গবেষণার নতুন আবিষ্কার
সূক্ষ্ম কণার দূষণ (ফাইন-পার্টিকুলেট বা PM2.5) মস্তিষ্কে বিষাক্ত প্রোটিনের দলা তৈরি করে। এগুলো স্নায়ুকোষ ধ্বংস করে ভয়াবহ ধরনের ডিমেনশিয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে—নতুন গবেষণা এমনটাই জানিয়েছে।
বায়ুবাহিত এই কণাগুলো মস্তিষ্কের প্রোটিনকে বিকৃত করে লুই বডি ডিমেনশিয়া সৃষ্টি করে। এটি আলঝেইমারের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ডিমেনশিয়া।
গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জন্য বড় ধরনের সতর্কবার্তা। কারণ বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব হলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে। এজন্য শিল্প ও যানবাহনের ধোঁয়া কমানো, বন অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং গৃহস্থালি কাঠ পোড়ানো হ্রাসে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ও গবেষণার প্রধান ড. শিয়াওবো মাও বলেন, বয়স বা জিনগত কারণের মতো নয়, বায়ুদূষণ একটি পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি। তার ভাষায়, “পরিষ্কার বাতাস মানে মস্তিষ্কের সুস্থতা।”

যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য বিশ্লেষণ
গবেষকরা ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেয়ারের ৫৬.৫ মিলিয়ন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেন। রোগীদের ঠিকানা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি PM2.5 দূষণের মাত্রা অনুমান করা হয়।
ফলাফল দেখায়, দীর্ঘ সময় PM2.5–এর সংস্পর্শে থাকা লুই বডি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তবে অন্য ধরনের স্নায়ুক্ষয়জনিত রোগে প্রভাব তুলনামূলক কম।
লুই বডি ও প্রোটিনের ভূমিকা
লুই বডি গঠিত হয় ‘আলফা-সিনুক্লিন’ নামক প্রোটিন দিয়ে। এই প্রোটিন মস্তিষ্কের জন্য অপরিহার্য, কিন্তু বিকৃত হলে বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর দলা তৈরি করে। এগুলো মস্তিষ্কে ছড়িয়ে স্নায়ুকোষ মেরে ফেলে ভয়াবহ রোগের জন্ম দেয়।

ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা
দূষণের প্রভাব বোঝার জন্য গবেষকরা ১০ মাস ধরে ইঁদুরকে একদিন পরপর PM2.5 কণার সংস্পর্শে রাখেন।
ফলাফল ছিল চমকপ্রদ। স্বাভাবিক ইঁদুরের মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়, মস্তিষ্ক সংকুচিত হয় এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাস পায়। কিন্তু যেসব ইঁদুরকে জিনগতভাবে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল যে তারা আলফা-সিনুক্লিন তৈরি করতে পারে না, তারা প্রায় প্রভাবমুক্ত থাকে।
অতিরিক্ত পরীক্ষা প্রমাণ করে যে PM2.5 দূষণ শক্তিশালী ও বিষাক্ত প্রোটিন দলা তৈরি করে, যা মানুষের লুই বডির মতোই ক্ষতিকর।
বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য
গবেষণার সহ-লেখক ও জনস হপকিনসের অধ্যাপক টেড ডসন বলেন, “বায়ুদূষণ ও লুই বডি ডিমেনশিয়ার মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। আমরা মনে করি এটি ডিমেনশিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।”

এই গবেষণা সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে আরও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মস্তিষ্কে PM2.5 কণা পাওয়া গেছে যা আলঝেইমার ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত।
উপসংহার
ড. মাও বলেন, “আমাদের আবিষ্কার প্রমাণ করছে, বায়ুদূষণ একটি পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি। তাই যদি দূষণ কমানো যায়, তাহলে সমাজব্যাপী ডিমেনশিয়ার মতো ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।”?
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















