০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

করোনার ফেরার বার্তা: বেড়েছে সংক্রমণ, কমেছে টিকা নেওয়া

নতুন করে হুমকি হয়ে উঠছে করোনা

অনেকের কাছেই মনে হচ্ছিল, করোনা বুঝি চিরতরে চলে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, ভাইরাসটি এখনও বিদ্যমান এবং বাংলাদেশে তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মে মাস থেকেই দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, যা বিশেষজ্ঞদেরও চিন্তিত করে তুলেছে। এর মধ্যে আবার নতুন দুটি ভ্যারিয়েন্ট—এক্সএফজি ও এক্সএফসি—দেশে শনাক্ত হয়েছে, যা অমিক্রনের শক্তিশালী উপধরন জেএন-১ থেকে এসেছে।

পরিসংখ্যানে সংক্রমণের চিত্র

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৩ জন। কিন্তু মে মাসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ জনে। জুনের ৫ তারিখে একজন আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর তথ্য বলছে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মাত্র তিনজন আক্রান্ত হলেও মে মাসের শেষ সপ্তাহে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫।

নতুন ধরন এক্সএফজি ও এনবি.১.৮.১: ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বর্তমানে আক্রান্তদের অধিকাংশই এক্সএফজি ধরনে সংক্রমিত, কিছু ক্ষেত্রে এক্সএফসি-ও পাওয়া গেছে। উভয়টাই ওমিক্রনের জেএন-১ এর উপধরন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, এর বাইরেও আরও একটি নতুন ধরন এনবি.১.৮.১ ইতোমধ্যে ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিশ্বের ২২টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। এর সংক্রমণ হার তুলনামূলক বেশি। ফলে এই ধরন বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: সতর্কতা জরুরি

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও বর্তমান পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ রূপ নেয়নি, তবুও সতর্ক না হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। বয়স্ক ও জটিল রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি যেমন—হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা—পুনরায় চালু করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।

টিকার আগ্রহে বিপর্যয়: সরকারের ভাবনা

অবাক করার মতো বিষয় হলো, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কালে মাত্র ৪৩ জন করোনা টিকা নিয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন বিদেশগামী যাত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ এফ এম শাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত টিকা থাকলেও জনগণের আগ্রহ প্রায় নেই বললেই চলে।

২২ এপ্রিল ইপিআই-এর এক সভায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে আবার টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আহ্বান: এখনই ব্যবস্থা নিন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি অবহেলা করা যাবে না। জনগণের মাঝে সচেতনতা ফেরাতে হবে। যারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের অবশ্যই টিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধির চর্চা ফের চালু করতে হবে।

সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে করোনার নতুন ঢেউ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

করোনার ভয়াবহতা হয়তো অনেকটাই কমে এসেছে, কিন্তু সেটি নিশ্চিহ্ন হয়নি। নতুন ভ্যারিয়েন্ট, নিম্ন টিকা গ্রহণ হার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভাব—সব মিলিয়ে বাংলাদেশে করোনার নতুন সংক্রমণ একটি নীরব হুমকি হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে টিকা কার্যক্রম ও জনসচেতনতায় জোর দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

করোনার ফেরার বার্তা: বেড়েছে সংক্রমণ, কমেছে টিকা নেওয়া

০৩:০০:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

নতুন করে হুমকি হয়ে উঠছে করোনা

অনেকের কাছেই মনে হচ্ছিল, করোনা বুঝি চিরতরে চলে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, ভাইরাসটি এখনও বিদ্যমান এবং বাংলাদেশে তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মে মাস থেকেই দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, যা বিশেষজ্ঞদেরও চিন্তিত করে তুলেছে। এর মধ্যে আবার নতুন দুটি ভ্যারিয়েন্ট—এক্সএফজি ও এক্সএফসি—দেশে শনাক্ত হয়েছে, যা অমিক্রনের শক্তিশালী উপধরন জেএন-১ থেকে এসেছে।

পরিসংখ্যানে সংক্রমণের চিত্র

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৩ জন। কিন্তু মে মাসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ জনে। জুনের ৫ তারিখে একজন আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর তথ্য বলছে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মাত্র তিনজন আক্রান্ত হলেও মে মাসের শেষ সপ্তাহে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫।

নতুন ধরন এক্সএফজি ও এনবি.১.৮.১: ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বর্তমানে আক্রান্তদের অধিকাংশই এক্সএফজি ধরনে সংক্রমিত, কিছু ক্ষেত্রে এক্সএফসি-ও পাওয়া গেছে। উভয়টাই ওমিক্রনের জেএন-১ এর উপধরন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, এর বাইরেও আরও একটি নতুন ধরন এনবি.১.৮.১ ইতোমধ্যে ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিশ্বের ২২টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। এর সংক্রমণ হার তুলনামূলক বেশি। ফলে এই ধরন বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: সতর্কতা জরুরি

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও বর্তমান পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ রূপ নেয়নি, তবুও সতর্ক না হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। বয়স্ক ও জটিল রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি যেমন—হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা—পুনরায় চালু করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।

টিকার আগ্রহে বিপর্যয়: সরকারের ভাবনা

অবাক করার মতো বিষয় হলো, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কালে মাত্র ৪৩ জন করোনা টিকা নিয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন বিদেশগামী যাত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ এফ এম শাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত টিকা থাকলেও জনগণের আগ্রহ প্রায় নেই বললেই চলে।

২২ এপ্রিল ইপিআই-এর এক সভায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে আবার টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আহ্বান: এখনই ব্যবস্থা নিন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি অবহেলা করা যাবে না। জনগণের মাঝে সচেতনতা ফেরাতে হবে। যারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের অবশ্যই টিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধির চর্চা ফের চালু করতে হবে।

সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে করোনার নতুন ঢেউ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

করোনার ভয়াবহতা হয়তো অনেকটাই কমে এসেছে, কিন্তু সেটি নিশ্চিহ্ন হয়নি। নতুন ভ্যারিয়েন্ট, নিম্ন টিকা গ্রহণ হার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভাব—সব মিলিয়ে বাংলাদেশে করোনার নতুন সংক্রমণ একটি নীরব হুমকি হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে টিকা কার্যক্রম ও জনসচেতনতায় জোর দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।