০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
শিক্ষার্থী-শিক্ষকের প্রেমের গল্প নিয়ে বিতর্কে বন্ধ হলো দক্ষিণ কোরিয়ার কে-ড্রামা পাকিস্তানে সীমাহীন শ্রমিক শোষণ আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাসাদে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক: ক্লিওপেট্রা ও সিজারের কথোপকথন হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪৯) বাংলাদেশে ইভ টিজিং- নারী মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতার সংকট এপি’র প্রতিবেদন: হাসিনা-বিরোধী বিদ্রোহের পরিণতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ মধুমতী নদী: দক্ষিনের যোগাযোগ পথ মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল ধ্বংস করা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর চিরসবুজ নায়িকা মৌসুমী: রূপালী পর্দার এক যুগের প্রতীক কাপ্তাই লেকের মাছের বৈচিত্র্য ও মাছ ধরার রীতি – পার্বত্য চট্টগ্রামের জলে জীবনের গল্প

আধুনিক ক্রীড়ার রূপকার: আবাহনী ক্লাবের উত্তরাধিকার ও প্রভাব

খেলাধুলায় নবজাগরণের জন্ম

আবাহনী লিমিটেড ঢাকার ইতিহাস কেবল একটি ক্লাবের ইতিহাস নয়, এটি একটি জাতীয় চেতনার প্রতিফলন। ১৯৬৪ সালে ‘ইকবাল স্পোর্টিং ক্লাব’ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে শেখ কামালের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামাল শুধু রাজনীতির উত্তরাধিকার বহন করেননি, তিনি সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রেও একটি আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন বুনেছিলেন।

আধুনিকতার রূপরেখা: শেখ কামালের দর্শন

তৎকালীন সময়ে অধিকাংশ ক্রীড়া সংগঠনগুলো ছিল অগঠিত ও অনিয়মতান্ত্রিক। শেখ কামাল ক্রীড়াকে একটি কাঠামোবদ্ধ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রয়াস নেন। ইউরোপিয়ান ক্লাব ব্যবস্থাপনার আদলে আবাহনী গড়ে ওঠে। নিজেদের মাঠ, অফিস, প্রশিক্ষণ সুবিধা—সবই ছিল আগামীর পরিকল্পনার অংশ। এই দর্শনই পরে বাংলাদেশের ক্রীড়া খাতকে পেশাদার যুগে প্রবেশ করায়।

ফুটবলে আবাহনীর প্রভাব: পেশাদারিত্বের শুরু

১৯৭০-এর দশকে আবাহনী হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন আলোকবর্তিকা। ক্লাবটি শুরু থেকেই দেশের সেরা খেলোয়াড়দের রিক্রুট করে এবং বিদেশি ফুটবলার এনে ফুটবলের মান এবং জনপ্রিয়তা বাড়ায়। কৌশলী কোচিং, ফিটনেস ট্রেনিং ও বিদেশ সফর—সবই ছিল তাদের পরিকল্পনার অংশ।

১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ ঢাকাবাসীর মাঝে ফুটবল নিয়ে এমন উত্তেজনা তৈরি করেছিল, যা আজও স্মরণীয়। গ্যালারিভর্তি দর্শক, দলীয় পতাকা, প্রিন্ট মিডিয়ায় বিশ্লেষণ—এই সবকিছুই ফুটবলকে গণমাধ্যম ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসে।

ক্রিকেটে আধিপত্য ও আধুনিকীকরণ

আবাহনী কেবল ফুটবলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ১৯৭৫ সাল থেকেই তারা ঢাকার ক্রিকেট লিগে অংশ নেয় এবং ৮০ ও ৯০-এর দশকে একের পর এক শিরোপা জয় করে। আবাহনী ছিল সেই ক্লাব যারা আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, বিদেশি কোচ এবং পেশাদার ক্রিকেট ব্যবস্থার সূচনা করেছিল।

তারা জাতীয় দলের বহু খেলোয়াড় তৈরি করেছে—রকিবুল হাসান, আকরাম খান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান—অনেকেই আবাহনীর ছায়ায় বেড়ে উঠেছেন। ক্লাবটি আজও প্রিমিয়ার লিগে শক্তিশালী প্রতিযোগী এবং জাতীয় ক্রিকেটে খেলোয়াড় সরবরাহের বড় উৎস।

অন্যান্য খেলাধুলা ও নারী ক্রীড়ায় অবদান

আবাহনী কেবল পুরুষদের ফুটবল-ক্রিকেটেই নয়, হকি, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, টেবিল টেনিসসহ বিভিন্ন খেলায়ও সক্রিয়। এ ছাড়া নারীদের ক্রিকেট ও ফুটবল দল গঠনেও তারা অন্যতম অগ্রপথিক।

২০০০ সালের পর থেকে নারী ক্রীড়ায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কম থাকলেও আবাহনী স্বতন্ত্রভাবে প্রশিক্ষণ ও অংশগ্রহণ চালু রেখেছে। এটি একটি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়, যা ক্রীড়া সমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ।

অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো

ঢাকার ধানমণ্ডিতে আবাহনীর নিজস্ব ক্লাব মাঠ, জিমনেসিয়াম, ডরমেটরি, অফিস ব্লক, মিডিয়া রুম এবং ছোট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। ১৯৮৯ সালে ক্লাবটি লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়, যা বাংলাদেশে প্রথম।

এই রূপান্তরের ফলে তারা কর্পোরেট স্পন্সর, টেলিভিশন স্বত্ব এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণে সক্ষম হয়। ক্রীড়া ব্যবস্থাপনায় এই পেশাদার রূপান্তর আজও অন্যান্য ক্লাবের জন্য অনুকরণীয়।

আন্তর্জাতিক সাফল্য ও দেশীয় গর্ব

১৯৮৫ সালে ভারতের আইএফএ শিল্ড এবং ১৯৮৯ সালে সাইত নাগজি ট্রফি জিতে আবাহনী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে। ভারতের ক্লাবগুলোর বিপক্ষে জয় তাদের মর্যাদায় নতুন মাত্রা যুক্ত করে।

ফুটবলের পাশাপাশি আবাহনীর ক্রিকেট দলও এশিয়ান ক্লাব কাপ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই অংশগ্রহণ বিদেশি দলের সঙ্গে খেলোয়াড়দের যোগাযোগ এবং মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

আধুনিক প্রযুক্তি ও মিডিয়া ব্যবস্থাপনা

আবাহনী প্রথম ক্লাব হিসেবে ম্যাচ লাইভ সম্প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়া আপডেট, ক্লাব ম্যাগাজিন এবং পৃষ্ঠপোষকতা ভিত্তিক প্রমোশন চালু করে। এসব উদ্যোগ ক্রীড়া ক্লাব পরিচালনায় আধুনিক চিন্তার পরিচয় দেয়।

ক্রীড়া সংস্কৃতি ও সমাজে প্রভাব

আবাহনীর উত্থান শুধু ক্রীড়াক্ষেত্রেই নয়, সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্রীড়াকে জনপ্রিয় করে তোলে। ঢাকার প্রতিটি এলাকায় শিশু-কিশোররা আবাহনী কিংবা মোহামেডান হয়ে খেলতো। তারা ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, দলগত চিন্তা ও খেলোয়াড়ী মানসিকতা তৈরি করেছিল।

চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

যদিও আবাহনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়, তবুও ক্লাব প্রশাসন, কোচিং ও খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে মাঝেমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও ক্লাবকে মাঝে মাঝে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে তাদের অবদান এখনও অনন্য।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা

আবাহনী বর্তমানে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়া একাডেমি গঠনের পরিকল্পনা করছে, যেখানে ১০টি খেলার উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে নতুন প্রশিক্ষক নিয়োগ, অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৯ দল গঠন, আন্তর্জাতিক ট্যুর ও কর্পোরেট পার্টনারশিপ বাড়ানোর কাজ চলছে।

আবাহনী লিমিটেড ঢাকা বাংলাদেশের ক্রীড়া উন্নয়নের একটি প্রতিষ্ঠানগত মডেল। তাদের উন্নয়ন, পেশাদার ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ কাঠামো ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গী বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতকে নতুন যুগে প্রবেশ করিয়েছে। তাদের চর্চিত পদ্ধতি আজ অন্যান্য ক্লাব, ফেডারেশন ও ক্রীড়া একাডেমির জন্য একটি মানদণ্ড।
অতীতের গৌরবের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আবাহনী এখনো প্রস্তুত। ক্রীড়াঙ্গনের এ রকম নেতৃত্বই আধুনিক বাংলাদেশের ক্রীড়া সংস্কৃতিকে প্রাণবন্ত ও টেকসই করে তুলছে।

শিক্ষার্থী-শিক্ষকের প্রেমের গল্প নিয়ে বিতর্কে বন্ধ হলো দক্ষিণ কোরিয়ার কে-ড্রামা

আধুনিক ক্রীড়ার রূপকার: আবাহনী ক্লাবের উত্তরাধিকার ও প্রভাব

১০:০০:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

খেলাধুলায় নবজাগরণের জন্ম

আবাহনী লিমিটেড ঢাকার ইতিহাস কেবল একটি ক্লাবের ইতিহাস নয়, এটি একটি জাতীয় চেতনার প্রতিফলন। ১৯৬৪ সালে ‘ইকবাল স্পোর্টিং ক্লাব’ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে শেখ কামালের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামাল শুধু রাজনীতির উত্তরাধিকার বহন করেননি, তিনি সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রেও একটি আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন বুনেছিলেন।

আধুনিকতার রূপরেখা: শেখ কামালের দর্শন

তৎকালীন সময়ে অধিকাংশ ক্রীড়া সংগঠনগুলো ছিল অগঠিত ও অনিয়মতান্ত্রিক। শেখ কামাল ক্রীড়াকে একটি কাঠামোবদ্ধ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রয়াস নেন। ইউরোপিয়ান ক্লাব ব্যবস্থাপনার আদলে আবাহনী গড়ে ওঠে। নিজেদের মাঠ, অফিস, প্রশিক্ষণ সুবিধা—সবই ছিল আগামীর পরিকল্পনার অংশ। এই দর্শনই পরে বাংলাদেশের ক্রীড়া খাতকে পেশাদার যুগে প্রবেশ করায়।

ফুটবলে আবাহনীর প্রভাব: পেশাদারিত্বের শুরু

১৯৭০-এর দশকে আবাহনী হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন আলোকবর্তিকা। ক্লাবটি শুরু থেকেই দেশের সেরা খেলোয়াড়দের রিক্রুট করে এবং বিদেশি ফুটবলার এনে ফুটবলের মান এবং জনপ্রিয়তা বাড়ায়। কৌশলী কোচিং, ফিটনেস ট্রেনিং ও বিদেশ সফর—সবই ছিল তাদের পরিকল্পনার অংশ।

১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ ঢাকাবাসীর মাঝে ফুটবল নিয়ে এমন উত্তেজনা তৈরি করেছিল, যা আজও স্মরণীয়। গ্যালারিভর্তি দর্শক, দলীয় পতাকা, প্রিন্ট মিডিয়ায় বিশ্লেষণ—এই সবকিছুই ফুটবলকে গণমাধ্যম ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসে।

ক্রিকেটে আধিপত্য ও আধুনিকীকরণ

আবাহনী কেবল ফুটবলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ১৯৭৫ সাল থেকেই তারা ঢাকার ক্রিকেট লিগে অংশ নেয় এবং ৮০ ও ৯০-এর দশকে একের পর এক শিরোপা জয় করে। আবাহনী ছিল সেই ক্লাব যারা আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, বিদেশি কোচ এবং পেশাদার ক্রিকেট ব্যবস্থার সূচনা করেছিল।

তারা জাতীয় দলের বহু খেলোয়াড় তৈরি করেছে—রকিবুল হাসান, আকরাম খান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান—অনেকেই আবাহনীর ছায়ায় বেড়ে উঠেছেন। ক্লাবটি আজও প্রিমিয়ার লিগে শক্তিশালী প্রতিযোগী এবং জাতীয় ক্রিকেটে খেলোয়াড় সরবরাহের বড় উৎস।

অন্যান্য খেলাধুলা ও নারী ক্রীড়ায় অবদান

আবাহনী কেবল পুরুষদের ফুটবল-ক্রিকেটেই নয়, হকি, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, টেবিল টেনিসসহ বিভিন্ন খেলায়ও সক্রিয়। এ ছাড়া নারীদের ক্রিকেট ও ফুটবল দল গঠনেও তারা অন্যতম অগ্রপথিক।

২০০০ সালের পর থেকে নারী ক্রীড়ায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কম থাকলেও আবাহনী স্বতন্ত্রভাবে প্রশিক্ষণ ও অংশগ্রহণ চালু রেখেছে। এটি একটি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়, যা ক্রীড়া সমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ।

অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো

ঢাকার ধানমণ্ডিতে আবাহনীর নিজস্ব ক্লাব মাঠ, জিমনেসিয়াম, ডরমেটরি, অফিস ব্লক, মিডিয়া রুম এবং ছোট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। ১৯৮৯ সালে ক্লাবটি লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়, যা বাংলাদেশে প্রথম।

এই রূপান্তরের ফলে তারা কর্পোরেট স্পন্সর, টেলিভিশন স্বত্ব এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণে সক্ষম হয়। ক্রীড়া ব্যবস্থাপনায় এই পেশাদার রূপান্তর আজও অন্যান্য ক্লাবের জন্য অনুকরণীয়।

আন্তর্জাতিক সাফল্য ও দেশীয় গর্ব

১৯৮৫ সালে ভারতের আইএফএ শিল্ড এবং ১৯৮৯ সালে সাইত নাগজি ট্রফি জিতে আবাহনী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে। ভারতের ক্লাবগুলোর বিপক্ষে জয় তাদের মর্যাদায় নতুন মাত্রা যুক্ত করে।

ফুটবলের পাশাপাশি আবাহনীর ক্রিকেট দলও এশিয়ান ক্লাব কাপ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই অংশগ্রহণ বিদেশি দলের সঙ্গে খেলোয়াড়দের যোগাযোগ এবং মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

আধুনিক প্রযুক্তি ও মিডিয়া ব্যবস্থাপনা

আবাহনী প্রথম ক্লাব হিসেবে ম্যাচ লাইভ সম্প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়া আপডেট, ক্লাব ম্যাগাজিন এবং পৃষ্ঠপোষকতা ভিত্তিক প্রমোশন চালু করে। এসব উদ্যোগ ক্রীড়া ক্লাব পরিচালনায় আধুনিক চিন্তার পরিচয় দেয়।

ক্রীড়া সংস্কৃতি ও সমাজে প্রভাব

আবাহনীর উত্থান শুধু ক্রীড়াক্ষেত্রেই নয়, সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্রীড়াকে জনপ্রিয় করে তোলে। ঢাকার প্রতিটি এলাকায় শিশু-কিশোররা আবাহনী কিংবা মোহামেডান হয়ে খেলতো। তারা ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, দলগত চিন্তা ও খেলোয়াড়ী মানসিকতা তৈরি করেছিল।

চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

যদিও আবাহনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়, তবুও ক্লাব প্রশাসন, কোচিং ও খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে মাঝেমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও ক্লাবকে মাঝে মাঝে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে তাদের অবদান এখনও অনন্য।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা

আবাহনী বর্তমানে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়া একাডেমি গঠনের পরিকল্পনা করছে, যেখানে ১০টি খেলার উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে নতুন প্রশিক্ষক নিয়োগ, অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৯ দল গঠন, আন্তর্জাতিক ট্যুর ও কর্পোরেট পার্টনারশিপ বাড়ানোর কাজ চলছে।

আবাহনী লিমিটেড ঢাকা বাংলাদেশের ক্রীড়া উন্নয়নের একটি প্রতিষ্ঠানগত মডেল। তাদের উন্নয়ন, পেশাদার ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ কাঠামো ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গী বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতকে নতুন যুগে প্রবেশ করিয়েছে। তাদের চর্চিত পদ্ধতি আজ অন্যান্য ক্লাব, ফেডারেশন ও ক্রীড়া একাডেমির জন্য একটি মানদণ্ড।
অতীতের গৌরবের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আবাহনী এখনো প্রস্তুত। ক্রীড়াঙ্গনের এ রকম নেতৃত্বই আধুনিক বাংলাদেশের ক্রীড়া সংস্কৃতিকে প্রাণবন্ত ও টেকসই করে তুলছে।