পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো কয়েক মাসের ব্যবধানে দুইবার উচ্ছেদের শিকার হয়েছে। প্রথমে মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষের কারণে মানুষ গৃহহীন হয়। এরপর আগস্টে ভারতের দিক থেকে আসা বন্যার পানিতে আবারও ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হচ্ছে।
৩০ বছর বয়সী মা শামা বলেন, “যুদ্ধের সময় আমাদের শিশুদের স্কুল বন্ধ ছিল, অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন পানির জন্য আবার ঘর ছাড়তে হচ্ছে। কতবার এমন উচ্ছেদ সহ্য করব?”
ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত পরিবারগুলো
কাসুরের পরিবারগুলো বলছে, তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত।
২৭ বছর বয়সী বিবি জুবায়দা বলেন, “এখানে থাকতে হলে যুদ্ধের হুমকি আর বন্যার হুমকি—দুটো নিয়েই বাঁচতে হয়। কিন্তু কোথায় যাব?”
স্থানীয় মসজিদের মাইকে আজানের সঙ্গে এখন প্রচার হচ্ছে সতর্কবার্তা—উদ্ধার নৌকা প্রস্তুত, দ্রুত সরে যেতে বলা হচ্ছে।

সীমান্তের ছায়া ও নদীচুক্তি
কাসুর সীমান্ত থেকে ভারতীয় চৌকি চোখে পড়ে। সীমান্তের দুই দেশের নীতিগত সিদ্ধান্ত সরাসরি প্রভাব ফেলছে এখানকার মানুষের জীবনে।
ভারত ও পাকিস্তান ইন্দাস জলচুক্তির মাধ্যমে ছয় দশকেরও বেশি সময় নদী নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু এ বছর ভারত ওই চুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, এতে বন্যা মোকাবিলা কঠিন হয়েছে।
মে মাসের জঙ্গি হামলার পর শুরু হওয়া সংঘর্ষে মানুষ ঘর ছেড়েছিল। তারপরেই আসে বর্ষা আর নদীর প্লাবন।
অনীহা ও অনিশ্চয়তা
মানুষজন গবাদি পশু, মোটরসাইকেল ও সামগ্রী নিয়ে কাঠের নৌকায় পার হচ্ছে ডুবে যাওয়া মাঠ। উদ্ধারকর্মী মুহাম্মদ আরসালান বলেন, “অনেকেই যেতে চায় না। বারবার ঘর ছাড়তে হচ্ছে বলে তারা অনীহা দেখাচ্ছে। আবার ভয় থাকে, রেখে যাওয়া জিনিস চুরি হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “মানুষ তাদের গবাদি পশুকে এত ভালোবাসে যে প্রায়ই তারা পশু ছাড়া যেতে রাজি হয় না।”

প্রাণহানি ও নতুন হুমকি
পাঞ্জাব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গণ্ডা সিংহ ওয়ালায় শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহ দেখা গেছে, যা ভারতের একটি ব্যারেজ ভাঙার পর আরও তীব্র হয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত ২৮ জন মারা গেছে। পানি দক্ষিণে আরও এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, ভারত যথেষ্ট সতর্কবার্তা না দিয়ে অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেন, “চুক্তি কার্যকর থাকলে আমরা পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামলাতে পারতাম।”
ভারত অবশ্য দাবি করেছে, অতিবৃষ্টি আর ব্যারেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
কৃষকের ক্ষতি
ধান ও সবজি চাষি মুহাম্মদ আমজাদ বলেন, “আমার ১৫ একরের মধ্যে ১৩ একরই শেষ হয়ে গেছে। নারী ও শিশুরা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, পুরুষরা থেকে গেছে যা আছে তা রক্ষার জন্য।”

জলবায়ু পরিবর্তনের সতর্কতা
স্থানীয়রা বলছে, তারা অতীতে বন্যা দেখেছে, কিন্তু এখন প্রায়ই আসছে।
৭৪ বছর বয়সী নওয়াবউদ্দিন বলেন, “১৯৮৮, ২০২৩ আর এবারকার বন্যা আমি দেখেছি। আগে এত ঘন ঘন আসত না।”
তিনি যোগ করেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, অতিরিক্ত পানি চাই না, আমরা শুধু বাঁচতে চাই।”
পাকিস্তানের পূর্ব সীমান্তের গ্রামগুলো এখন দ্বিমুখী ঝুঁকিতে—যুদ্ধের হুমকি আর জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র বন্যা। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সীমান্ত নদী সংক্রান্ত বিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















