সুদানের পশ্চিমাঞ্চলের জেবেল মারা পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ ভূমিধসে টারসিন গ্রাম সম্পূর্ণ মাটির নিচে চাপা পড়েছে। স্থানীয় সশস্ত্র সংগঠন সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট/আর্মি (এসএলএম/এ) জানিয়েছে, এই বিপর্যয়ে নিহতের সংখ্যা ১,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। জাতিসংঘের স্থানীয় সমন্বয়কারীর তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর সংখ্যা ৩০০ থেকে ১,০০০-এর মধ্যে থাকতে পারে। এ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবীরা মাত্র নয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করতে পেরেছে।
এসএলএম/এর নেতা আবদেলওয়াহিদ মোহাম্মদ নূর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অব্যাহত ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নতুন করে ভূমিধস হতে পারে এবং আশপাশের গ্রামগুলোও ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তিনি দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন।

টারসিন গ্রাম সাইট্রাস উৎপাদনের জন্য পরিচিত ছিল, কিন্তু এই বিপর্যয়ে পুরো গ্রামটি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণে এলাকায় যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে, যা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমকে আরও জটিল করছে। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক কর্মকর্তা আরজিমন্দ হুসেইন জানান, টারসিনে যাওয়ার শেষ ৪৫ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণভাবে যানবাহনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সেখানে পৌঁছানো সম্ভব কেবল হেঁটে বা গাধার পিঠে চড়ে।
এই দুর্যোগ ঘটছে এমন এক সময়ে, যখন সুদান টানা দুই বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) রাজধানী আল-ফাশির নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। এই সংঘাতে ইতিমধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে, লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অনেকেই আশ্রয়ের খোঁজে জেবেল মারা অঞ্চলে চলে এসেছে। কিন্তু খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসার ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। তাওইলা এলাকায় আবার কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আল-তাইশি জানিয়েছেন, তিনি এসএলএম/এর সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। ভ্যাটিকান জানায়, পোপ ফ্রান্সিস ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রার্থনা করছেন এবং শোক প্রকাশ করেছেন।
সুদানের টারসিন গ্রামে এই ভূমিধস দেশটির চলমান মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে, যেখানে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিলিতভাবে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















