দশম পরিচ্ছেদ
ঘর থেকে বাইরে এলুম। মুখ থেকে চোখের জলের দাগ ধুয়ে ফেলতে একহাতা ঠান্ডা জল ঢাললুম মাথায়। পরিচারক আমাকে একমগ ভাস এনে দিল, আর জানতে চাইল তখুনি আমার খানা লাগবে কিনা। খানা চাই না বলে রাস্তায় বেরিয়ে এসে বাড়িটার দোরগোড়ায় সিড়ির ওপর বসে রইলুম।
যে কাড়েয় চুবুক ছিলেন তার সামনের গরাদ-দেয়া জানলাটা চওড়া রাস্তাটার ঠিক উল্টো দিক থেকে অন্ধকার একটা গর্তের মতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।
ভাবছিলুম, ‘চুবুক যদি এই সময় আমায় দেখতে পান তো বেশ হয়। আমায় দেখলে উনি খুশি হবেন, আর এতে ওঁর পক্ষে বোঝারও সুবিধে হবে যে যেহেতু আমি ছাড়া-অবস্থায় ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছি কাজেই আমি ওঁকে নিশ্চয় উদ্ধারের চেষ্টা করব। কিন্তু উনি যাতে উঠে দাঁড়িয়ে জানলা দিয়ে দেখেন, সেটা করা যায় কীভাবে?
ওঁকে এখান থেকে ডাকা কিংবা হাত নেড়ে ইসারা করা চলে না, কারণ তা করতে গেলে শাল্বীটা দেখতে পাবে। ঠিক, মাথায় একটা মতলব এসে গেছে! ছেলেবেলায় ইয়াশ্ঙ্কা সুক্কারন্তেইনকে বাগানে কিংবা আমাদের সেই পুকুরে ডেকে নিয়ে যাওয়ার দরকার হলে যে কায়দা করতুম, এখনও তা-ই করা যাক-না
কেন।’
ঘরে গিয়ে ছোট্ট একটা আয়না দেয়াল থেকে পেড়ে নিয়ে ফের আমি সি’ড়িতে ফিরে এলুম। প্রথমে কিছুক্ষণ আয়নাটা দিয়ে কপালের একটা রণ আমি খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পরীক্ষা করলুম, তারপর, যেন ব্যাপারটা দৈবাতই ঘটে গেছে এমনি ভাব দেখিয়ে, আয়নাটার সাহায্যে এক ঝলক রোদ্দুর উলটোদিকের ঘরটার ছাদের ওপর ফেললুম।
আর, বোঝা না-যায় এমন ভাবে, আস্তে-আস্তে আলোটা জানলার অন্ধকার গর্তের ওপর নামিয়ে আনলুম। দরজায়-বসা শান্তীটা মোটে দেখতেই পেল না যে জোরালো এক ঝলক আলো ঘরের জানলার মধ্যে দিয়ে ঢুকে উলটোদিকের দেয়ালে গিয়ে পড়ছে। আয়নাটাকে ওই অবস্থানে রেখে এদিকে আমি হাত দিয়ে একবার আয়নাটা ঢেকে ফের হাতটা সরিয়ে নিলুম। এইভাবে পরপর কয়েকবার আয়নাটাকে হাত দিয়ে ঢাকলুম আর খুললুম।