আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপে ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর লিসা কুক আদালতের শরণাপন্ন হতে যাচ্ছেন। কুকের আইনজীবী অ্যাব লওয়েল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট কেবল একটি সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে তাকে অপসারণ করতে চাইছেন, যা কোনোভাবেই আইনগতভাবে বৈধ নয়। তাই এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
ট্রাম্পের অভিযোগ ও অবস্থান
সোমবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ২০২১ সালের মর্টগেজ বা গৃহঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে “প্রতারণা ও সম্ভাব্য অপরাধমূলক কার্যকলাপের” অভিযোগে তিনি কুককে বরখাস্ত করছেন। কুক যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী গভর্নর। ট্রাম্প বলেন, ফেডে কাজ করার জন্য সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ব্যক্তির প্রয়োজন, আর কুকের ক্ষেত্রে তিনি তা খুঁজে পাননি। যদিও তিনি যোগ করেন, আদালত যদি কুককে বহাল রাখে তবে রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।
নজিরবিহীন পদক্ষেপ
ফেডের ১১১ বছরের ইতিহাসে কোনো গভর্নরকে এইভাবে অপসারণের চেষ্টা হয়নি। ফেড মূলত স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং বোর্ড সদস্যরা ১৪ বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ ফেডের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প আগেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। অনেক কর্মকর্তা বিদায় নিয়েছেন, কিছু সংস্থা ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং কংগ্রেস অনুমোদিত ব্যয় আটকে দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে তিনি আরও প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফেডের অবস্থান
ফেড এক বিবৃতিতে জানায়, কুক এখনো তার পদে বহাল আছেন এবং কেবল আদালতের নির্দেশ ছাড়া তাকে অপসারণ করা সম্ভব নয়। ফেডের পরবর্তী সুদের হার নির্ধারণ বৈঠক হবে ১৬ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর, এবং ততদিন পর্যন্ত কুকের অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্ভাব্য উত্তরসূরি
কুককে অপসারণ করতে পারলে ট্রাম্প ফেড বোর্ডের সাত সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়োগের সুযোগ পাবেন। ইতিমধ্যে তিনি হোয়াইট হাউসের অর্থনীতিবিদ স্টিফেন মিরানকে অস্থায়ীভাবে মনোনীত করেছেন, যার মেয়াদ জানুয়ারিতে শেষ হবে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, কুকের পদ শূন্য হলে মিরানকে বিবেচনা করা হতে পারে। এ ছাড়া প্রাক্তন বিশ্বব্যাংক প্রধান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডেভিড মালপাসের নামও আলোচনায় এসেছে।
বাজারের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের ঘোষণার পরও বাজারে বড় ধাক্কা লাগেনি। ওয়াল স্ট্রিট সূচক সামান্য ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, তবে ডলারের মান কমেছে এবং মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে সুদহার কাঠামোতে ওঠানামা দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে শঙ্কিত হলেও এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।
মর্টগেজ বিতর্ক
ফেডারেল হাউজিং ফাইন্যান্স এজেন্সির পরিচালক ও ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত উইলিয়াম পুল প্রথমে কুকের মর্টগেজ লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টি বিচার বিভাগের তদন্তে পাঠানো হলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অভিযোগ হলো, কুক আলাদা দুটি রাজ্যে একই সময়ে বাড়ি কিনে তা ‘প্রধান আবাসন’ হিসেবে দেখিয়েছিলেন।
আইনি প্রশ্ন ও বিশেষজ্ঞ মত
আইন অনুযায়ী, ফেড গভর্নরকে “কারণে” অপসারণ করা যেতে পারে। তবে এতদিন তা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুকের মর্টগেজ সংক্রান্ত কার্যক্রম তার ফেডে যোগদানের আগের বিষয়, যা সেনেটের অনুমোদনের সময় খুঁটিয়ে দেখা হয়েছিল। তাই এসব পূর্ববর্তী ঘটনার ভিত্তিতে তাকে বরখাস্ত করা যুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
নীতিগত প্রভাব ও শঙ্কা
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া ফেডকে স্বাধীনভাবে নীতি প্রণয়নের সুযোগ দেওয়া হলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতির জন্য ভালো ফল মেলে। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ফেডকে সরাসরি রাজনৈতিক চাপের মুখে ফেলেছে, যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
ফেড গভর্নর লিসা কুককে অপসারণে ট্রাম্পের উদ্যোগ, মামলা লড়বেন কুক
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১২:৪৬:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
- 62
জনপ্রিয় সংবাদ




















