ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর উপশহর উইন্টার পার্কে গত মাসে ১১ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের একটি নতুন ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়েছে। আধা মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি এই শিল্পকর্মটি শহরের ২৩ একর আয়তনের মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র পার্কের কেন্দ্রীয় আকর্ষণ হিসেবে স্থাপন করা হয়। ভাস্কর্যের নির্মাতা অ্যান্ড্রু লুই জানিয়েছেন, এটি শুধু বাস্তব প্রতিকৃতি নয়, বরং প্রতীকী ভাষায় কিংয়ের সংগ্রাম ও দর্শনকে তুলে ধরার চেষ্টা।
বিতর্ক ও সমালোচনা
তবে ভাস্কর্যটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, কিংয়ের মাথা, জুতো এবং বাম হাত অস্বাভাবিক বড় আকারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভাস্কর্যের নির্মাতার ভাষ্য অনুযায়ী—
জুতোগুলো বড় করা হয়েছে “বড় দায়িত্বের প্রতীক” হিসেবে।
বাম হাতকে ভারী করা হয়েছে হাতে ধরা বইয়ের ওজন ও গুরুত্ব বোঝাতে।
মাথা বড় করা হয়েছে যাতে দূর থেকেও স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
তবুও সমালোচকদের অনেকে একে “বিকৃত” বা “কার্টুনসদৃশ” আখ্যা দিয়েছেন। অরল্যান্ডোর বাসিন্দা ও এসেন্স ম্যাগাজিনের সহপ্রতিষ্ঠাতা জোনাথন ব্লাউন্ট সিটি কমিশনের বৈঠকে বলেন, “এটা অস্বস্তিকর দেখাচ্ছে।” তিনি একে পরে “কার্টুনরূপে” হিসেবেও উল্লেখ করেন।
শহর কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
উইন্টার পার্ক কর্তৃপক্ষ শিল্পীর পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা জানিয়েছে, ভাস্কর্যের অতিরঞ্জিত অংশগুলো ব্যাখ্যা করে একটি ছোট সাইনবোর্ড পাশে বসানো হবে। ভাস্কর্যের নকশা কিং পরিবারের অনুমোদন নিয়ে তৈরি হয়েছে। শহরের জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ, আর স্থানীয় ইতিহাসের অংশ হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলোর নাম পার্কের দেয়ালে খোদাই করে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
ভাস্কর্যের নকশা ও প্রতীক
ভাস্কর্যটি কালো গ্রানাইটের দুই ফুট উঁচু বেদীর ওপর স্থাপিত, বেদীর চারপাশে চারটি শিলালিপিতে লেখা রয়েছে— “সমতা,” “ভালোবাসা,” “সাহস,” এবং “স্বাধীনতা।” এর চারপাশে বসার জায়গা ও দেয়ালে সেই কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলোর নাম খোদাই করা হয়েছে, যাদের জমি ১৯৫০-এর দশকে সরকার বাজেয়াপ্ত করে এই পার্ক নির্মাণ করে।
অ্যান্ড্রু লুই ভাস্কর্যটির নাম দিয়েছেন “দ্য রিপল” বা “তরঙ্গ,” যা কিংয়ের শিক্ষার প্রভাব ইতিহাসে তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ার প্রতীক। তিনি বলেন, ভাস্কর্যটি কখনোই অতিরিক্ত বাস্তবসম্মত করার জন্য তৈরি হয়নি, বরং শিল্পীর সৃজনশীল স্বাধীনতাই এখানে মুখ্য।
শিল্প ও প্রতিকৃতি নিয়ে বিতর্ক
শিল্প ইতিহাসবিদদের মতে, প্রতিকৃতি ভাস্কর্যে সবসময়ই সাদৃশ্য বা অমিল নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্ক স্যাভেজ বলেন, “এটা শুধু মার্টিন লুথার কিং নন, বরং প্রতিকৃতি ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই সাদৃশ্য নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে।”
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরিকা ডস জানান, অনেকে কিংয়ের প্রতিকৃতিতে যথাযথ বাস্তবতার আশা করেন। তার ভাষায়, “যখন ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার একজন মানুষকে নয় ফুট ভাস্কর্যে দেখানো হয়, তখন অতিরঞ্জন কার্টুনের মতো মনে হতে পারে।”
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
শহরের মেয়র শিলা ডেসিসিও স্বীকার করেছেন, “হয়তো ভাস্কর্যটি সবার প্রত্যাশামতো হয়নি। তবে এখন আর কিছু করার নেই, এটি ছিল বড় ধরনের বিনিয়োগ।”
স্থানীয় ইতিহাসবিদ মেরি ড্যানিয়েলস বলেন, “ড. কিং এত মহান ব্যক্তি যে কোনো ভাবেই তাকে ছোট করা সম্ভব নয়।” তবে কিং পরিবার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের এই ভাস্কর্য একদিকে যেমন শিল্পীর প্রতীকী কল্পনার প্রতিফলন, অন্যদিকে এটি নিয়ে জনমত বিভক্তি দেখা দিয়েছে। সমালোচনা থাকলেও শহর কর্তৃপক্ষ ও শিল্পী এটিকে ঐতিহাসিক প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর।
মার্টিন লুথার কিং ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক
-
Sarakhon Report - ১২:৪১:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
- 49
জনপ্রিয় সংবাদ




















