পিতামাতার প্রতি তাঁর সভক্তি ব্যবহারের কাহিনী আজও প্রচলিত আছে। মন্ত্রীরা নির্ভীক ভাবে তাঁর রাজকার্যের সমালোচনা করতেন।
স্বদেশে-অবশিষ্ট জীবন
ভারতবর্ষের সম্রাট হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল (৬০৬-৬৪৬) আর তাঁর সমসাময়িক, থাঙরাজবংশের স্থাপয়িতা চীনসম্রাট থাইচুঙের রাজত্ব-কাল (৬২৬-৬৪৯) ভারতবর্ষ ও চীন, এই দুই দেশের ইতিহাসে মহাগৌরবের ও সাংস্কৃতিক অভ্যুদয়ের যুগ। এই দুই পরাক্রমশালী সম্রাটই স্ব স্ব দেশ বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে উদ্ধার করে ও আভ্যন্তরীণ শাসনকার্যের সুব্যবস্থা করে দেশময় শান্তিস্থাপন করতে সক্ষম হন। দুজনেই বিশিষ্ট সংস্কৃতিমান লোক ছিলেন। হর্ষবর্ধনের বিষয় আগেই বলেছি। তাঁর নিজের লেখা তিনখানা নাটক আজও আছে।
থাইচুঙ
ধর্মবিষয়ে তিনি নিজেকে শৈব বলে পরিচয় দিয়েছেন। শেষজীবনে হয়তো বৌদ্ধধর্মের দিকেই বেশি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ধর্মেই যে তাঁর বিদ্বেষ ছিল না, তাতে সন্দেহ নেই।
থাংশের রাজত্বকাল চীনের ইতিহাসে এক মহা গৌরবময় যুগ। আজ পর্যন্ত চীনবাসীরা তাঁদের দেশকে ‘খাঙের দেশ’ বলেই উল্লেখ করেন। চীনের রূপকর্ম তাঁদের সময়েই উন্নতির পরাকাষ্ঠায় উঠেছিল।
থাইচুঙ নিজে বিদ্যার প্রসারে উৎসাহী ছিলেন। চীন ভাষায় তাঁর নিজের লিখিত গ্রন্থ আজও আছে। বিশেষতঃ জ্যোতিষ শাস্ত্রে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। তিনি নিজে অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতে ভালোবাসতেন। পিতামাতার প্রতি তাঁর সভক্তি ব্যবহারের কাহিনী আজও প্রচলিত আছে। মন্ত্রীরা নির্ভীক ভাবে তাঁর রাজকার্যের সমালোচনা করতেন।
তাঁর নিজের বিশেষ কোনো ধর্মমতের প্রতি পক্ষপাতিত্ব ছিল না। ৬২৮ খৃস্টাব্দে, মহম্মদের জীবিতকালে, মহম্মদের প্রেরিত কতকগুলি আরব মুসলমান্ধর্ম প্রচার করতে তাঁর কাছে আসে। তিনি তাদের কথাবার্তা গুনে ধর্মপ্রচার করবার আর মসজিদ নির্মাণ করবার অনুমতি দিলেন। সে মসজিদ আজও আছে।
৬৩৫ খৃস্টাব্দে নেস্টরীয় সম্প্রদায়ভুক্ত খৃস্টান মিশনারীরা ধর্মপ্রচার করতে তাঁর কাছে আসে। তাদের কথাও তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন আর তাদের ধর্মপুস্তক চীন ভাষায় অনুবাদ করিয়ে পড়লেন। তার পর তাদেরও ধর্মপ্রচার করবার অনুমতি দিলেন।
(চলবে)
হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৮)