০১:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

‘মব সন্ত্রাসে’ বিএনপিও নিজেকে জড়ালো কেন

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০৬:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • 13

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির দলবদ্ধভাবে হেনস্থার ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠনের একদল নেতাকর্মীর এ ধরনের ‘মব সন্ত্রাসের’ সাথে জড়িত হবার ঘটনাও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

রোববার ঢাকার উত্তরায় তার নিজের বাসায় ঢুকে ওই ব্যক্তিরা মি. হুদাকে বের করে এনে হেনস্থা করেন এবং এক পর্যায়ে তার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দেন ও তার মুখে জুতা দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় তার গায়ে ডিম ছুড়ে মারা হয়।

পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতেই এ ঘটনার পর তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই তাকে বিএনপির করা একটি মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

মি. হুদার ওপর আক্রমণকারীরা নিজেদের বিএনপির সহযোগী একটি সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং বিএনপি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় অস্বীকারও করেনি।

প্রশ্ন উঠেছে, গত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও বিএনপি কিংবা দলটির নেতা কর্মীরা কেন এ ধরনের মব সন্ত্রাসে জড়ালো।

দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অবশ্য বলছেন, এর সঙ্গে দল হিসেবে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নেই।

“এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা, যার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর সুযোগ নেই। আমরা এগুলো সমর্থন করি না। দলের কেউ জড়িত থাকলে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি.আহমদ।

ঘটনার পর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ওই ঘটনায় ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সকলকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল আলম চৌধুরী বলছেন, সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘মব সন্ত্রাসকে’ আস্কারা দিয়ে এ পর্যায়ে এনেছে।

মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন মনে করেন,এর দায় সরকারের ওপই বর্তায়।

তিনি বলছিলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের ‘মব সন্ত্রাস বা দলবদ্ধ সহিংসতা’ চলমান থাকার দায় সরকার এড়াতে পারে না।

“আইন আদালতকে পাশ কাটিয়ে এ অসভ্যতা চলতে পারে না,” উল্লেখ করেন তিনি।

গ্রেফতারের পর সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদা
গ্রেফতারের পর সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদা

নূরুল হুদাকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছে

রোববার দুপুরে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদা সহ ১৯জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে বিএনপি। মি. হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে।

ওই নির্বাচনের আগের রাতে ভুয়া ভোটের অভিযোগ উঠেছিলো এবং সে জন্য বিএনপি সবসময়ই নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে আসছিলো।

রোববার গত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপি নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ করে। পরে থানায় গিয়ে মামলা করে।

ওদিকে সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ও পরে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করা মি. হুদা সিইসি হিসেবে তার দায়িত্ব পালন শেষে অবসর জীবন যাপন করছিলেন। তিনি গত বছর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও নিজের বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।

রোববার বিকেলে বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কর্মী পরিচয়ে একদল ব্যক্তি তার বাসায় গিয়ে তাকে বের করে হেনস্থা করে। এ সময় দলবদ্ধ ব্যক্তিরা মি. হুদাকে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দেয় ও জুতা দিয়ে মুখে আঘাত করে-এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

হেনস্থার ওই ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিও ওই ভিডিওতে দেখা গেছে। হেনস্থার পর মি. হুদাকে হেনস্থাকারীদের সামনে থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে রাতে তাকে বিএনপির করা মামলার আসামী হিসেবে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

কিন্তু এর মধ্যেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।

এ ঘটনার তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, কেউ অপরাধ করলেও আইন আদালতকে পাশ কাটিয়ে এমন মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে আইন হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই।

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন কে এম নূরুল হুদা।
২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন কে এম নূরুল হুদা।

বিএনপি কেন মব সন্ত্রাসে?

মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের মতে, ‘মব জাস্টিস’ হলো অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহে বা অভিযোগ করে কোনো ব্যক্তিকে অবমাননা, মারধর, হত্যা বা সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে সাজা দেওয়া বা প্রতিশোধ নেওয়া। এসব ঘটনায় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা দলবদ্ধ হয়ে আইন হাতে তুলে নিয়ে কারও ওপর আক্রমণ বা কাউকে হেনস্থা করে থাকে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বৈশ্বিক ঘোষণা মতে, ‘মব জাস্টিস’ এর কারণে মানবাধিকারের বড় লঙ্ঘন হয়। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার—তাঁকে যেন নিরপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি বিচারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকতে হবে।

গত বছর ৫ই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘মব জাস্টিস’ ব্যাপক পরিচিতি পেতে থাকে। একের পর এক দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে ‘মব’।

ধানমন্ডিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ধ্বংস ও গাজীপুরে একজন সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলাসহ ‘মব সন্ত্রাস’ এর নানা ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো। এসব ঘটনার সাথে সরকার ঘনিষ্ঠ একটি দলের দু একজন নেতার নামও বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে।

‘মব’ কিংবা ‘মব সন্ত্রাসের’ ঘটনায় বিএনপির নাম বড় করে না আসলেও দলটির মাঠ পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দল থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে।

এমন প্রেক্ষাপটে এখন নতুন করে সাবেক সিইসির ওপর দলবদ্ধ এই বিশৃঙ্খলা বা মব তৈরির সাথে দলটি কেন জড়িয়ে পড়লো, সেই আলোচনাও সামনে আসছে।

বিশেষ করে যেখানে গত তিনটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আইনি পদক্ষেপ নিলো এবং সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দলটির নেতাকর্মীরা এমন মব সন্ত্রাসে জড়ালো কেন – তা নিয়ে প্রশ্নও আছে।

দলের মধ্য থেকেই কোনো কোনো মহল এটি উস্কে দিয়েছে কি-না তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। কিংবা এর সাথে দলের বাইরে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না তা নিয়েও কথা বলছেন অনেকে। অর্থাৎ অন্য কোনো গোষ্ঠী বিএনপির নীচের স্তরের কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনায় জড়িয়েছে কি-না সেই আলোচনা হচ্ছে দলের ভেতরে।

মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন যেমন মনে করেন, ‘দেশে একটি অস্থিরতা তৈরির জন্য একটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের পরিকল্পিত মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে মানুষ’।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের দলের যারা এ ঘটনায় জড়িত বলে দেখা যাচ্ছে, তারা নিজ থেকেই এটি ঘটিয়েছে এবং এ ঘটনার সাথে দল হিসেবে বিএনপি বা এর নেতাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

“একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার দায় দল হিসেবে বিএনপির ওপর চাপানোর সুযোগ নেই। আমরা সবসময়ই এ অপসংস্কৃতির নিন্দা করে আসছি। বিভিন্ন পর্যায়ে দলের অনেকের বিরুদ্ধে এ ধরনের মবের কারণে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, ভুয়া নির্বাচন ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ নানা কারণে নূরুল হুদাসহ অনেকের বিরুদ্ধে জনরোষ আছে, কারণ তাদের সম্মিলিত অবদানের কারণেই শেষ পর্যন্ত দেশ বাঁচাতে একটি গণবিপ্লবের দরকার হয়েছে।

“কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা মব সমর্থন করি না। এ ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে আমরা অবশ্যই ডিসিপ্লিনারি ব্যবস্থা নিবো,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন মি. আহমদ।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, এ ঘটনায় বিএনপিকে জড়ানোর কোনো সুযোগই নেই। কারণ মি. হুদাসহ গত তিনটি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপি তার অভিযোগ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছে।

“দল হিসেবে বিএনপি প্রথমে নির্বাচন কমিশনের কাছে গেছে। পরে থানায় গেছে। মব করলে তো আগেই করা যেতো। মি.হুদাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দেওয়া পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু যা ঘটেছে তা সমর্থনযোগ্য নয়। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

গত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিএনপি।
গত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিএনপি।

সরকারের বক্তব্য, দায় কতটা

ঘটনার পর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারে পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

এতে বলা হয়, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এসময় “মব” কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

“সরকার দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। অভিযুক্ত সকল ব্যক্তির বিচার দেশের আইন মেনে হবে এবং বিচারাধীন বিষয় ও ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন,” বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, “অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ। “মব” সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সকলকে চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে”।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বলছেন, মব নিয়ে সরকারের এমন বক্তব্য নতুন কিছু নয়।

“একটি ঘটনাতেও সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? বরং মব সন্ত্রাসের ঘটনাগুলোতে কখনো কখনো এ ধরনের বিবৃতি বা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মৃদু ভৎর্সনা দিয়ে দায় সেরেছে, যা প্রকারান্তরে মব সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করেছে। ফলে এটি এখন সারাদেশে ছড়াচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মি. চৌধুরী বলেন, কেউ অপরাধ করলে সরকার যেমন আইনি পদক্ষেপ নিবে তেমনি একজন অপরাধীও যেন বেআইনি আক্রমণের শিকার না হয়, সেটি নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব।

“কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সেই পথে যায়নি। তারা রুল অ্যান্ড ডিভাইড পলিসি নিয়েছে। তারাই মবের আস্কারা দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো আগ্রহ সরকারের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি,” বলছিলেন তিনি।

মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটনও বলছেন, মবের ঘটনাগুলোর দায় সরকারের।

“মানুষকে হেনস্থা, অসম্মানিত ও শারীরিক নির্যাতনের বৈধতার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এসব ঘটনা চলমান থাকার দায় সরকার এড়াতে পারে না। আইন আদালতকে পাশ কাটিয়ে মব সন্ত্রাস বা আইন নিজের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মি. খান বলেন মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে, কারণ এই অসভ্যতা চলতে পারে না।

ওদিকে আজ গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেছেন, ‘মব জাস্টিস’ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

“তার (নূরুল হুদা)সঙ্গে যেটা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কোনো কিছু থাকলে আমাদের জানাবেন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রপার অ্যাকশন নিবে,” বলেছেন তিনি।

বিবিসি নিউজ বাংলা

‘মব সন্ত্রাসে’ বিএনপিও নিজেকে জড়ালো কেন

০৪:০৬:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির দলবদ্ধভাবে হেনস্থার ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠনের একদল নেতাকর্মীর এ ধরনের ‘মব সন্ত্রাসের’ সাথে জড়িত হবার ঘটনাও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

রোববার ঢাকার উত্তরায় তার নিজের বাসায় ঢুকে ওই ব্যক্তিরা মি. হুদাকে বের করে এনে হেনস্থা করেন এবং এক পর্যায়ে তার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দেন ও তার মুখে জুতা দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় তার গায়ে ডিম ছুড়ে মারা হয়।

পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতেই এ ঘটনার পর তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই তাকে বিএনপির করা একটি মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

মি. হুদার ওপর আক্রমণকারীরা নিজেদের বিএনপির সহযোগী একটি সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং বিএনপি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় অস্বীকারও করেনি।

প্রশ্ন উঠেছে, গত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও বিএনপি কিংবা দলটির নেতা কর্মীরা কেন এ ধরনের মব সন্ত্রাসে জড়ালো।

দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অবশ্য বলছেন, এর সঙ্গে দল হিসেবে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নেই।

“এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা, যার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর সুযোগ নেই। আমরা এগুলো সমর্থন করি না। দলের কেউ জড়িত থাকলে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি.আহমদ।

ঘটনার পর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ওই ঘটনায় ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সকলকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল আলম চৌধুরী বলছেন, সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘মব সন্ত্রাসকে’ আস্কারা দিয়ে এ পর্যায়ে এনেছে।

মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন মনে করেন,এর দায় সরকারের ওপই বর্তায়।

তিনি বলছিলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের ‘মব সন্ত্রাস বা দলবদ্ধ সহিংসতা’ চলমান থাকার দায় সরকার এড়াতে পারে না।

“আইন আদালতকে পাশ কাটিয়ে এ অসভ্যতা চলতে পারে না,” উল্লেখ করেন তিনি।

গ্রেফতারের পর সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদা
গ্রেফতারের পর সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদা

নূরুল হুদাকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছে

রোববার দুপুরে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদা সহ ১৯জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে বিএনপি। মি. হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে।

ওই নির্বাচনের আগের রাতে ভুয়া ভোটের অভিযোগ উঠেছিলো এবং সে জন্য বিএনপি সবসময়ই নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে আসছিলো।

রোববার গত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপি নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ করে। পরে থানায় গিয়ে মামলা করে।

ওদিকে সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ও পরে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করা মি. হুদা সিইসি হিসেবে তার দায়িত্ব পালন শেষে অবসর জীবন যাপন করছিলেন। তিনি গত বছর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও নিজের বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।

রোববার বিকেলে বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কর্মী পরিচয়ে একদল ব্যক্তি তার বাসায় গিয়ে তাকে বের করে হেনস্থা করে। এ সময় দলবদ্ধ ব্যক্তিরা মি. হুদাকে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দেয় ও জুতা দিয়ে মুখে আঘাত করে-এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

হেনস্থার ওই ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিও ওই ভিডিওতে দেখা গেছে। হেনস্থার পর মি. হুদাকে হেনস্থাকারীদের সামনে থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে রাতে তাকে বিএনপির করা মামলার আসামী হিসেবে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

কিন্তু এর মধ্যেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।

এ ঘটনার তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, কেউ অপরাধ করলেও আইন আদালতকে পাশ কাটিয়ে এমন মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে আইন হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই।

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন কে এম নূরুল হুদা।
২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন কে এম নূরুল হুদা।

বিএনপি কেন মব সন্ত্রাসে?

মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের মতে, ‘মব জাস্টিস’ হলো অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহে বা অভিযোগ করে কোনো ব্যক্তিকে অবমাননা, মারধর, হত্যা বা সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে সাজা দেওয়া বা প্রতিশোধ নেওয়া। এসব ঘটনায় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা দলবদ্ধ হয়ে আইন হাতে তুলে নিয়ে কারও ওপর আক্রমণ বা কাউকে হেনস্থা করে থাকে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বৈশ্বিক ঘোষণা মতে, ‘মব জাস্টিস’ এর কারণে মানবাধিকারের বড় লঙ্ঘন হয়। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার—তাঁকে যেন নিরপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি বিচারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকতে হবে।

গত বছর ৫ই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘মব জাস্টিস’ ব্যাপক পরিচিতি পেতে থাকে। একের পর এক দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে ‘মব’।

ধানমন্ডিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ধ্বংস ও গাজীপুরে একজন সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলাসহ ‘মব সন্ত্রাস’ এর নানা ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো। এসব ঘটনার সাথে সরকার ঘনিষ্ঠ একটি দলের দু একজন নেতার নামও বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে।

‘মব’ কিংবা ‘মব সন্ত্রাসের’ ঘটনায় বিএনপির নাম বড় করে না আসলেও দলটির মাঠ পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দল থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে।

এমন প্রেক্ষাপটে এখন নতুন করে সাবেক সিইসির ওপর দলবদ্ধ এই বিশৃঙ্খলা বা মব তৈরির সাথে দলটি কেন জড়িয়ে পড়লো, সেই আলোচনাও সামনে আসছে।

বিশেষ করে যেখানে গত তিনটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আইনি পদক্ষেপ নিলো এবং সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দলটির নেতাকর্মীরা এমন মব সন্ত্রাসে জড়ালো কেন – তা নিয়ে প্রশ্নও আছে।

দলের মধ্য থেকেই কোনো কোনো মহল এটি উস্কে দিয়েছে কি-না তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। কিংবা এর সাথে দলের বাইরে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না তা নিয়েও কথা বলছেন অনেকে। অর্থাৎ অন্য কোনো গোষ্ঠী বিএনপির নীচের স্তরের কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনায় জড়িয়েছে কি-না সেই আলোচনা হচ্ছে দলের ভেতরে।

মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন যেমন মনে করেন, ‘দেশে একটি অস্থিরতা তৈরির জন্য একটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের পরিকল্পিত মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে মানুষ’।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের দলের যারা এ ঘটনায় জড়িত বলে দেখা যাচ্ছে, তারা নিজ থেকেই এটি ঘটিয়েছে এবং এ ঘটনার সাথে দল হিসেবে বিএনপি বা এর নেতাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

“একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার দায় দল হিসেবে বিএনপির ওপর চাপানোর সুযোগ নেই। আমরা সবসময়ই এ অপসংস্কৃতির নিন্দা করে আসছি। বিভিন্ন পর্যায়ে দলের অনেকের বিরুদ্ধে এ ধরনের মবের কারণে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, ভুয়া নির্বাচন ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ নানা কারণে নূরুল হুদাসহ অনেকের বিরুদ্ধে জনরোষ আছে, কারণ তাদের সম্মিলিত অবদানের কারণেই শেষ পর্যন্ত দেশ বাঁচাতে একটি গণবিপ্লবের দরকার হয়েছে।

“কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা মব সমর্থন করি না। এ ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে আমরা অবশ্যই ডিসিপ্লিনারি ব্যবস্থা নিবো,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন মি. আহমদ।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, এ ঘটনায় বিএনপিকে জড়ানোর কোনো সুযোগই নেই। কারণ মি. হুদাসহ গত তিনটি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপি তার অভিযোগ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছে।

“দল হিসেবে বিএনপি প্রথমে নির্বাচন কমিশনের কাছে গেছে। পরে থানায় গেছে। মব করলে তো আগেই করা যেতো। মি.হুদাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দেওয়া পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু যা ঘটেছে তা সমর্থনযোগ্য নয়। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

গত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিএনপি।
গত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিএনপি।

সরকারের বক্তব্য, দায় কতটা

ঘটনার পর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারে পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

এতে বলা হয়, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এসময় “মব” কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

“সরকার দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। অভিযুক্ত সকল ব্যক্তির বিচার দেশের আইন মেনে হবে এবং বিচারাধীন বিষয় ও ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন,” বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, “অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ। “মব” সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সকলকে চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে”।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বলছেন, মব নিয়ে সরকারের এমন বক্তব্য নতুন কিছু নয়।

“একটি ঘটনাতেও সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? বরং মব সন্ত্রাসের ঘটনাগুলোতে কখনো কখনো এ ধরনের বিবৃতি বা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মৃদু ভৎর্সনা দিয়ে দায় সেরেছে, যা প্রকারান্তরে মব সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করেছে। ফলে এটি এখন সারাদেশে ছড়াচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মি. চৌধুরী বলেন, কেউ অপরাধ করলে সরকার যেমন আইনি পদক্ষেপ নিবে তেমনি একজন অপরাধীও যেন বেআইনি আক্রমণের শিকার না হয়, সেটি নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব।

“কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সেই পথে যায়নি। তারা রুল অ্যান্ড ডিভাইড পলিসি নিয়েছে। তারাই মবের আস্কারা দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো আগ্রহ সরকারের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি,” বলছিলেন তিনি।

মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটনও বলছেন, মবের ঘটনাগুলোর দায় সরকারের।

“মানুষকে হেনস্থা, অসম্মানিত ও শারীরিক নির্যাতনের বৈধতার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এসব ঘটনা চলমান থাকার দায় সরকার এড়াতে পারে না। আইন আদালতকে পাশ কাটিয়ে মব সন্ত্রাস বা আইন নিজের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মি. খান বলেন মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে, কারণ এই অসভ্যতা চলতে পারে না।

ওদিকে আজ গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেছেন, ‘মব জাস্টিস’ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

“তার (নূরুল হুদা)সঙ্গে যেটা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কোনো কিছু থাকলে আমাদের জানাবেন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রপার অ্যাকশন নিবে,” বলেছেন তিনি।

বিবিসি নিউজ বাংলা