০৯:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

বিটরুট: স্বাস্থ্যকর এক প্রাকৃতিক উপকারের উৎস

এক নজরে পরিচিতি

বিটরুট বা বিট মূলত এক ধরনের শাকসবজি, যা মাটির নিচে জন্মায় এবং যার রঙ গাঢ় লাল বা বেগুনি। ইংরেজিতে একে বলা হয় “Beetroot” এবং এটি Beta vulgaris প্রজাতির উদ্ভিদ। বিট শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকেও এটি এক অসাধারণ সবজি। বহু যুগ ধরেই বিট ব্যবহৃত হয়ে আসছে ওষুধি গুণের কারণে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান যুগে বিট ছিল ভেষজ চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও বিটের এই উপকারিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পুষ্টিগুণ: ক্ষুদ্র আকারে বিপুল শক্তি

বিটরুটে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ক্যালরিতে কম হলেও এতে রয়েছে ফাইবার, ফলেট (ভিটামিন বি৯), পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি। বিটে থাকা বিটালেন ও অ্যান্থোসায়ানিন নামক প্রাকৃতিক রঞ্জক উপাদান শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং কোষের ক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখে। বিটের ফাইবার হজমে সহায়তা করে, আর ফলেট ও আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। তাই বিটরুটকে বলা হয় ‘পুষ্টির ভান্ডার’।

Raw Or Boiled? Best Way To Consume Beetroots

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিটরুটের ভূমিকা

বিটরুটে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি শ্বেত রক্তকণিকার গঠনে সহায়তা করে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। নিয়মিত বিট খেলে শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান দূর হয় এবং ঠান্ডা, সর্দি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো মৌসুমি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিটরুট কোষগুলোর কর্মক্ষমতা সচল রাখে এবং ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

নিয়মিত বিটরুট খেলে প্রতিরোধযোগ্য কিছু রোগ

বিটরুট শুধু রোগ প্রতিরোধেই নয়, দীর্ঘমেয়াদে কিছু মারাত্মক অসুস্থতা প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। যেমন:

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

বিটরুটে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেট শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়ে রক্তনালিকে প্রশস্ত করে এবং রক্তচাপ হ্রাসে সহায়তা করে। এটি উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এক প্রাকৃতিক বিকল্প।

হৃদরোগ প্রতিরোধ

বিট কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে রক্তসঞ্চালন উন্নত করে। এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

বিটে থাকা বিটালেন উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং টিউমারের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিশেষ করে কোলন ও স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি উপকারী বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

লিভার পরিষ্কার রাখে

বিটে থাকা বিটাইন নামক উপাদান লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে এবং চর্বিযুক্ত লিভারের সমস্যা হ্রাস করে।

হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ

বিটের ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

বিটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতেও সহায়তা করে।

অন্যান্য উপকারিতা

বিটরুট ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে বলিরেখা কমায় এবং প্রাকৃতিক লাবণ্য ফিরিয়ে আনে। এটি মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। বিটে আয়রন থাকায় রক্তশূন্যতা দূর হয় এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ক্রীড়াবিদদের জন্য এটি প্রাকৃতিক ‘এনার্জি বুস্টার’ হিসেবে কাজ করে।

বিটরুট খাওয়ার উপায়

4-Ingredient Sweet Beetroot Juice (Easy & Healthy Recipe)

বিট কাঁচা খাওয়া সবচেয়ে উপকারী হলেও, আপনি এটি বিভিন্নভাবে গ্রহণ করতে পারেন। বিট স্যালাড, বিটের জুস, স্যুপ বা স্মুদি—সবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। অনেকে রান্না করা তরকারিতেও বিট ব্যবহার করেন। তবে যাদের কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত বিট খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এতে থাকা অক্সালেট কিডনিতে পাথর গঠনের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ

বিটরুট কেবল একটি সবজি নয়—এটি একটি প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিদের উচিত প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিটরুট অন্তর্ভুক্ত করা। এটি শরীরকে সতেজ, রোগমুক্ত ও প্রাণবন্ত রাখে। আধুনিক জীবনের দুশ্চিন্তা, দূষণ ও নানাবিধ রোগের ভিড়ে বিট হতে পারে সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকরী সঙ্গী।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এক গ্লাস বিটের রস কিংবা এক কাপ বিট স্যালাড রাখুন—স্বাস্থ্য থাকবে নিয়ন্ত্রণে, ভবিষ্যতের অসুখ বলবে, ‘বিদায়’!

বিটরুট: স্বাস্থ্যকর এক প্রাকৃতিক উপকারের উৎস

০৮:৫১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

এক নজরে পরিচিতি

বিটরুট বা বিট মূলত এক ধরনের শাকসবজি, যা মাটির নিচে জন্মায় এবং যার রঙ গাঢ় লাল বা বেগুনি। ইংরেজিতে একে বলা হয় “Beetroot” এবং এটি Beta vulgaris প্রজাতির উদ্ভিদ। বিট শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকেও এটি এক অসাধারণ সবজি। বহু যুগ ধরেই বিট ব্যবহৃত হয়ে আসছে ওষুধি গুণের কারণে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান যুগে বিট ছিল ভেষজ চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও বিটের এই উপকারিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পুষ্টিগুণ: ক্ষুদ্র আকারে বিপুল শক্তি

বিটরুটে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ক্যালরিতে কম হলেও এতে রয়েছে ফাইবার, ফলেট (ভিটামিন বি৯), পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি। বিটে থাকা বিটালেন ও অ্যান্থোসায়ানিন নামক প্রাকৃতিক রঞ্জক উপাদান শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং কোষের ক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখে। বিটের ফাইবার হজমে সহায়তা করে, আর ফলেট ও আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। তাই বিটরুটকে বলা হয় ‘পুষ্টির ভান্ডার’।

Raw Or Boiled? Best Way To Consume Beetroots

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিটরুটের ভূমিকা

বিটরুটে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি শ্বেত রক্তকণিকার গঠনে সহায়তা করে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। নিয়মিত বিট খেলে শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান দূর হয় এবং ঠান্ডা, সর্দি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো মৌসুমি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিটরুট কোষগুলোর কর্মক্ষমতা সচল রাখে এবং ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

নিয়মিত বিটরুট খেলে প্রতিরোধযোগ্য কিছু রোগ

বিটরুট শুধু রোগ প্রতিরোধেই নয়, দীর্ঘমেয়াদে কিছু মারাত্মক অসুস্থতা প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। যেমন:

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

বিটরুটে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেট শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়ে রক্তনালিকে প্রশস্ত করে এবং রক্তচাপ হ্রাসে সহায়তা করে। এটি উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এক প্রাকৃতিক বিকল্প।

হৃদরোগ প্রতিরোধ

বিট কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে রক্তসঞ্চালন উন্নত করে। এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

বিটে থাকা বিটালেন উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং টিউমারের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিশেষ করে কোলন ও স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি উপকারী বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

লিভার পরিষ্কার রাখে

বিটে থাকা বিটাইন নামক উপাদান লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে এবং চর্বিযুক্ত লিভারের সমস্যা হ্রাস করে।

হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ

বিটের ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

বিটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতেও সহায়তা করে।

অন্যান্য উপকারিতা

বিটরুট ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে বলিরেখা কমায় এবং প্রাকৃতিক লাবণ্য ফিরিয়ে আনে। এটি মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। বিটে আয়রন থাকায় রক্তশূন্যতা দূর হয় এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ক্রীড়াবিদদের জন্য এটি প্রাকৃতিক ‘এনার্জি বুস্টার’ হিসেবে কাজ করে।

বিটরুট খাওয়ার উপায়

4-Ingredient Sweet Beetroot Juice (Easy & Healthy Recipe)

বিট কাঁচা খাওয়া সবচেয়ে উপকারী হলেও, আপনি এটি বিভিন্নভাবে গ্রহণ করতে পারেন। বিট স্যালাড, বিটের জুস, স্যুপ বা স্মুদি—সবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। অনেকে রান্না করা তরকারিতেও বিট ব্যবহার করেন। তবে যাদের কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত বিট খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এতে থাকা অক্সালেট কিডনিতে পাথর গঠনের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ

বিটরুট কেবল একটি সবজি নয়—এটি একটি প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিদের উচিত প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিটরুট অন্তর্ভুক্ত করা। এটি শরীরকে সতেজ, রোগমুক্ত ও প্রাণবন্ত রাখে। আধুনিক জীবনের দুশ্চিন্তা, দূষণ ও নানাবিধ রোগের ভিড়ে বিট হতে পারে সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকরী সঙ্গী।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এক গ্লাস বিটের রস কিংবা এক কাপ বিট স্যালাড রাখুন—স্বাস্থ্য থাকবে নিয়ন্ত্রণে, ভবিষ্যতের অসুখ বলবে, ‘বিদায়’!