নিজ হাতে বহু পুঁথির চৈনিক ত্রিপিটকে হিউএনচাঙ কর্তৃক অনূদিত অনুলিপি করেন। পঁচাত্তর খানা গ্রন্থ আজও আছে।
চাং-আনের কর্মচারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর হিউ এনচাঙ লোইয়াঙে গিয়ে সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।
সম্রাট তাঁকে সাদরে গ্রহণ করলেন আর বিনা আদেশে দেশ ত্যাগ করবার অপরাধ ক্ষমা করলেন। তার পর দিনকয়েক ধরে প্রত্যহ তাঁকে অন্তঃপুরে নিয়ে গিয়ে তাঁর ভ্রমণকাহিনী শুনলেন। সম্রাট এখন তাঁকে সন্ন্যাসজীবন ত্যাগ করে রাজকার্যে সহায় হতে আমন্ত্রণ করলেন।
অবশ্য হিউ এনচাঙ এতে সম্মত হলেন না। যা হোক্ তাঁর অনুরোধে সম্রাট তাঁকে সংস্কৃত গ্রন্থগুলির অনুবাদ, সংকলন আর অনুলিপি করতে সাহায্য করবার জন্যে জনকতক ভিক্ষু ও গৃহস্থ পণ্ডিত নিযুক্ত করে দিলেন। সম্রাটের অনুরোধে তিনি তাঁর দেখা দেশগুলির একটা বিবরণ লিপিবদ্ধ করলেন।
অবশিষ্ট জীবন হিউ এনচাঙ নানা মঠে বাস করেন। সম্রাট খাইচুঙের ৬৪৯ বা ৬৫০ খৃস্টাব্দে মৃত্যু হয়। তিনি ও তাঁর উত্তরাধিকারী, এই দুই সম্রাটই হিউএনচাঙকে খুব সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। তাঁরা দুইজনেই হিউ এনচাঙের অনুবাদগুলির এক-একটি ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে হিউ এনচাঙ যতদিন বেঁচে ছিলেন, তাঁর প্রধান কাজ ছিল তাঁর আনীত সংস্কৃত গ্রন্থগুলি চীন ভাষায় অনুবাদ করা।
তিনি বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেছিলেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ গ্রন্থ হচ্ছে ২ লক্ষ সংস্কৃত শ্লোকে লেখা প্রজ্ঞাপারমিতা। এখানা তিনি চীন ভাষার ৬০০ অধ্যায়ে ১০২ খণ্ডে অনুবাদ করেন। এই গ্রন্থ শাস্তিতে ও অপেক্ষাকৃত নিরালায় সম্পূর্ণ করবার জন্যে, সম্রাটের অনুমতি নিয়ে তিনি বছর দুই ‘রত্নপুষ্প’ প্রাসাদে ছিলেন।
যোগাচার শাখার আর সর্বাস্তিবাদ শাখার নানা গ্রন্থের উৎকৃষ্ট অনুবাদ ছাড়া একখানা চিকিৎসা শাস্ত্রের বইও তিনি অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর জীবনীকার হুই-লি বলেন, তিনি সর্বশুদ্ধ ১৩৩৫ অধ্যায়ে ৭৫ খানা গ্রন্থের অনুবাদ সম্পূর্ণ করেন। তাছাড়া বহু চিত্র অঙ্কিত করেন ও নিজ হাতে বহু পুঁথির চৈনিক ত্রিপিটকে হিউএনচাঙ কর্তৃক অনূদিত অনুলিপি করেন। পঁচাত্তর খানা গ্রন্থ আজও আছে।
(চলবে)
হিউএনচাঙ (পর্ব-১৬০)