উপকৃতা রমণীগণ স্বীয় শিশক্রোড়ে করিয়া রাজপথের এক পাশে দণ্ডায়মান। হইয়া হাপিত্যেশ করিতে লাগিল।
“তাঁহার লোকান্তর গমনে ঢাকার ছোটবড় সকলেই দুঃখিত হইযাছেন, ঘরেই কেবল তাঁহার গুণকীর্তন ও আতিশয়োক্তি বিশ্রুত হইতেছে।…. চিকিৎসা নৈপুণ্যেও স্বভাব মাধুর্যে লোককে বড় বশীভূত করিয়া গিয়াছেন, অস্ত্র চিকিৎসা এবং জ্বর ও প্রতিসারের চিকিৎসায় তাঁহার বিস্তীর্ণ অধিকার ছিল পূর্ব্বে এ দেশীয় লোকে ডাক্তারি চিকিৎসায় অনাস্থা প্রদর্শন করিতেন।
সিম্পসন সাহেবের সুচিকিৎসার প্রভাবে লোকের সেই সংস্কার এতদূর পরিবর্তন হইয়া গিয়াছে যে, ঢাকায় বাঙ্গালী কবিরাজের অন্নসংস্থান হয় না বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। এই ক্ষণ ধনীনির্জন সকলেই ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা করাইয়া যাবেন।
ডা. সিম্পসনের সমাধিলিপি
সিম্পসন সাহেব যখন ঢাকায় আগমন করেন, তখন নিঃস্ব ছিলেন, কিন্তু এই ৬ বৎসর মধ্যে তিনি যেমন যশ উপার্জন করিয়াছেন, অর্থও সেইরূপ উপার্জন করিয়াছেন। তিনি মৃত্যুকালে নগদে জিনিসে ৪ লক্ষের অধিক টাকার সম্পত্তি উইল করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন।
…সিম্পসন সাহেব বর্তমানে লোকের একটা মহা সাহস ছিল। এই ক্ষণ তাঁহার অভাবে লোকের মন অত্যন্ত অস্থির হইয়া উঠিয়াছে….।”
ডা. সিম্পসনের জনপ্রিয়তার একটি বিবরণ পাই পত্রিকায় প্রকাশিত একজনের চিঠি থেকে “অদ্য ৫ পাঁচ ঘটিকার সময় এতনগরস্থ ইংরাজ ও বাঙ্গালী ও আর্মেনী প্রভৃতি বহু সংখ্যক লোক একত্র হওত মহাসমারোহ পূর্ব্বক মৃত সাহেবের সমাধি [নারিন্দা কার্য্য নির্ব্বাহ করিয়াছেন। তাঁহাকে সমাধি স্থানে লইয়া যাইবার সময় অশ্বশকট ও মনুষ্যে রাজপথসমূহ পরিপূর্ণ হয়।
কি বালক কি বৃদ্ধ কি স্ত্রী কি পুরুষ কি ভদ্র সকলেই অনন্তকালে কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনার্থে সমাধি উদ্যানভিমুখে ধাবিত হইতে লাগিল। স্ত্রী লোকের দর্শনার্থে নিতান্ত উৎসুক হইয়া আরদ্ধকর্ম পরিত্যাগ করতঃ সতজ্ঞ নয়নে দ্বিতল ত্রিতলোপরি ধাবিত হইয়া দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল। উপকৃতা রমণীগণ স্বীয় শিশক্রোড়ে করিয়া রাজপথের এক পাশে দণ্ডায়মান। হইয়া হাপিত্যেশ করিতে লাগিল।
(চলবে)
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৫১)