হামলার ঘটনা
মিনিয়াপলিসের সাউথওয়েস্ট অংশে অবস্থিত অ্যানানসিয়েশন ক্যাথলিক চার্চে বুধবার সকালে বছরের প্রথম স্কুল মেসে যোগ দিতে শিশু শিক্ষার্থীরা জমায়েত হয়েছিল। আনন্দময় পরিবেশ হঠাৎ ভয়ে পরিণত হয় যখন বন্দুকধারীর গুলি গির্জার কাঁচ ভেঙে ভেতরে ঢোকে। হামলায় দুই শিশু নিহত হয় এবং অন্তত ১৭ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ১৪ শিশু ও তিনজন বয়স্ক উপাসক রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, হামলাকারী ২৩ বছর বয়সী রবিন ওয়েস্টম্যান রাইফেল, শটগান ও পিস্তল নিয়ে গির্জার বাইরে থেকে গুলি চালান। পরে তিনি গাড়ি পার্কিং এলাকায় নিজের অস্ত্রের গুলিতে আত্মহত্যা করেন।

আতঙ্ক ও ভয়াবহ পরিস্থিতি
ঘটনার সময় শিক্ষার্থীরা স্তোত্র পাঠ করছিল। শিক্ষকরা দ্রুত শিশুদের বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে নিরাপদে রাখেন। অনেক শিক্ষার্থী আহত সহপাঠীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেছে। কিছু শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ককে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কয়েকজনের অস্ত্রোপচারও হয়।
একজন শিক্ষক জানান, শিশুদের গির্জা থেকে বের করার সময় তারা গান গাইছিল: “লর্ড প্রিপেয়ার মি টু বি আ স্যাঙ্কচুয়ারি।”
চার্চের প্রি-স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে খেলনার রান্নাঘরে লুকিয়ে পড়ে। চার বছরের আয়লা তার বাবাকে বলেছে, উপরের সিলিং ভেঙে পড়ছে এমন শব্দ হচ্ছিল।
অভিভাবক ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
শিশুদের অভিভাবকরা দৌড়ে স্কুলে আসেন। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ সন্তানকে রক্তমাখা জামায় দেখে ভেঙে পড়েছেন, কেউ আবার সন্তানকে না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আতঙ্কে ছিলেন।
এক অভিভাবক জানান, তার কন্যা নিজের ছোট সহপাঠী সঙ্গীকে বাঁচাতে না পারায় অপরাধবোধে ভুগছে। অন্য এক মা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে সন্তানকে জীবিত দেখে অন্য মায়ের সঙ্গে জড়িয়ে কেঁদেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ
ঘটনার পর পুলিশ এলাকা ঘিরে ফেলে, রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় এবং ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালায়। এফবিআইও তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ প্রধান ব্রায়ান ও’হ্যারা বলেন, শিশুতে ভরা একটি গির্জায় গুলি চালানো অকল্পনীয় নৃশংসতা।
এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল জানান, হামলাটি ক্যাথলিকদের লক্ষ্য করে ঘৃণাজনিত অপরাধ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারী একাই কাজ করেছে এবং এর আগে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিতর্ক
মিনিয়াপলিসের মেয়র জ্যাকব ফ্রে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু “প্রার্থনা” বা “সমবেদনা” যথেষ্ট নয়। শিশুদের স্কুল বা গির্জায় নির্ভয়ে যাওয়ার অধিকার থাকতে হবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ম্যাথিউ ডেবোয়ার বলেন, “আমাদের শুধু কথা নয়, বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সম্প্রদায়, পরিবার ও শিক্ষকদের সহায়তা করতে হবে। আবার যেন এমন না ঘটে।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















