০৪:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সাভার–কেরানীগঞ্জসহ শিল্পাঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে ভালুকায় সহিংস ঘটনার পর মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন গাজীপুরে শীত বেড়ে যাওয়ায় অসহায়দের জন্য জরুরি সহায়তা কক্সবাজার–হাতিয়া সমুদ্রপথে ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া, নৌ চলাচলে সতর্কতা ময়মনসিংহে তীব্র শীত ও কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত গ্রাহক বৃদ্ধি কমায় বড় বাজেটের সিরিজ নিয়ে নতুন হিসাব কষছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো শীত ও জলবায়ু চাপে শহরমুখী হচ্ছে বন্যপ্রাণী, বাড়ছে মানব-প্রাণী সংস্পর্শ চরম শীতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে, বৈশ্বিক জ্বালানি অবকাঠামোর দুর্বলতা প্রকাশ সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর লাইফ এন্ডাওমেন্ট উদ্যোগে গুরুতর রোগীদের নতুন আশার আলো, একশ চল্লিশ রোগীর চিকিৎসায় টেকসই অর্থায়ন শুরু

বাংলাদেশে আবারও বাড়ছে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ

২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসে বাংলাদেশে আবারও আলোচনায় এসেছে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস। ঢাকায় জানুয়ারি থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৩৭ জন। এর আগের বছর, ২০২৪ সালে জ্বর নিয়ে পরীক্ষা করানো ৩৯৪ জনের মধ্যে ১৩৮ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছিল, যা মোট পরীক্ষিতদের প্রায় ৩৫ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ১৪.৫ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল এবং তারা গড়ে ৬ দিন করে হাসপাতালে ছিলেন।

সহ-সংক্রমণ হিসেবে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বর্তমানে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকলেও অনেক ডেঙ্গু রোগীর শরীরেও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এটি ‘সহ-সংক্রমণ’ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের ৯৮.৬ শতাংশই ঢাকায় বসবাস করেন এবং অধিকাংশই ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের পুরুষ। ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রায় ১৩,৮০০ জন মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তবে এবারের সংক্রমণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম।

চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ: ব্যথা ও অস্বস্তির দীর্ঘস্থায়ী ছায়া

চিকুনগুনিয়ার প্রধান উপসর্গ হলো হঠাৎ করে আসা উচ্চমাত্রার জ্বর এবং তীব্র গাঁটে ব্যথা। এর সঙ্গে থাকতে পারে মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা ও ত্বকে র‍্যাশ। আক্রান্তদের প্রায় সবাই তীব্র জয়েন্ট পেইনের কথা জানান, যা চলাফেরা করতেও অসুবিধা তৈরি করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এই ব্যথা কয়েক মাস—এমনকি এক বছরের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হতে পারে। তখন একে ‘দীর্ঘস্থায়ী চিকুনগুনিয়া’ বলা হয় এবং এটি রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

জটিলতা: শিশু ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্নদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি

চিকুনগুনিয়া শুধুমাত্র গাঁটে ব্যথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কিছু ক্ষেত্রে চোখে প্রদাহ, মানসিক বিভ্রান্তি এবং বিরল হলেও গুরুতর স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল—তাদের জন্য এই ভাইরাস অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে, গর্ভবতী মায়ের শরীর থেকে যদি নবজাতকের দেহে সংক্রমণ ঘটে, তবে মস্তিষ্কে প্রদাহ, পাণ্ডু বা জন্ডিস এবং হৃদযন্ত্রের জটিলতা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

প্রতিরোধে চাই ব্যক্তিগত সচেতনতা ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা

এই রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজন ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ। ব্যক্তিগতভাবে মশার দংশন থেকে রক্ষা পেতে মশারি ব্যবহার, শরীর ঢেকে রাখা এবং মশা প্রতিরোধী স্প্রে লাগানো জরুরি। পাশাপাশি, আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি অপসারণ করা এবং এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারও শরীরে জ্বর ও গাঁটে ব্যথার উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

চিকিৎসা: উপসর্গভিত্তিক ব্যবস্থাপনাই মূল ভরসা

চিকুনগুনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। তাই চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে উপসর্গভিত্তিক। জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল বা ন্যাপ্রক্সেন ব্যবহৃত হয়। তবে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকায় অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলাই উত্তম। দীর্ঘমেয়াদি আর্থ্রাইটিস দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত ওষুধ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সতর্কতা ও প্রস্তুতিই মহামারি ঠেকানোর উপায়

সব মিলিয়ে, চিকুনগুনিয়া বর্তমানে ডেঙ্গুর তুলনায় কম আলোচনায় থাকলেও এটি কোনোভাবেই অবহেলার রোগ নয়। দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গের কারণে রোগটি অনেক সময় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই মশা নিয়ন্ত্রণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ নিশ্চিত করাই এই রোগ প্রতিরোধের মূল কৌশল। ঢাকায় এখনই স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে এই ভাইরাস পুনরায় মহামারির রূপ ধারণ করতে না পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সাভার–কেরানীগঞ্জসহ শিল্পাঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে

বাংলাদেশে আবারও বাড়ছে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ

০৬:০০:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসে বাংলাদেশে আবারও আলোচনায় এসেছে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস। ঢাকায় জানুয়ারি থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৩৭ জন। এর আগের বছর, ২০২৪ সালে জ্বর নিয়ে পরীক্ষা করানো ৩৯৪ জনের মধ্যে ১৩৮ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছিল, যা মোট পরীক্ষিতদের প্রায় ৩৫ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ১৪.৫ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল এবং তারা গড়ে ৬ দিন করে হাসপাতালে ছিলেন।

সহ-সংক্রমণ হিসেবে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বর্তমানে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকলেও অনেক ডেঙ্গু রোগীর শরীরেও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এটি ‘সহ-সংক্রমণ’ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের ৯৮.৬ শতাংশই ঢাকায় বসবাস করেন এবং অধিকাংশই ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের পুরুষ। ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রায় ১৩,৮০০ জন মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তবে এবারের সংক্রমণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম।

চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ: ব্যথা ও অস্বস্তির দীর্ঘস্থায়ী ছায়া

চিকুনগুনিয়ার প্রধান উপসর্গ হলো হঠাৎ করে আসা উচ্চমাত্রার জ্বর এবং তীব্র গাঁটে ব্যথা। এর সঙ্গে থাকতে পারে মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা ও ত্বকে র‍্যাশ। আক্রান্তদের প্রায় সবাই তীব্র জয়েন্ট পেইনের কথা জানান, যা চলাফেরা করতেও অসুবিধা তৈরি করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এই ব্যথা কয়েক মাস—এমনকি এক বছরের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হতে পারে। তখন একে ‘দীর্ঘস্থায়ী চিকুনগুনিয়া’ বলা হয় এবং এটি রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

জটিলতা: শিশু ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্নদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি

চিকুনগুনিয়া শুধুমাত্র গাঁটে ব্যথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কিছু ক্ষেত্রে চোখে প্রদাহ, মানসিক বিভ্রান্তি এবং বিরল হলেও গুরুতর স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল—তাদের জন্য এই ভাইরাস অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে, গর্ভবতী মায়ের শরীর থেকে যদি নবজাতকের দেহে সংক্রমণ ঘটে, তবে মস্তিষ্কে প্রদাহ, পাণ্ডু বা জন্ডিস এবং হৃদযন্ত্রের জটিলতা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

প্রতিরোধে চাই ব্যক্তিগত সচেতনতা ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা

এই রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজন ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ। ব্যক্তিগতভাবে মশার দংশন থেকে রক্ষা পেতে মশারি ব্যবহার, শরীর ঢেকে রাখা এবং মশা প্রতিরোধী স্প্রে লাগানো জরুরি। পাশাপাশি, আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি অপসারণ করা এবং এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারও শরীরে জ্বর ও গাঁটে ব্যথার উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

চিকিৎসা: উপসর্গভিত্তিক ব্যবস্থাপনাই মূল ভরসা

চিকুনগুনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। তাই চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে উপসর্গভিত্তিক। জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল বা ন্যাপ্রক্সেন ব্যবহৃত হয়। তবে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকায় অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলাই উত্তম। দীর্ঘমেয়াদি আর্থ্রাইটিস দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত ওষুধ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সতর্কতা ও প্রস্তুতিই মহামারি ঠেকানোর উপায়

সব মিলিয়ে, চিকুনগুনিয়া বর্তমানে ডেঙ্গুর তুলনায় কম আলোচনায় থাকলেও এটি কোনোভাবেই অবহেলার রোগ নয়। দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গের কারণে রোগটি অনেক সময় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই মশা নিয়ন্ত্রণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ নিশ্চিত করাই এই রোগ প্রতিরোধের মূল কৌশল। ঢাকায় এখনই স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে এই ভাইরাস পুনরায় মহামারির রূপ ধারণ করতে না পারে।