বর্তমান ঝুঁকির চিত্র
দেশ জুড়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আবারও দ্রুত বাড়ছে। ১১ জুন এক দিনে ২৮৮ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে—এ বছর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর ৯৫ শতাংশেরও বেশি রোগী রাজধানীর বাইরে, বিশেষ করে বরিশাল ও বরগুনা জেলায় শনাক্ত হয়েছে ।
একই সময়ে নতুন কোভিড-১৯ উপ-ভ্যারিয়েন্ট NB.1.8.1 (অড্-নামে ‘নিম্বাস’) ও LF.7, XFG, JN.1-এর ছড়িয়ে পড়া নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) দেশজুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে ।
হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধা
- কোভিড-১৯ :
- ঢাকাসহ ছয়টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বন্ধ থাকা আরটি-পিসিআর ল্যাব ফের চালু করে সীমিত পরিসরে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়েও পরীক্ষা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ।
- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুষঙ্গিক ওয়ার্ড প্রস্তুতসহ অক্সিজেন ও আইসিইউ-শয্যা বরাদ্দ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সিভিল সার্জন অফিস ।

- ডেঙ্গু :
- রাজধানীর ৮০০-শয্যার ডিএনসিসি হাসপাতাল সম্পূর্ণ ডেঙ্গু রোগীর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে; পাশাপাশি প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু কর্নার’ চালু হয়েছে ।
- বারিধারা, মোহাম্মদপুর ও মুগদায় অতিরিক্ত ডেঙ্গু-শয্যা তৈরি করা হয়েছে; নার্স-ডাক্তারের অতিরিক্ত দল থাকছে ২৪ ঘণ্টা ডিউটিতে, জানিয়েছে ডিজিএইচএস ।
সরকারের সমন্বিত ব্যবস্থা
- ১১ দফা জাতীয় নির্দেশনা : মাস্ক ব্যবহার, ভ্রমণকারী স্ক্রিনিং, আইসোলেশন-হটলাইন, পোর্ট হেল्थ ডেস্কে থার্মাল স্ক্যানার ও পিপিই-মজুতসহ ১১ দফা নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে ।
- মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান : ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৪ জুন থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক মনিটরিং দল গঠন ও প্রাপ্তবয়স্ক মশা নিধন স্প্রে দ্বিগুণ করেছে ।
- কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম : ডেঙ্গু পরিস্থিতি নজরদারিতে ডিজিএইচএস-এ কন্ট্রোল রুম ও ১৬২৬৩ হেল্পলাইন চালু।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, ঢাকার বাইরে দরিদ্র স্বাস্থ্য-সেবার পাশাপাশি জনসচেতনতা কম থাকায় রোগ ছড়াচ্ছে দ্রুত। তাই সব জেলায় একই মাত্রার নজরদারি ও লার্ভা ধ্বংস অভিযান জরুরি ।
অপরদিকে রোগতত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. হালিমুর রশিদ বলেন, “নিম্বাস-সহ একাধিক সাব-ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণের ইঙ্গিত মিলছে। প্রাথমিক প্রতিরোধ না বাড়ালে হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়বে।”
নাগরিকদের জন্য করণীয়
বাড়ির ভেতর-বাহিরে পানিবদ্ধ স্থান খালি ও পরিষ্কার রাখা।
জ্বর-কাঁশি-গলা ব্যথা দেখা দিলে বাড়িতে থাকুন, মাস্ক পরুন, দ্রুত পরীক্ষা করুন।
১৫ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা অ্যালকোহল-যুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার।
অপরিচিত ভিড়ে গেলে বাধ্যতামূলক মাস্ক ও তিন ফুট দূরত্ব।
জরুরি প্রয়োজনে ১৬২৬৩ (স্বাস্থ্য হেল্পলাইন) বা আইইডিসিআর-এর ০১৪০১-১৯৬২৯৩ নম্বরে যোগাযোগ।
সামনের পথ
স্বাস্থ্য খাতের কর্মকর্তারা বলছেন, জুলাই-আগস্টে ডেঙ্গুর পিক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মশা নিয়ন্ত্রণ সফল হলে ও নাগরিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দ্বৈত ঝুঁকিও সামাল দেওয়া সম্ভব। তবে ভ্যাকসিন আপডেট, পরীক্ষার পরিধি এবং চিকিৎসা উপকরণ মজুত—এই তিনটি কাজে দ্রুত অগ্রগতি না এলে পরিস্থিতি আবারও জটিল হতে পারে, এমন সতর্কবার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















