১১:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত : যুক্তিসংগত শাস্তির বিধান প্রণয়নে হাইকোর্টের রুল চাট্টাল নদী: উৎপত্তি, ভূগোল ও মানুষের জীবন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নবগঠিত কমিটি অনুমোদন জুলাই ২০২৪ বিদ্রোহ–সংশ্লিষ্ট ১০৬ মামলায় চার্জশিট দাখিল, ২০৮৩ জনের অব্যাহতির সুপারিশ চট্টগ্রামে রোড ক্র্যাশে নিহত–আহতদের স্মরণে মানববন্ধন ভোট ছিনতাইয়ের যে কোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে: জামায়াত নেতা বাংলাদেশে জননিরাপত্তা জোরদারে ডিজিটাল ও কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্যোগের তাগিদ সাম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার ক্ষমতায় এলে মেগাপ্রকল্প নয়, তৃণমূলে বিনিয়োগেই অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, এক দিনে হাসপাতালে ৫৬৫

মিনিয়াপোলিস হামলাকারীর ডায়েরি: সতর্কবার্তা, অন্ধকার চিন্তা আর সহিংস আবেশ

কিশোর বয়স থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ

কিশোর বয়সে রবিন ওয়েস্টম্যান সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে গুলিবর্ষণ নিয়ে কথা বলেছিল। সেই কারণে তাকে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। ওয়েস্টম্যান পরে নিজের ডায়েরিতে লেখে, এই ঘটনাই তার মধ্যে গণহত্যাকারীদের প্রতি গভীর এক অস্বাভাবিক আসক্তির সূচনা।

প্রায় এক দশক পর, একই স্কুলে ফিরে গিয়ে সে ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। মিনিয়াপোলিসে বুধবার সকালে ক্যাথলিক চার্চে প্রার্থনা চলাকালে ওয়েস্টম্যান দুই শিশুকে হত্যা করে এবং আরও ১৮ জনকে আহত করে।

হামলার আগে পরিকল্পনা ও সতর্কবার্তা

ঘটনার পর পুলিশ ওয়েস্টম্যানের লেখা বহু ডায়েরি ও ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিও পরীক্ষা করছে। অধিকাংশ নোট সাইরিলিক অক্ষরে লেখা, যাতে বিষয়বস্তু সহজে বোঝা না যায়। এসব নোটে দেখা যায়, হামলার আগে সে চার্চ ঘুরে গেছে, দরজার লক পরীক্ষা করেছে, এমনকি কাদের কোথায় পাওয়া যাবে তার হিসাবও করেছে।

তবে ডায়েরিতে এক জায়গায় লেখা ছিল— “আমাকে খুঁজে বের করো, আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার করছি।”

A screengrab of a YouTube video obtained by CNN, first posted four years ago, shows Robin Westman.

‘কোনো বার্তা নেই’

পুলিশ প্রথমে লেখাগুলোকে “ম্যানিফেস্টো” হিসেবে বর্ণনা করলেও সিএনএনের পর্যবেক্ষণে দেখা যায় এগুলো সুসংগঠিত কোনো রাজনৈতিক বার্তা নয়। বরং একটি বিভ্রান্ত ও অসুস্থ মানসিক অবস্থার খণ্ডচিত্র।

ওয়েস্টম্যান লিখেছে: “এটা কোনো চার্চ বা ধর্মের বিরুদ্ধে হামলা নয়। বার্তা হলো— কোনো বার্তা নেই।”

মানসিক সংকটের স্বীকারোক্তি

ডায়েরিতে ওয়েস্টম্যান স্বীকার করেছে যে বহু বছর ধরে সে হতাশায় ভুগছে এবং আত্মহনন ও হত্যার চিন্তায় আচ্ছন্ন ছিল। তবুও সে লিখেছে—
“আমার স্নেহময় পরিবার আছে, যারা আমার ভালো চায়। তবু কেন যেন মানুষের ক্ষতি করার ইচ্ছা দূর হয় না।”

প্রতিটি স্কুল ও চাকরির ক্ষেত্রেই তার মনে কোনো না কোনো পর্যায়ে হামলার কল্পনা আসত বলে লিখেছে ওয়েস্টম্যান।

A yearbook photograph obtained by CNN shows Robert Westman, later known as Robin Westman, as a student at Annunciation Catholic School in Minneapolis.

স্কুলজীবনের ঘটনা ও সহপাঠীদের স্মৃতি

সপ্তম শ্রেণিতে সে এক সহপাঠীকে প্রশ্ন করেছিল, “যদি স্কুলে গুলিবর্ষণ হয়, তুমি কোথায় লুকাবে?” এ জন্যই তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তবে সে লিখেছে, কোনো থেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায়নি।

অষ্টম শ্রেণিতে তার আচরণকে সহপাঠীরা আলাদা বললেও সহিংস বা সমস্যাযুক্ত মনে করেনি। সাবেক সহপাঠী মেসন উইলি বলেছেন, ওয়েস্টম্যানকে হামলাকারী হিসেবে শুনে তিনি হতবাক হয়েছেন।

নাম পরিবর্তন ও ব্যক্তিগত জীবন

২০১৯ সালে ওয়েস্টম্যানের মা আদালতে গিয়ে তার নাম পরিবর্তনের আবেদন করেন। ২০২০ সালে আদালত অনুমোদন দিয়ে রায় লেখে যে, ওয়েস্টম্যান নিজেকে নারী হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়।

ওয়েস্টম্যানের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না। তবে ডায়েরিতে সে অন্য গণহত্যাকারীদের উল্লেখ করেছে, শিশু হত্যা নিয়ে ভয়ঙ্কর কল্পনা লিখেছে এবং ঘৃণাজনক বর্ণবাদী ও ইহুদি-বিরোধী মন্তব্য করেছে।

Updates: Minneapolis Catholic school shooting | PBS News

পরিবারকে আঘাত না করার সিদ্ধান্ত বদল

কিছুদিন আগেও সে পরিবারকে কষ্ট না দিতে হামলার পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার কথা লিখেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মত বদলায়। ডায়েরিতে আছে—
“আমি এটা করতে চাই না, আমি নিজেকে ঘৃণা করি। কিন্তু আমি থামতে পারছি না।”

পরিকল্পনা ও হামলার লক্ষ্য

একটি স্কুল শিডিউল অনলাইনে দেখে ওয়েস্টম্যান বুধবারের সকালের মেসকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়। চার্চের ভেতরের আসন ও জানালার মানচিত্র এঁকে ভিডিওতে ছুরি দিয়ে আঘাত করার দৃশ্যও প্রকাশ করে।

সে লিখেছে: “শিক্ষকেরা ভাববে না যে স্কুলের প্রথম সপ্তাহেই হামলা হবে।”

Journal of Minneapolis shooter Robin Westman details warning signs | CNN

অস্ত্র ও তদন্ত

হামলায় ওয়েস্টম্যান একটি রাইফেল, একটি হ্যান্ডগান ও একটি শটগান ব্যবহার করে। ইউটিউব ভিডিওতে দেখা গেছে, এসব অস্ত্রে বর্ণবাদী গালাগালিও লেখা ছিল। পুলিশ এখনো তদন্ত করছে, অস্ত্রগুলো কীভাবে সে সংগ্রহ করেছিল।

ডায়েরিতে সে লিখেছে, “আমার মতো মানুষের জন্য এসব অস্ত্র পাওয়া আরও কঠিন হওয়া উচিত।”

মিনিয়াপোলিস পুলিশের প্রধান জানিয়েছেন, ওয়েস্টম্যানের কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সরকারি নথি পাওয়া যায়নি, যা থাকলে সে অস্ত্র কিনতে পারত না।

শেষ পর্যায়ের লেখা

গুলিবর্ষণের কয়েক দিন আগে পর্যন্তও ওয়েস্টম্যান লিখেছে, শুটিং রেঞ্জে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং চার্চে গিয়ে শেষবারের মতো ঘুরে দেখেছে।

ওয়েস্টম্যানের ডায়েরি এক অস্থির, অন্ধকার মানসিক জগতের জানালা খুলে দিয়েছে। সেখানে বারবার ভেসে উঠেছে সাহায্যের আর্তি, আবার ভেসে উঠেছে হত্যার ভয়াবহ কল্পনা। এই দ্বন্দ্বের মাঝেই মিনিয়াপোলিসে ঘটে গেল মর্মান্তিক এক ট্র্যাজেডি, যা এখন পুরো শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত : যুক্তিসংগত শাস্তির বিধান প্রণয়নে হাইকোর্টের রুল

মিনিয়াপোলিস হামলাকারীর ডায়েরি: সতর্কবার্তা, অন্ধকার চিন্তা আর সহিংস আবেশ

০৭:২৩:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

কিশোর বয়স থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ

কিশোর বয়সে রবিন ওয়েস্টম্যান সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে গুলিবর্ষণ নিয়ে কথা বলেছিল। সেই কারণে তাকে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। ওয়েস্টম্যান পরে নিজের ডায়েরিতে লেখে, এই ঘটনাই তার মধ্যে গণহত্যাকারীদের প্রতি গভীর এক অস্বাভাবিক আসক্তির সূচনা।

প্রায় এক দশক পর, একই স্কুলে ফিরে গিয়ে সে ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। মিনিয়াপোলিসে বুধবার সকালে ক্যাথলিক চার্চে প্রার্থনা চলাকালে ওয়েস্টম্যান দুই শিশুকে হত্যা করে এবং আরও ১৮ জনকে আহত করে।

হামলার আগে পরিকল্পনা ও সতর্কবার্তা

ঘটনার পর পুলিশ ওয়েস্টম্যানের লেখা বহু ডায়েরি ও ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিও পরীক্ষা করছে। অধিকাংশ নোট সাইরিলিক অক্ষরে লেখা, যাতে বিষয়বস্তু সহজে বোঝা না যায়। এসব নোটে দেখা যায়, হামলার আগে সে চার্চ ঘুরে গেছে, দরজার লক পরীক্ষা করেছে, এমনকি কাদের কোথায় পাওয়া যাবে তার হিসাবও করেছে।

তবে ডায়েরিতে এক জায়গায় লেখা ছিল— “আমাকে খুঁজে বের করো, আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার করছি।”

A screengrab of a YouTube video obtained by CNN, first posted four years ago, shows Robin Westman.

‘কোনো বার্তা নেই’

পুলিশ প্রথমে লেখাগুলোকে “ম্যানিফেস্টো” হিসেবে বর্ণনা করলেও সিএনএনের পর্যবেক্ষণে দেখা যায় এগুলো সুসংগঠিত কোনো রাজনৈতিক বার্তা নয়। বরং একটি বিভ্রান্ত ও অসুস্থ মানসিক অবস্থার খণ্ডচিত্র।

ওয়েস্টম্যান লিখেছে: “এটা কোনো চার্চ বা ধর্মের বিরুদ্ধে হামলা নয়। বার্তা হলো— কোনো বার্তা নেই।”

মানসিক সংকটের স্বীকারোক্তি

ডায়েরিতে ওয়েস্টম্যান স্বীকার করেছে যে বহু বছর ধরে সে হতাশায় ভুগছে এবং আত্মহনন ও হত্যার চিন্তায় আচ্ছন্ন ছিল। তবুও সে লিখেছে—
“আমার স্নেহময় পরিবার আছে, যারা আমার ভালো চায়। তবু কেন যেন মানুষের ক্ষতি করার ইচ্ছা দূর হয় না।”

প্রতিটি স্কুল ও চাকরির ক্ষেত্রেই তার মনে কোনো না কোনো পর্যায়ে হামলার কল্পনা আসত বলে লিখেছে ওয়েস্টম্যান।

A yearbook photograph obtained by CNN shows Robert Westman, later known as Robin Westman, as a student at Annunciation Catholic School in Minneapolis.

স্কুলজীবনের ঘটনা ও সহপাঠীদের স্মৃতি

সপ্তম শ্রেণিতে সে এক সহপাঠীকে প্রশ্ন করেছিল, “যদি স্কুলে গুলিবর্ষণ হয়, তুমি কোথায় লুকাবে?” এ জন্যই তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তবে সে লিখেছে, কোনো থেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায়নি।

অষ্টম শ্রেণিতে তার আচরণকে সহপাঠীরা আলাদা বললেও সহিংস বা সমস্যাযুক্ত মনে করেনি। সাবেক সহপাঠী মেসন উইলি বলেছেন, ওয়েস্টম্যানকে হামলাকারী হিসেবে শুনে তিনি হতবাক হয়েছেন।

নাম পরিবর্তন ও ব্যক্তিগত জীবন

২০১৯ সালে ওয়েস্টম্যানের মা আদালতে গিয়ে তার নাম পরিবর্তনের আবেদন করেন। ২০২০ সালে আদালত অনুমোদন দিয়ে রায় লেখে যে, ওয়েস্টম্যান নিজেকে নারী হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়।

ওয়েস্টম্যানের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না। তবে ডায়েরিতে সে অন্য গণহত্যাকারীদের উল্লেখ করেছে, শিশু হত্যা নিয়ে ভয়ঙ্কর কল্পনা লিখেছে এবং ঘৃণাজনক বর্ণবাদী ও ইহুদি-বিরোধী মন্তব্য করেছে।

Updates: Minneapolis Catholic school shooting | PBS News

পরিবারকে আঘাত না করার সিদ্ধান্ত বদল

কিছুদিন আগেও সে পরিবারকে কষ্ট না দিতে হামলার পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার কথা লিখেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মত বদলায়। ডায়েরিতে আছে—
“আমি এটা করতে চাই না, আমি নিজেকে ঘৃণা করি। কিন্তু আমি থামতে পারছি না।”

পরিকল্পনা ও হামলার লক্ষ্য

একটি স্কুল শিডিউল অনলাইনে দেখে ওয়েস্টম্যান বুধবারের সকালের মেসকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়। চার্চের ভেতরের আসন ও জানালার মানচিত্র এঁকে ভিডিওতে ছুরি দিয়ে আঘাত করার দৃশ্যও প্রকাশ করে।

সে লিখেছে: “শিক্ষকেরা ভাববে না যে স্কুলের প্রথম সপ্তাহেই হামলা হবে।”

Journal of Minneapolis shooter Robin Westman details warning signs | CNN

অস্ত্র ও তদন্ত

হামলায় ওয়েস্টম্যান একটি রাইফেল, একটি হ্যান্ডগান ও একটি শটগান ব্যবহার করে। ইউটিউব ভিডিওতে দেখা গেছে, এসব অস্ত্রে বর্ণবাদী গালাগালিও লেখা ছিল। পুলিশ এখনো তদন্ত করছে, অস্ত্রগুলো কীভাবে সে সংগ্রহ করেছিল।

ডায়েরিতে সে লিখেছে, “আমার মতো মানুষের জন্য এসব অস্ত্র পাওয়া আরও কঠিন হওয়া উচিত।”

মিনিয়াপোলিস পুলিশের প্রধান জানিয়েছেন, ওয়েস্টম্যানের কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সরকারি নথি পাওয়া যায়নি, যা থাকলে সে অস্ত্র কিনতে পারত না।

শেষ পর্যায়ের লেখা

গুলিবর্ষণের কয়েক দিন আগে পর্যন্তও ওয়েস্টম্যান লিখেছে, শুটিং রেঞ্জে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং চার্চে গিয়ে শেষবারের মতো ঘুরে দেখেছে।

ওয়েস্টম্যানের ডায়েরি এক অস্থির, অন্ধকার মানসিক জগতের জানালা খুলে দিয়েছে। সেখানে বারবার ভেসে উঠেছে সাহায্যের আর্তি, আবার ভেসে উঠেছে হত্যার ভয়াবহ কল্পনা। এই দ্বন্দ্বের মাঝেই মিনিয়াপোলিসে ঘটে গেল মর্মান্তিক এক ট্র্যাজেডি, যা এখন পুরো শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছে।