মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ জোরদার হওয়ার পর রোহিঙ্গা বিদ্রোহের সম্ভাবনা নতুনভাবে সামনে এসেছে। ক্রমবর্ধমান সামরিক সংঘাত এবং উদ্বাস্তু শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা এখন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এক অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর ঐক্য ও ‘জিহাদ’ আহ্বান
২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে দীর্ঘদিনের দখল যুদ্ধ বন্ধ করে চারটি প্রধান সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী ‘মিশন হারমনি’ নামে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। এই চুক্তির পর শিবিরগুলোতে সহিংসতা কিছুটা কমলেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অস্ত্রধারী গোষ্ঠীগুলোর প্রকাশ্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। ধর্মীয় ভাষায় ‘জিহাদ’ ঘোষণা করে তরুণদের সংগ্রামে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বিধা
নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি মানবিক করিডোর গঠনের প্রস্তাব দেয় রাখাইন রাজ্যে। একইসঙ্গে সরকারের কূটনীতিক খালিলুর রহমান আরাকান আর্মির সঙ্গে প্রাথমিক সংলাপের কথা বলেন। অন্যদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা থামছে না বলে জানাচ্ছে স্থানীয়রা।
সংঘাতে নতুন রক্তপাত ও উদ্বাস্তু ঢল
রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে হামলা শুরু করেছে। মে-জুনে নতুন করে প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে জাতিসংঘ সূত্র জানিয়েছে। এর ফলে কক্সবাজারে মানবিক সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে। আরাকান আর্মি পাল্টা অভিযানে বুতিড়ডং ও মংডু এলাকায় গ্রাম ধ্বংস, গুম এবং গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। নতুন করে সৃষ্ট উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে গিয়ে খাদ্য সহায়তা ও আশ্রয় সংকট গভীরতর হয়েছে।
সহায়তা কমছে, বাড়ছে হতাশা ও জঙ্গি নিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা সহায়তা বাজেট কমিয়ে দেওয়ার পর কক্সবাজারে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, খাদ্য সহায়তা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এতে যুবকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। বহু তরুণ এখন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অর্থ বা প্রতিশ্রুতির লোভে যোগ দিচ্ছেন, যা কেবল নতুন সংঘাতের বীজ বপন করছে বলে স্থানীয়দের ধারনা। আন্তর্জাতিক দাতাদের মধ্যে সহযোগিতার অভাব এই প্রবণতাকে আরও উস্কে দিচ্ছে।
শান্তির জন্য করণীয়
রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের বিকল্প নেই। এখনই কক্সবাজারে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব কমাতে হবে, রোহিঙ্গা সমাজের বেসামরিক নেতৃত্বকে উৎসাহিত করতে হবে। একইসঙ্গে সীমান্তে পণ্য ও সাহায্য সরবরাহের পথ সহজ করে রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্যে আন্তর্জাতিক সহায়তার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।