প্রদর্শনীর ভিড় ও জনপ্রিয়তা
প্যারিসে অভিবাসন ইতিহাসের জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠিত “বানলিউ শেরি” বা “প্রিয় উপশহর” শিরোনামের প্রদর্শনীতে ২০০টি ফটোগ্রাফ, চিত্রকর্ম ও ইনস্টলেশন স্থান পায়। প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি হয়েছে, যা ২০০৭ সালে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে সফল আয়োজন। এর দর্শনার্থীদের প্রায় ৪০ শতাংশই ছিল ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ, যাদের অনেকে এসেছিল শহরতলি থেকে।
তরুণদের অনুভূতি
তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা নিজেদের গল্পকে এখানে খুঁজে পেয়েছেন। ১৮ বছর বয়সী থিওডিন মাসেংগো বললেন, “আমরা সত্যিই নিজেদের চিনতে পেরেছি প্রদর্শনীতে।” অন্যদিকে ২৫ বছর বয়সী ফাইদা লাহের এটিকে নিজের শৈশবের সঙ্গে পুনঃসংযোগের মতো অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখেছেন। প্রদর্শনীতে একটি অংশে দর্শনার্থীরা তাদের স্বপ্নের শহরতলির কথা লিখে দেয়ালে টাঙিয়েছেন। অধিকাংশের আশা ছিল কম সহিংসতা, বর্ণবাদহীন সমাজ ও সমতার পরিবেশ।
শিল্পকলা ও ইতিহাসের মিশ্রণ
প্রদর্শনীটি সাজানো হয়েছিল ইতিহাস ও সমকালীন জীবনের প্রতিচ্ছবির সমন্বয়ে। ক্লদ মনে আঁকা আর্জেন্তেইল এলাকার চিত্রকর্ম রাখা হয়েছিল এক পাশে, আর অপর পাশে দেখানো হয়েছিল রায়ান মসিরদি নির্মিত ২০২১ সালের এক প্রামাণ্যচিত্র, যেখানে একটি শহরতলির পুরনো আবাসন ভেঙে নতুন উন্নয়ন কাজ চলছিল। শেষের দিকে দর্শনার্থীরা কুশনে হেলান দিয়ে বসে উপশহর নিয়ে তৈরি গানের প্লেলিস্ট শুনতে পারতেন, যেখানে শুধু র্যাপ শিল্পী নয়, চার্লস আজনাভুর ও এডিথ পিয়াফের গানও বাজানো হয়।

শিল্পী আলেক্সিয়া ফিয়াস্কো শহরতলির এক ভেঙে ফেলা আবাসনের কংক্রিট টুকরোয় সেখানকার বাসিন্দাদের ছবি মুদ্রণ করেন। এতে ভিড় জমিয়েছিলেন সেসব এলাকায় বেড়ে ওঠা তরুণরা, যারা মনে করেছেন এটি ছিল প্যারিসের সঙ্গে একটি নতুন সেতুবন্ধন।
প্রদর্শনীর তাৎপর্য
প্রদর্শনীটির তাৎপর্য নিয়ে ন্যাশনাল মিউজিয়ামের পরিচালক কনস্তান্স রিভিয়ের বলেন, ফ্রান্সে এতগুলো জাতীয় জাদুঘর থাকলেও উপশহরকে কেন্দ্র করে এটাই প্রথম প্রদর্শনী। ফরাসি সমাজ যেখানে বহুত্ববাদ বা বৈচিত্র্যকে সহজে স্বীকার করে না, সেখানে অভিবাসীদের বসতি ও অভিজ্ঞতাকে সামনে আনা একটি বড় পদক্ষেপ। তার ভাষায়, “ফ্রান্সের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অভিবাসী পরিবার থেকে এসেছে। তাই আমরা শুধু অভিবাসনের ইতিহাস নয়, আসলে ফরাসি ইতিহাসই বলছি।”
জাদুঘরের বিতর্কিত অতীত
এই জাদুঘরটি স্থাপন করা হয় ২০০৭ সালে, কিন্তু তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন না। আর্থিক সংকট ও রাজনৈতিক বিতর্ক একসময় জাদুঘরকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ২০১০ সালে খারাপ জীবনযাপনের প্রতিবাদে শত শত অভিবাসী কয়েক মাস ধরে ভবন দখল করে রেখেছিলেন।

জাদুঘরটি স্থাপিত হয়েছে ১৯৩১ সালের প্যারিস ঔপনিবেশিক প্রদর্শনীর জন্য নির্মিত পালেস দ্য লা পোর্ত-দোরে ভবনে। সেই সময় এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আনা শ্রমিকদের ভাস্কর্যে অর্ধনগ্ন অবস্থায় কাজ করতে দেখা যায়। অনেকের মতে, এ জায়গায় অভিবাসন জাদুঘর স্থাপন করা ছিল ইতিহাস সাদা করে দেখানোর প্রচেষ্টা। তবে সমর্থকেরা বলেন, এটি আসলে ঔপনিবেশিক গৌরবের প্রতীককে উল্টে দিয়ে অভিবাসীদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার এক নতুন অর্থ তৈরি করেছে।
নতুন বার্তা ও গ্রহণযোগ্যতা
যদিও পূর্বে কিছু বিজ্ঞাপন প্রচারণা বিতর্ক তৈরি করেছিল, “বানলিউ শেরি” প্রদর্শনীতে তা হয়নি। রিভিয়ের বলেন, “যখন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো বিষয়ে এগোনো হয়, তখন সেটির জন্য জায়গা তৈরি হয়।”
তবুও দর্শনার্থীদের কেউ কেউ মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। দর্শনার্থী হ্যারল্ড ফ্রঁসোয়া বললেন, “একদিকে আমি খুশি যে অভিবাসনের ইতিহাস নিয়ে একটি জাদুঘর আছে। তবে অন্যদিকে জানি, এই ভবন একসময় ঔপনিবেশিক শক্তির প্রদর্শন ছিল।”
তবে শেষ পর্যন্ত প্রায় সবাই মেনে নিয়েছেন যে প্রদর্শনীটি ছিল এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা, যা ফ্রান্সের সমাজ ও সংস্কৃতির বহুমাত্রিক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















