১১:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৬০)

হিউ এনচাঙ শুধু হাতে আসেন নি। কুড়িটি সুসজ্জিত অশ্বে তাঁর আনীত দ্রব্যগুলি জাঁকজমকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল।

বৌদ্ধ ধর্মে যে তাঁর বিদ্বেষ ছিল না একথা বলা বাহুল্য, যদিও অহিংসাত্মক বৌদ্ধধর্মের প্রতি এই যোদ্ধা সম্রাটের আন্তরিক শ্রদ্ধা সম্ভবতঃ ছিল না। আবার, ‘তাও’-উপনিষদকার লাউজে বা বুড়োকর্তার গ্রন্থগুলি চীনা থেকে সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করতে তিনি হিউএনচাঙকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বৌদ্ধ ভিক্ষু হিউএনচাঙ ভিন্নধর্মের পুস্তক অনুবাদ করতে সম্মত হতে পারেন নি।

৬৪৫ খৃস্টাব্দে হিউ এনচাঙ স্বদেশে পৌঁছেন। সা-চাও নগরে পৌঁছে তিনি এক নিবেদনপত্রে সম্রাটকে তাঁর সংবাদ জানালেন। সম্রাট সে সময়ে লো-ইয়াঙের প্রাসাদে ছিলেন। সংবাদ পেয়ে সম্রাট লিয়াঙের রাজ্যকে আদেশ দিলেন যে, উপযুক্ত কর্মচারী পাঠিয়ে ধর্মগুরুকে অভ্যর্থনা করে চাং-আনে আনা হোক।

ধর্মগুরু মনে করলেন যে, সম্রাট হয়তো তাঁকে বিনা অনুমতিতে দেশ ত্যাগ করার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। তাই আর কাল বিলম্ব না করে তিনি খালের পথে নৌকায় যত শীঘ্র সম্ভব চাং-আনে পৌঁছলেন।

হিউ এনচাঙ চাং-আনে পৌঁছেছেন এই সংবাদ মুহূর্তমধ্যে রাষ্ট্র হওয়ায় নগরের সমস্ত লোক তাঁকে দেখতে এল।খালের ধারে এত ভিড় হল যে, তিনি সে রাত্রি নামতেই পারলেন না।

পরদিন সমস্ত নগরে ধূম লেগে গেল। এ রকম আশ্চর্য ভ্রমণ আর এ রকম আশ্চর্য ভ্রমণকারী কেউ কখন দেখেওনি, শোনেওনি। স্বয়ং সম্রাট, তাঁর সভাসদরা, রাজকর্মচারীরা, বণিকরা, সাধারণ লোক, সকলেই এই উৎসবে যোগ দিলেন। এমন কি সেদিন আকাশও নির্মল মেঘমুক্ত ছিল। রাস্তায় পতাকা, বাদ্য ইত্যাদি নিয়ে অসংখ্য লোকের ভিড় হল।

তাছাড়া হিউ এনচাঙ শুধু হাতে আসেন নি। কুড়িটি সুসজ্জিত অশ্বে তাঁর আনীত দ্রব্যগুলি জাঁকজমকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল।
হিউএনচাঙ এই জিনিসগুলি ভারতবর্ষ থেকে এনেছিলেন-

১ তথাগতের দেহাবশেষ-১৫০ খণ্ড;

২ মগধের প্রাবোধি পর্বতের গুহায় বুদ্ধের যে ছায়া ছিল, সেই ছায়ার অনুকরণে প্রস্তুত একটি সোনার বুদ্ধমূর্তি। এটি সারনাথে ধর্মচক্র-প্রবর্তনের মূর্তি। তা ছাড়া এর জন্যে ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি উঁচু একটি ঝকঝকে বেদী:

৩ কৌশম্বীরাজ উদয়ন নির্মিত বৃদ্ধমূর্তির অনুকরণে চন্দনকাঠে নির্মিত বুদ্ধমূর্তি আর তার জন্যে ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি উঁচু বেদী;

৪ ও ত্রয়স্ত্রিংশং, স্বর্গ থেকে সঙ্কাশে অবতরণ করছেন এই ভাবের এক বুদ্ধমূর্তি। তার জন্যে ২ ফুট ৯ ইঞ্চি উঁচু ঝক্ককে বেদী;

৫ মগধের গৃত্রকূট পর্বতে সদ্ধর্মপুণ্ডরিক ও অন্যান্য সূত্রের উপদেশ দিচ্ছেন এই ভাবের একটা রুপার বুদ্ধমূতি ও তার একটি স্বচ্ছ ৪ ফুট
উঁচু বেদী:

৬ নগবহারে বুদ্ধ যে ছায়া রেখে গিয়েছিলেন সেই ছায়ার অনুকরণে নির্মিত বৃদ্ধমূর্তি। ৩ ফুট ৫ ইঞ্চি উঁচু বেদী।

৭ বৈশালীতে ভিক্ষায় বার হয়েছেন এই ভাবের একটা চন্দন কাঠের বুদ্ধমূর্তি। ১ ফুট ৩ ইঞ্চি উঁচু স্বচ্ছ বেদী;

এ ছাড়া গ্রন্থবাজি-মহাযানের ২২৪ খানা সূত্র, ১৯২ খানা শাস্ত্র, হীনযানের সূত্র, বিনয় ও শাস্ত্র ১৪ খানা, সম্মতিয় শাখার গ্রন্থ ১৫ খানা, মহাসাঙ্গিক শাখার ১৫ খানা, মহিশাসক শাখার ২২ খানা, সবাস্তিবাদিন শাখার ৬৭ খানা, কাশাপিয় শাখার ১৭ থানা, ধর্মগুপ্ত শাখার ৪২ খানা গ্রন্থ, হেতুবিস্তাশাস্ত্রের ৩৬ খানা পুঁথি, শব্দবিদ্যাশাস্ত্রের ১৩ খানা; মোট ৬৫৭ খানা গ্রন্থ।

(চলবে)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৯)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৯)

 

জনপ্রিয় সংবাদ

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৬০)

০৯:০০:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫

হিউ এনচাঙ শুধু হাতে আসেন নি। কুড়িটি সুসজ্জিত অশ্বে তাঁর আনীত দ্রব্যগুলি জাঁকজমকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল।

বৌদ্ধ ধর্মে যে তাঁর বিদ্বেষ ছিল না একথা বলা বাহুল্য, যদিও অহিংসাত্মক বৌদ্ধধর্মের প্রতি এই যোদ্ধা সম্রাটের আন্তরিক শ্রদ্ধা সম্ভবতঃ ছিল না। আবার, ‘তাও’-উপনিষদকার লাউজে বা বুড়োকর্তার গ্রন্থগুলি চীনা থেকে সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করতে তিনি হিউএনচাঙকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বৌদ্ধ ভিক্ষু হিউএনচাঙ ভিন্নধর্মের পুস্তক অনুবাদ করতে সম্মত হতে পারেন নি।

৬৪৫ খৃস্টাব্দে হিউ এনচাঙ স্বদেশে পৌঁছেন। সা-চাও নগরে পৌঁছে তিনি এক নিবেদনপত্রে সম্রাটকে তাঁর সংবাদ জানালেন। সম্রাট সে সময়ে লো-ইয়াঙের প্রাসাদে ছিলেন। সংবাদ পেয়ে সম্রাট লিয়াঙের রাজ্যকে আদেশ দিলেন যে, উপযুক্ত কর্মচারী পাঠিয়ে ধর্মগুরুকে অভ্যর্থনা করে চাং-আনে আনা হোক।

ধর্মগুরু মনে করলেন যে, সম্রাট হয়তো তাঁকে বিনা অনুমতিতে দেশ ত্যাগ করার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। তাই আর কাল বিলম্ব না করে তিনি খালের পথে নৌকায় যত শীঘ্র সম্ভব চাং-আনে পৌঁছলেন।

হিউ এনচাঙ চাং-আনে পৌঁছেছেন এই সংবাদ মুহূর্তমধ্যে রাষ্ট্র হওয়ায় নগরের সমস্ত লোক তাঁকে দেখতে এল।খালের ধারে এত ভিড় হল যে, তিনি সে রাত্রি নামতেই পারলেন না।

পরদিন সমস্ত নগরে ধূম লেগে গেল। এ রকম আশ্চর্য ভ্রমণ আর এ রকম আশ্চর্য ভ্রমণকারী কেউ কখন দেখেওনি, শোনেওনি। স্বয়ং সম্রাট, তাঁর সভাসদরা, রাজকর্মচারীরা, বণিকরা, সাধারণ লোক, সকলেই এই উৎসবে যোগ দিলেন। এমন কি সেদিন আকাশও নির্মল মেঘমুক্ত ছিল। রাস্তায় পতাকা, বাদ্য ইত্যাদি নিয়ে অসংখ্য লোকের ভিড় হল।

তাছাড়া হিউ এনচাঙ শুধু হাতে আসেন নি। কুড়িটি সুসজ্জিত অশ্বে তাঁর আনীত দ্রব্যগুলি জাঁকজমকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল।
হিউএনচাঙ এই জিনিসগুলি ভারতবর্ষ থেকে এনেছিলেন-

১ তথাগতের দেহাবশেষ-১৫০ খণ্ড;

২ মগধের প্রাবোধি পর্বতের গুহায় বুদ্ধের যে ছায়া ছিল, সেই ছায়ার অনুকরণে প্রস্তুত একটি সোনার বুদ্ধমূর্তি। এটি সারনাথে ধর্মচক্র-প্রবর্তনের মূর্তি। তা ছাড়া এর জন্যে ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি উঁচু একটি ঝকঝকে বেদী:

৩ কৌশম্বীরাজ উদয়ন নির্মিত বৃদ্ধমূর্তির অনুকরণে চন্দনকাঠে নির্মিত বুদ্ধমূর্তি আর তার জন্যে ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি উঁচু বেদী;

৪ ও ত্রয়স্ত্রিংশং, স্বর্গ থেকে সঙ্কাশে অবতরণ করছেন এই ভাবের এক বুদ্ধমূর্তি। তার জন্যে ২ ফুট ৯ ইঞ্চি উঁচু ঝক্ককে বেদী;

৫ মগধের গৃত্রকূট পর্বতে সদ্ধর্মপুণ্ডরিক ও অন্যান্য সূত্রের উপদেশ দিচ্ছেন এই ভাবের একটা রুপার বুদ্ধমূতি ও তার একটি স্বচ্ছ ৪ ফুট
উঁচু বেদী:

৬ নগবহারে বুদ্ধ যে ছায়া রেখে গিয়েছিলেন সেই ছায়ার অনুকরণে নির্মিত বৃদ্ধমূর্তি। ৩ ফুট ৫ ইঞ্চি উঁচু বেদী।

৭ বৈশালীতে ভিক্ষায় বার হয়েছেন এই ভাবের একটা চন্দন কাঠের বুদ্ধমূর্তি। ১ ফুট ৩ ইঞ্চি উঁচু স্বচ্ছ বেদী;

এ ছাড়া গ্রন্থবাজি-মহাযানের ২২৪ খানা সূত্র, ১৯২ খানা শাস্ত্র, হীনযানের সূত্র, বিনয় ও শাস্ত্র ১৪ খানা, সম্মতিয় শাখার গ্রন্থ ১৫ খানা, মহাসাঙ্গিক শাখার ১৫ খানা, মহিশাসক শাখার ২২ খানা, সবাস্তিবাদিন শাখার ৬৭ খানা, কাশাপিয় শাখার ১৭ থানা, ধর্মগুপ্ত শাখার ৪২ খানা গ্রন্থ, হেতুবিস্তাশাস্ত্রের ৩৬ খানা পুঁথি, শব্দবিদ্যাশাস্ত্রের ১৩ খানা; মোট ৬৫৭ খানা গ্রন্থ।

(চলবে)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৯)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৯)