গোপীকান্ত মোহান্তের অমৃতের সন্তান উপন্যাসে দেখা যায় ডোমরা হলো শিকারি এবং চোর, উড়িষ্যার বনাঞ্চলের ডোমদের তিনি এভাবে চিহ্নিত করেছেন।
ডোম
চর্যাপদেও ডোমরা ছিলেন, এখনও আছেন। চর্যাপদেও তাদের অবস্থা যেমন বর্ণিত হয়েছিল, এখনও সে অবস্থার উত্তরণ ঘটেনি। জাতপাতের ইতিহাসে অনেক বদল হয়েছে, ডোমদের ইতিহাস সেরকমই। ডোমদের আমরা অনেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্ত্যজ হিসেবে জানি। আসলে তারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়। এক অর্থে ডোম, ডোমরা, ডোমা, ডোম্বারা, ডমা নিম্নবর্গের, নিম্নবর্ণের।
ডোম
ওয়াইজ লিখেছেন, “যুগের পর যুগ ধরে মনে করা হয় এরা মনুষ্য জাতির অভিশাপ। এদের বাধ্য করা হয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে নোংরা কাজ করতে।” নৃ-তাত্ত্বিকেরা ডোমদের বিষয়ে নানা তত্ত্ব দিয়েছেন। এরা কি দ্রাবিড় না আর্য? আর্য নয়, অনেকে এ বিষয়ে একমত।
তাদের কেউ কেউ দ্রাবিড় মনে করলেও অনেকে মনে করেন দ্রাবিড়-পূর্ব উপজাতিদের বংশধর এরা। অনেকে আবার অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সঙ্গে এদের মিল পেয়েছেন।
এ বিষয়ে ওয়াইজের পর্যবেক্ষণই আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে। “নিঃসন্দেহে এ কথা বলা যায় যে, বিভিন্ন শিকারজীবী দল ও নীচু শ্রেণিকে কোনো বাছ-বিচার না করেই ডোম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এদের মধ্যে কোনো সাধারণ বৈশিষ্ট্য নাই, শুধু নীচু জাত বলেই তাদের ওই নাম।” না হলে চর্যাপদ থেকে এ পর্যন্ত দেখি, শুধু এদেরই কোনো উত্তরণ নেই।
ওয়াইজ তাঁর মন্তব্য প্রমাণে দেখিয়েছেন কীভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে নিম্নবর্গের ও বর্ণের মানুষদের ডোম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি লিখেছেন,ডোমরা ডোম পাটনি বলা হয় ব্রহ্মপুত্রে উপত্যকার মাঝিদের। জেলেদের ও মেথরদের ডোম বলা হয় অযোধ্যায়। আরাকানে প্যাগোডার দেবদাসদের বলা হয় ডোম। অঞ্চলভেদে ডোমরা আবার নামা ভাগে ভাগ হয়ে গেছে।
গোপীকান্ত মোহান্তের অমৃতের সন্তান উপন্যাসে দেখা যায় ডোমরা হলো শিকারি এবং চোর, উড়িষ্যার বনাঞ্চলের ডোমদের তিনি এভাবে চিহ্নিত করেছেন। আসলে সবাই ডোমদের মনে করে ভ্রাম্যমাণ জাতি, জিপসিদের মতো, পেশা চুরি ও শিকার অথবা যে-কাজ কেউ করে না সে-কাজ করবে ডোমরা। ওয়াইজ জানাচ্ছেন, পূর্ববঙ্গের জলাজঙ্গলে এরা শিকার করেন। শহরে মৃতদের সৎকার করেন দেখে এদের বলা হয় মুদা ফরাশ।
(চলবে)