বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেল ৩০ জন কিশোরী। ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনগত সুরক্ষা কর্মসূচির (সেলপ) উদ্যোগ ‘স্বপ্নসারথি’-এর সদস্য এই কিশোরীরা আজ বৃহস্পতিবার, ২১শে আগস্ট ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেছে। প্রতিকূল বাস্তবতার মধ্যেও এই কিশোরীদের স্বপ্ন ভবিষ্যতে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার। প্রধান বিচারপতির এই আমন্ত্রণ তাদের জন্য দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে জানার এক অনন্য সুযোগ করে দিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি কিশোরীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মেয়েরা এখন ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লেখাপড়া করছে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে ঢুকছে। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য দশ ভাগ কোটা সংরক্ষিত আছে। তবে আমি যখন ৭ বছর জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে কাজ করেছি, সেখানে কখনোই মেয়েদের এই দশ ভাগ কোটা ব্যবহার করতে হয়নি। নিজেদের যোগ্যতাতেই তারা এটি অর্জন করেছে, অনেক সময় ছেলেদেরকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাল্য বিবাহের অবসান ঘটাতে হবে। এটি খুবই দু:খজনক যে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আইন এবং নানা রকম মনিটরিং থাকা সত্ত্বেও সমাজ ব্যবস্থা আইনের সঙ্গে গতি রেখে চলতে পারছে না। এটি প্রতিরোধে নারী-পুরুষ সকলের সচেতনতার পাশাপাশি নারীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের প্রয়োজন।

আইনের কিছু মূল বিষয় এবং সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো স্কুল পর্যায়ে পাঠ্যক্রমে যুক্ত করার প্রস্তাব রেখে তিনি বলেন, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা কোনো ক্ষেত্রেই মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকা উচিত নয়। মানুষে মানুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। আমাদের সংবিধান সেটাই শেখায়।
আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, ভবিষ্যতে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এই কিশোরীরা যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তা দারুণ আশাব্যঞ্জক। ভবিষ্যতে বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হওয়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী প্রজন্ম এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, এই কিশোরীদের ‘স্বপ্নসারথি’ বলার কারণ হচ্ছে এই উদ্যোগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য সারা দেশে কিশোরীদের সংগঠিত করে তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা, যেন তারা নিজেদের স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ দিতে পারে।
তিনি বলেন, সারা দেশে ৬০ হাজার ‘স্বপ্নসারথি’ সদস্যের মধ্যে প্রায় এক হাজার কিশোরীর স্বপ্ন ভবিষ্যতে আইনজীবী বা বিচারক হওয়া। তাদের মধ্য থেকে ৩০ জন আজকে এখানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের জীবনের এক অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট পরিদর্শন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের এই অসাধারণ সুযোগটি তাদের ভবিষ্যতে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ব্র্যাকের পক্ষ থেকে সেলপ ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি (জিজেডি) কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শাশ্বতী বিপ্লব এবং লিগ্যাল এইড এন্ড পলিসি এডভোকেসি লিড এ টি এম মোরশেদ আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ‘স্বপ্নসারথি’ কিশোরীদের লেখা চিঠি ও তাদের আঁকা ছবির একটি ‘স্ক্র্যাপবুক’ প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকেও কিশোরীদের উপহার দেওয়া হয়। পরে কিশোরীদের সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম ঘুরে দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ই জুলাই ২০২৫ তারিখে ব্র্যাক আয়োজিত ‘যথাসময়ে বিচার নিশ্চিত করতে পারিবারিক আদালতের পদ্ধতিগত জটিলতা নিরসন’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সে সময় তিনি এই কিশোরীদের সুপ্রিম কোর্ট পরিদর্শনের পরামর্শ দেন। প্রধান বিচারপতির এ উদ্যোগ আইনি শিক্ষা ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি কিশোরীদের আগ্রহ সৃষ্টি করবে বলে আয়োজকরা আশা করছেন।
সুপ্রিম কোর্ট পরিদর্শনের আগে এই কিশোরীরা মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অবস্থিত ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ নলেজ হাব’ পরিদর্শন করে, যেখানে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতার জীবন ও কর্ম তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে একটি শেয়ারিং সেশনে এই কিশোরীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো তুলে ধরে।
কিশোরীদের দক্ষতা বাড়াতে এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘স্বপ্নসারথি’। ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির (সেলপ) এ উদ্যোগের আওতায় বর্তমানে দেশের ৩১ জেলার ২ হাজার ৪০০ গ্রামে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৬০ হাজার কিশোরী কাজ করছে। এই উদ্যোগটি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কিশোরীদের সচেতন করার পাশাপাশি তাদের শিক্ষা, দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের স্বপ্নপূরণে সহায়তা করছে এবং ভবিষ্যত কর্মজীবনের প্রবেশের জন্য প্রস্তুত করছে।

সারাক্ষণ ডেস্ক 



















