১১:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

ভিসা-সংকট বাড়ছে, পাসপোর্ট র‍্যাংকিংয়েও ধস

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যবন্ধের তালিকা লম্বা হচ্ছে

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম একসময়ে ঈদের ছুটির অগ্রবর্তী গন্তব্য ছিল; এখন এসব দেশে ট্যুরিস্ট ভিসা পেতে এক-দেড় মাস পর্যন্ত সময় লাগছে, অনেক আবেদনই বাতিল হচ্ছে। ভিয়েতনাম তো এ বছরের জানুয়ারি থেকেই বাংলাদেশিদের ই-ভিসা ও অন-অ্যারাইভাল সুবিধা স্থগিত করেছে; সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার প্রধান কারণ—ওভারস্টে ও অবৈধ শ্রমপ্রবেশের অভিযোগ।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০২৩ সাল থেকেই নতুন ট্যুরিস্ট ভিসা কার্যত বন্ধ রেখেছে; বাড়তি নিরাপত্তা পরীক্ষার পর সামান্যসংখ্যক আবেদনই পাশ করছে। এক মাস আগে সৌদি আরবও হজ মৌসুমের আগেই বাংলাদেশিসহ ১৪ দেশের স্বল্প-মেয়াদি ভিসা সাময়িক স্থগিত করেছে।

ভারতে বন্ধভুটান-নেপালে নির্ভরতা

২০২৩-এর জুলাইয়ে ভারত ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করার পর — মধ্যবিত্ত ভ্রমণকারীদের সহজতম রুটটিই আটকে যায়। ফলশ্রুতিতে ভুটান ও নেপাল রুটে চাপ বেড়েছে, কিন্তু স্থলবন্দর-জট ও সীমিত ফ্লাইটের কারণে সেই বিকল্পও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।

ইউরোপে রেকর্ডপ্রাপ্ত প্রত্যাখ্যান

২০২৪ সালে বাংলাদেশের ৩৯ হাজার ৩৪৫টি শেনজেন ভিসা আবেদনের ৫৪.৯ শতাংশই বাতিল হয়েছে—সব তৃতীয় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ অনুপাত। বিশেষ করে সুইডেন, মাল্টা ও বেলজিয়ামে প্রত্যাখ্যানের হার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি।

যুক্তরাষ্ট্রেও প্রবেশ-বার্তা কঠিন

চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বি-১/বি-২ পর্যটন-ভিসার প্রত্যাখ্যান হার ৪৬ শতাংশ ছুঁয়েছে। দূতাবাস সূত্র বলছে, কাপল-ডেলিভারি বা “বেবি ট্যুরিজম”-এর চেষ্টা ও অতিরিক্ত ওভারস্টে অভিযোগে ইন্টারভিউ আরও কড়া হয়েছে।

পাসপোর্ট সূচকে তলানির কাছাকাছি

  • হেনলি পাসপোর্ট সূচক ২০২৫-এ বাংলাদেশ ৯৩-তম; ভিসা-ফ্রি বা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল গন্তব্য মাত্র ৩৯টি—গত বছর যা ছিল ৪২।
  • নোমাড ক্যাপিটালিস্ট সূচকে অবস্থান আরও নিচে, ১৮১-তম। সূচকটি কর-আইন, দ্বৈত নাগরিকত্ব ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করে।

র‍্যাংকিং-পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ ওভারস্টে

টোয়াব পরিচালক মো. তাসলিম আমিন শোভন জানান, “সস্তা ভিসা পাইয়ে দেওয়ার দালালচক্র ও দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের প্রবণতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারই বিপদে ফেলেছে।” কাজী ওয়াহেদুল আলম, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক বোর্ড-সদস্যের ভাষায়, “বিদেশে যেতে হলে শিক্ষিত-আইনি পথে যেতে হবে; না হলে পাসপোর্টের মান আরও কমবে।”

পর্যটন-ব্যবসায় স্থবিরতা

বৈদেশিক ভ্রমণ কমে যাওয়ায় অনেক এয়ারলাইন্স ঢাকা রুটে ফ্লাইট কমিয়েছে; ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটরদের ব্যবসা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে বণিকবার্তা-গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।

সম্ভাব্য সমাধান কী?

  • ডিজিটাল ভিসা-সতর্কতা: সরকার ও ইমিগ্রেশন পুলিশকে ওভারস্টে-তথ্য ভাগ করে আইনি ব্যবস্থা দ্রুত করতে হবে।
  • যোগাযোগ কূটনীতি: শ্রম ও পর্যটন দু’ক্ষেত্রেই টার্গেট দেশগুলোর সঙ্গে নতুন পুনঃআলোচনার প্রয়োজন।
  • সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন: সঠিক ভিসা-নির্দেশনা, ভ্রমণ-বীমা ও ফাইনান্সিয়াল প্রুফের গুরুত্ব প্রচার করলে গ্রুপ-ওভারস্টে কমানো সম্ভব।

বর্তমানে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশ্ব ভ্রমণ আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। অবৈধ অভিবাসন ও ভিসা-বাজারের কালোবাজার রোধে কড়া নীতিমালা না আনতে পারলে ভিসা-দুর্ভোগ এবং পাসপোর্ট-দুর্বলতা বহুগুণে বাড়বে—এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভিসা-সংকট বাড়ছে, পাসপোর্ট র‍্যাংকিংয়েও ধস

০৫:৫৩:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যবন্ধের তালিকা লম্বা হচ্ছে

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম একসময়ে ঈদের ছুটির অগ্রবর্তী গন্তব্য ছিল; এখন এসব দেশে ট্যুরিস্ট ভিসা পেতে এক-দেড় মাস পর্যন্ত সময় লাগছে, অনেক আবেদনই বাতিল হচ্ছে। ভিয়েতনাম তো এ বছরের জানুয়ারি থেকেই বাংলাদেশিদের ই-ভিসা ও অন-অ্যারাইভাল সুবিধা স্থগিত করেছে; সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার প্রধান কারণ—ওভারস্টে ও অবৈধ শ্রমপ্রবেশের অভিযোগ।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০২৩ সাল থেকেই নতুন ট্যুরিস্ট ভিসা কার্যত বন্ধ রেখেছে; বাড়তি নিরাপত্তা পরীক্ষার পর সামান্যসংখ্যক আবেদনই পাশ করছে। এক মাস আগে সৌদি আরবও হজ মৌসুমের আগেই বাংলাদেশিসহ ১৪ দেশের স্বল্প-মেয়াদি ভিসা সাময়িক স্থগিত করেছে।

ভারতে বন্ধভুটান-নেপালে নির্ভরতা

২০২৩-এর জুলাইয়ে ভারত ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করার পর — মধ্যবিত্ত ভ্রমণকারীদের সহজতম রুটটিই আটকে যায়। ফলশ্রুতিতে ভুটান ও নেপাল রুটে চাপ বেড়েছে, কিন্তু স্থলবন্দর-জট ও সীমিত ফ্লাইটের কারণে সেই বিকল্পও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।

ইউরোপে রেকর্ডপ্রাপ্ত প্রত্যাখ্যান

২০২৪ সালে বাংলাদেশের ৩৯ হাজার ৩৪৫টি শেনজেন ভিসা আবেদনের ৫৪.৯ শতাংশই বাতিল হয়েছে—সব তৃতীয় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ অনুপাত। বিশেষ করে সুইডেন, মাল্টা ও বেলজিয়ামে প্রত্যাখ্যানের হার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি।

যুক্তরাষ্ট্রেও প্রবেশ-বার্তা কঠিন

চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বি-১/বি-২ পর্যটন-ভিসার প্রত্যাখ্যান হার ৪৬ শতাংশ ছুঁয়েছে। দূতাবাস সূত্র বলছে, কাপল-ডেলিভারি বা “বেবি ট্যুরিজম”-এর চেষ্টা ও অতিরিক্ত ওভারস্টে অভিযোগে ইন্টারভিউ আরও কড়া হয়েছে।

পাসপোর্ট সূচকে তলানির কাছাকাছি

  • হেনলি পাসপোর্ট সূচক ২০২৫-এ বাংলাদেশ ৯৩-তম; ভিসা-ফ্রি বা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল গন্তব্য মাত্র ৩৯টি—গত বছর যা ছিল ৪২।
  • নোমাড ক্যাপিটালিস্ট সূচকে অবস্থান আরও নিচে, ১৮১-তম। সূচকটি কর-আইন, দ্বৈত নাগরিকত্ব ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করে।

র‍্যাংকিং-পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ ওভারস্টে

টোয়াব পরিচালক মো. তাসলিম আমিন শোভন জানান, “সস্তা ভিসা পাইয়ে দেওয়ার দালালচক্র ও দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের প্রবণতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারই বিপদে ফেলেছে।” কাজী ওয়াহেদুল আলম, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক বোর্ড-সদস্যের ভাষায়, “বিদেশে যেতে হলে শিক্ষিত-আইনি পথে যেতে হবে; না হলে পাসপোর্টের মান আরও কমবে।”

পর্যটন-ব্যবসায় স্থবিরতা

বৈদেশিক ভ্রমণ কমে যাওয়ায় অনেক এয়ারলাইন্স ঢাকা রুটে ফ্লাইট কমিয়েছে; ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটরদের ব্যবসা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে বণিকবার্তা-গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।

সম্ভাব্য সমাধান কী?

  • ডিজিটাল ভিসা-সতর্কতা: সরকার ও ইমিগ্রেশন পুলিশকে ওভারস্টে-তথ্য ভাগ করে আইনি ব্যবস্থা দ্রুত করতে হবে।
  • যোগাযোগ কূটনীতি: শ্রম ও পর্যটন দু’ক্ষেত্রেই টার্গেট দেশগুলোর সঙ্গে নতুন পুনঃআলোচনার প্রয়োজন।
  • সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন: সঠিক ভিসা-নির্দেশনা, ভ্রমণ-বীমা ও ফাইনান্সিয়াল প্রুফের গুরুত্ব প্রচার করলে গ্রুপ-ওভারস্টে কমানো সম্ভব।

বর্তমানে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশ্ব ভ্রমণ আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। অবৈধ অভিবাসন ও ভিসা-বাজারের কালোবাজার রোধে কড়া নীতিমালা না আনতে পারলে ভিসা-দুর্ভোগ এবং পাসপোর্ট-দুর্বলতা বহুগুণে বাড়বে—এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।