০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮) রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন তারেক রহমান নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৫) নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

তিয়ানজিন সম্মেলনে ‘বুলিংয়ের’ বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান শি জিনপিংয়ের

চীন, ভারত, রাশিয়া ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) তাদের বার্ষিক সম্মেলন শেষ করেছে সোমবার। এই সম্মেলনকে চীনের ভূরাজনৈতিক প্রভাব প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১০ সদস্যের এই জোট একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষর করেছে। তবে এর পূর্ণাঙ্গ লেখা তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। চায়না ডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতারা বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সমর্থন করে একটি বিবৃতিতে সম্মত হয়েছেন, যদিও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বৈশ্বিক বাণিজ্যের ভিত্তি নাড়িয়ে দিচ্ছে।

শি জিনপিংয়ের ভাষণ

সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং যুক্তরাষ্ট্রবিহীন এই জোটে চীনের নেতৃত্ব জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেন।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তৃতায় শি বলেন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে “শীতল যুদ্ধের মানসিকতা, জোটবদ্ধ বিরোধিতা এবং বুলিংয়ের আচরণ” এর বিরোধিতা করতে হবে। তিনি আরও আহ্বান জানান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) কেন্দ্র করে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে এবং “সমান ও সুশৃঙ্খল বহুমেরু বিশ্ব” গঠনে কাজ করতে।

তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলেন শি জিনপিং

চীনের প্রস্তাবিত সহায়তা

শি জানান, এসসিও-কে কার্যকরভাবে এগিয়ে নিতে চীন নতুন উদ্যোগ নেবে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • • সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে চলতি বছর ২ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ডলার) অনুদান দেওয়া।
  • • আগামী তিন বছরে এসসিও আন্তঃব্যাংক কনসোর্টিয়ামের সদস্য ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ইউয়ান ঋণ প্রদান।
  • • আগামী বছর থেকে এসসিও বিশেষ বৃত্তির সংখ্যা দ্বিগুণ করা।

এছাড়া শি দ্রুত নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলার জন্য একটি বিশেষ কেন্দ্র এবং মাদকবিরোধী কেন্দ্র গঠনের প্রস্তাব দেন।

চীনের প্রভাব ও কূটনৈতিক অগ্রগতি

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরেশিয়ার দেশসমূহকে নিয়ে গঠিত এসসিও-তে চীনের প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। এই বছর সম্মেলনে ২০ জনেরও বেশি বিদেশি নেতা অংশ নেন, যা এটিকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আয়োজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

শি সম্মেলনের আগের দিন মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করার পর এই সাক্ষাৎকে চীন-ভারত সম্পর্ক উষ্ণ করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও সীমান্ত বিরোধ এবং পাকিস্তানকে চীনের সমর্থনের মতো বিষয় এখনো দুই দেশের সম্পর্কের কাঁটা হয়ে আছে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্মেলনের আগে ভারতে সফর করে বিরল খনিজ পদার্থের বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাবে চীন এপ্রিলে এসব খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েনের মাঝেই পুতিন-মোদির বৈঠক

পুতিন-মোদির সম্পর্ক ও বার্তা

সম্মেলনে পুতিনের সঙ্গে শির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও প্রকাশ পায়। তারা একসঙ্গে ডিনারে বসেন এবং গণমাধ্যমে পাশাপাশি হাঁটার দৃশ্য প্রচারিত হয়।

মোদিও সোমবার পুতিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তারা অর্থনীতি, আর্থিক খাত ও জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন এবং এসব ক্ষেত্রে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় মোদি পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানান।

মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুতিনের সঙ্গে লিমুজিনে চড়ার ছবি প্রকাশ করেন এবং আরেক পোস্টে লেখেন, “পুতিনের সঙ্গে দেখা সবসময় আনন্দের।”

সম্মেলনের পরবর্তী পরিকল্পনা

যেখানে মোদি সোমবারই চীন ত্যাগ করেন, পুতিনসহ আরও কয়েকজন নেতা বুধবার বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন।

আগামী বছর এসসিও সম্মেলনের আয়োজক হবে কিরগিজস্তান।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮)

তিয়ানজিন সম্মেলনে ‘বুলিংয়ের’ বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান শি জিনপিংয়ের

০৬:৪০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চীন, ভারত, রাশিয়া ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) তাদের বার্ষিক সম্মেলন শেষ করেছে সোমবার। এই সম্মেলনকে চীনের ভূরাজনৈতিক প্রভাব প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১০ সদস্যের এই জোট একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষর করেছে। তবে এর পূর্ণাঙ্গ লেখা তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। চায়না ডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতারা বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সমর্থন করে একটি বিবৃতিতে সম্মত হয়েছেন, যদিও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বৈশ্বিক বাণিজ্যের ভিত্তি নাড়িয়ে দিচ্ছে।

শি জিনপিংয়ের ভাষণ

সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং যুক্তরাষ্ট্রবিহীন এই জোটে চীনের নেতৃত্ব জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেন।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তৃতায় শি বলেন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে “শীতল যুদ্ধের মানসিকতা, জোটবদ্ধ বিরোধিতা এবং বুলিংয়ের আচরণ” এর বিরোধিতা করতে হবে। তিনি আরও আহ্বান জানান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) কেন্দ্র করে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে এবং “সমান ও সুশৃঙ্খল বহুমেরু বিশ্ব” গঠনে কাজ করতে।

তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলেন শি জিনপিং

চীনের প্রস্তাবিত সহায়তা

শি জানান, এসসিও-কে কার্যকরভাবে এগিয়ে নিতে চীন নতুন উদ্যোগ নেবে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • • সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে চলতি বছর ২ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ডলার) অনুদান দেওয়া।
  • • আগামী তিন বছরে এসসিও আন্তঃব্যাংক কনসোর্টিয়ামের সদস্য ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ইউয়ান ঋণ প্রদান।
  • • আগামী বছর থেকে এসসিও বিশেষ বৃত্তির সংখ্যা দ্বিগুণ করা।

এছাড়া শি দ্রুত নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলার জন্য একটি বিশেষ কেন্দ্র এবং মাদকবিরোধী কেন্দ্র গঠনের প্রস্তাব দেন।

চীনের প্রভাব ও কূটনৈতিক অগ্রগতি

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরেশিয়ার দেশসমূহকে নিয়ে গঠিত এসসিও-তে চীনের প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। এই বছর সম্মেলনে ২০ জনেরও বেশি বিদেশি নেতা অংশ নেন, যা এটিকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আয়োজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

শি সম্মেলনের আগের দিন মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করার পর এই সাক্ষাৎকে চীন-ভারত সম্পর্ক উষ্ণ করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও সীমান্ত বিরোধ এবং পাকিস্তানকে চীনের সমর্থনের মতো বিষয় এখনো দুই দেশের সম্পর্কের কাঁটা হয়ে আছে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্মেলনের আগে ভারতে সফর করে বিরল খনিজ পদার্থের বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাবে চীন এপ্রিলে এসব খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েনের মাঝেই পুতিন-মোদির বৈঠক

পুতিন-মোদির সম্পর্ক ও বার্তা

সম্মেলনে পুতিনের সঙ্গে শির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও প্রকাশ পায়। তারা একসঙ্গে ডিনারে বসেন এবং গণমাধ্যমে পাশাপাশি হাঁটার দৃশ্য প্রচারিত হয়।

মোদিও সোমবার পুতিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তারা অর্থনীতি, আর্থিক খাত ও জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন এবং এসব ক্ষেত্রে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় মোদি পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানান।

মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুতিনের সঙ্গে লিমুজিনে চড়ার ছবি প্রকাশ করেন এবং আরেক পোস্টে লেখেন, “পুতিনের সঙ্গে দেখা সবসময় আনন্দের।”

সম্মেলনের পরবর্তী পরিকল্পনা

যেখানে মোদি সোমবারই চীন ত্যাগ করেন, পুতিনসহ আরও কয়েকজন নেতা বুধবার বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন।

আগামী বছর এসসিও সম্মেলনের আয়োজক হবে কিরগিজস্তান।