্ষা ও ন্যায্য মূল্যায়ন বিবেচনা না করে।
গাফিলতি
“আমরা শুধুই নিজেদের ভবিষ্যৎ চাই, অনলাইন বসে ন্যায়সঙ্গত মূল্যায়ন”— এ সংক্ষিপ্ত দাবি ছিল তাঁদের। কিন্তু বৃহত্তর রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক গাফিলতি ও সরকারের নীরবতায় বইয়ে রাখা দেখতে পেলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ছিল প্রশ্নবোধক, তবে সমাধানের পথ সুগম হয়নি।