০১:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ওয়াল স্ট্রিট থেকে অ্যাম্বুলেন্স: জনাথন ক্লেইজনারের জীবনের পালাবদল

হঠাৎ মোড় ঘোরা জীবন

ওয়াল স্ট্রিটে মিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়ী ছিলেন জনাথন ক্লেইজনার। কিন্তু টাকার স্রোতের মধ্যেও তার ভেতরে ছিল শূন্যতা। তিনি বুঝতে পারলেন, তার কাজ মানুষকে কিছু দিচ্ছে না, বরং কেবল নিজেকে সমৃদ্ধ করছে। তাই ১৩ বছর আগে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু মানবিক একটি পেশায় আসেন—প্যারামেডিক হিসেবে জীবন বাঁচানোর কাজে।

সাবওয়ের এক ঘটনা

একদিন নিউইয়র্ক শহরের একটি সাবওয়ে স্টেশনে একজন নারীকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেল। কেউ ভেবেছিল খিঁচুনি হচ্ছে, কিন্তু ক্লেইজনার বুঝলেন আসলে মাদকসেবনের প্রভাব। রোগী দ্রুত সেরে উঠে চলে গেলেন। ঘটনাটি তার কাছে ছিল সাধারণ, কিন্তু তবুও তিনি বললেন—এটি তার পুরনো ওয়াল স্ট্রিটের চেয়ে অনেক বেশি তৃপ্তিদায়ক কাজ।

“বড় দুর্ঘটনাই আসল কাজ”

ক্লেইজনার বলেন, প্যারামেডিকদের মূল কাজ সাধারণ অসুস্থতা নয়, বরং ভয়াবহ দুর্ঘটনা—ট্রেন চাপা পড়া, অঙ্গচ্ছেদ, আগুনে আটকা পড়া মানুষ। তিনি বলেন, “আমি প্রতিযোগিতাপ্রবণ মানুষ, আর আমি যা করি তাতে আমি ভালো।”অর্থ থেকে জীবনের মূল্য

ওয়াল স্ট্রিটে তিনি বছরে মিলিয়ন ডলার আয় করতেন। তবু ছিলেন অসুখী। ২০১২ সালে নিউইয়র্ক ফায়ার ডিপার্টমেন্টে তিনি নতুন করে যোগ দেন, তখন তার বেতন ছিল মাত্র ৩২ হাজার ডলার। এখন তিনি বছরে ১ লাখ ১০ হাজার ডলার আয় করেন। তুলনায় কম হলেও জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন।

সেরাদের সেরা

৪,৫০০ জরুরি সেবাদানকারীর মধ্যে মাত্র ৬০ জন ‘রেসকিউ মেডিক’। এরা বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে অগ্নিকাণ্ডে ফায়ারফাইটার উদ্ধার, সাবওয়ে গাড়ির নিচ থেকে মানুষ টেনে আনা, লিফট শ্যাফটে নেমে কাজ করা ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন। এর মধ্যে ক্লেইজনার অন্যতম সেরা প্রশিক্ষক। সহকর্মীরা তাকে ডাকেন “শীর্ষ পর্বতচূড়া”।

অসংখ্য মিশনের অভিজ্ঞতা

তিনি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের চূড়ায় স্ট্রোকের রোগীকে উদ্ধার করেছেন, ক্রাইসলার বিল্ডিংয়ের লিফটে হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে বাঁচিয়েছেন। ব্রডওয়ে থিয়েটার থেকে শুরু করে হাডসন নদী পর্যন্ত তার কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত। একবার সেফোরা কসমেটিক্স দোকানে রোগী বাঁচাতে গিয়ে দর্শকদের কাছ থেকে দাঁড়িয়ে অভিবাদনও পেয়েছেন।

ওয়াল স্ট্রিট ছাড়ার গল্প

১৯৯১ সালে ৪০ হাজার ডলারের চাকরি নিয়ে ওয়াল স্ট্রিটে প্রবেশ করেছিলেন। ধীরে ধীরে নিজের ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড গড়ে তোলেন। কিন্তু বুঝলেন, সেখানে শুধু অর্থলোভে মানুষ একে অপরকে ধ্বংস করে। ২০০৮ সালে মাউন্ট রেইনিয়ারে এক দুর্ঘটনায় মেডিকদের সাহসী উদ্ধার দেখে তিনি মেডিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করে পরে পূর্ণকালীন প্যারামেডিক হয়ে যান।

চরম পরিস্থিতির মুখোমুখি

প্রথম শিফটে তিনি গিয়েছিলেন গুলিবিদ্ধ একজনকে উদ্ধার করতে। পরে নানা প্রশিক্ষণ শেষে তিনি রেসকিউ মেডিক হন। হারলেমে প্রায় ৪৫০ কেজি ওজনের রোগীকে বাঁচাতে গিয়ে তাকে অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে এনেস্থেসিয়া দিতে হয়েছিল। এমন অভিজ্ঞতাকে তিনি বলেন “এপিক”।

সবচেয়ে ভয়াবহ স্মৃতি হলো ২০২২ সালের ব্রঙ্কসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। সেখানে শিশু ও পরিবারের মৃত্যু তার মনে গভীর ক্ষত তৈরি করে। একাদশ বছরের এক কন্যার মৃত্যু তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। তিনি স্বীকার করেন, সেই ঘটনার পর থেকে শিশুদের জরুরি ঘটনায় নামার আগে তাকে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম ও ধ্যান করতে হয়।

মানসিক চাপ ও লড়াই

প্যারামেডিকরা খুব কম মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পান। তবে আর্থিক সচ্ছলতার কারণে ক্লেইজনার নিয়মিত থেরাপি নিতে পারেন। ছুটি নিয়ে পাহাড়ি কেবিনে মাছ ধরা বা বই পড়ায় সময় কাটান। তবুও ভীতিকর স্মৃতিগুলো তাকে তাড়া করে ফেরে।

তিনি বলেন, “এগুলো কোনোদিনও যাবে না। এর সঙ্গে বাঁচতে শেখাই আসল।”

নতুন উপলব্ধি

দুটি পেশায় দীর্ঘ প্রতিযোগিতার পর তিনি এখন উপলব্ধি করেছেন—এখানে জেতার কিছু নেই। আসল প্রশ্ন হলো, কিভাবে টিকে থাকা যায়।

ওয়াল স্ট্রিট থেকে অ্যাম্বুলেন্স: জনাথন ক্লেইজনারের জীবনের পালাবদল

১২:০২:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হঠাৎ মোড় ঘোরা জীবন

ওয়াল স্ট্রিটে মিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়ী ছিলেন জনাথন ক্লেইজনার। কিন্তু টাকার স্রোতের মধ্যেও তার ভেতরে ছিল শূন্যতা। তিনি বুঝতে পারলেন, তার কাজ মানুষকে কিছু দিচ্ছে না, বরং কেবল নিজেকে সমৃদ্ধ করছে। তাই ১৩ বছর আগে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু মানবিক একটি পেশায় আসেন—প্যারামেডিক হিসেবে জীবন বাঁচানোর কাজে।

সাবওয়ের এক ঘটনা

একদিন নিউইয়র্ক শহরের একটি সাবওয়ে স্টেশনে একজন নারীকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেল। কেউ ভেবেছিল খিঁচুনি হচ্ছে, কিন্তু ক্লেইজনার বুঝলেন আসলে মাদকসেবনের প্রভাব। রোগী দ্রুত সেরে উঠে চলে গেলেন। ঘটনাটি তার কাছে ছিল সাধারণ, কিন্তু তবুও তিনি বললেন—এটি তার পুরনো ওয়াল স্ট্রিটের চেয়ে অনেক বেশি তৃপ্তিদায়ক কাজ।

“বড় দুর্ঘটনাই আসল কাজ”

ক্লেইজনার বলেন, প্যারামেডিকদের মূল কাজ সাধারণ অসুস্থতা নয়, বরং ভয়াবহ দুর্ঘটনা—ট্রেন চাপা পড়া, অঙ্গচ্ছেদ, আগুনে আটকা পড়া মানুষ। তিনি বলেন, “আমি প্রতিযোগিতাপ্রবণ মানুষ, আর আমি যা করি তাতে আমি ভালো।”অর্থ থেকে জীবনের মূল্য

ওয়াল স্ট্রিটে তিনি বছরে মিলিয়ন ডলার আয় করতেন। তবু ছিলেন অসুখী। ২০১২ সালে নিউইয়র্ক ফায়ার ডিপার্টমেন্টে তিনি নতুন করে যোগ দেন, তখন তার বেতন ছিল মাত্র ৩২ হাজার ডলার। এখন তিনি বছরে ১ লাখ ১০ হাজার ডলার আয় করেন। তুলনায় কম হলেও জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন।

সেরাদের সেরা

৪,৫০০ জরুরি সেবাদানকারীর মধ্যে মাত্র ৬০ জন ‘রেসকিউ মেডিক’। এরা বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে অগ্নিকাণ্ডে ফায়ারফাইটার উদ্ধার, সাবওয়ে গাড়ির নিচ থেকে মানুষ টেনে আনা, লিফট শ্যাফটে নেমে কাজ করা ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন। এর মধ্যে ক্লেইজনার অন্যতম সেরা প্রশিক্ষক। সহকর্মীরা তাকে ডাকেন “শীর্ষ পর্বতচূড়া”।

অসংখ্য মিশনের অভিজ্ঞতা

তিনি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের চূড়ায় স্ট্রোকের রোগীকে উদ্ধার করেছেন, ক্রাইসলার বিল্ডিংয়ের লিফটে হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে বাঁচিয়েছেন। ব্রডওয়ে থিয়েটার থেকে শুরু করে হাডসন নদী পর্যন্ত তার কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত। একবার সেফোরা কসমেটিক্স দোকানে রোগী বাঁচাতে গিয়ে দর্শকদের কাছ থেকে দাঁড়িয়ে অভিবাদনও পেয়েছেন।

ওয়াল স্ট্রিট ছাড়ার গল্প

১৯৯১ সালে ৪০ হাজার ডলারের চাকরি নিয়ে ওয়াল স্ট্রিটে প্রবেশ করেছিলেন। ধীরে ধীরে নিজের ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড গড়ে তোলেন। কিন্তু বুঝলেন, সেখানে শুধু অর্থলোভে মানুষ একে অপরকে ধ্বংস করে। ২০০৮ সালে মাউন্ট রেইনিয়ারে এক দুর্ঘটনায় মেডিকদের সাহসী উদ্ধার দেখে তিনি মেডিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করে পরে পূর্ণকালীন প্যারামেডিক হয়ে যান।

চরম পরিস্থিতির মুখোমুখি

প্রথম শিফটে তিনি গিয়েছিলেন গুলিবিদ্ধ একজনকে উদ্ধার করতে। পরে নানা প্রশিক্ষণ শেষে তিনি রেসকিউ মেডিক হন। হারলেমে প্রায় ৪৫০ কেজি ওজনের রোগীকে বাঁচাতে গিয়ে তাকে অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে এনেস্থেসিয়া দিতে হয়েছিল। এমন অভিজ্ঞতাকে তিনি বলেন “এপিক”।

সবচেয়ে ভয়াবহ স্মৃতি হলো ২০২২ সালের ব্রঙ্কসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। সেখানে শিশু ও পরিবারের মৃত্যু তার মনে গভীর ক্ষত তৈরি করে। একাদশ বছরের এক কন্যার মৃত্যু তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। তিনি স্বীকার করেন, সেই ঘটনার পর থেকে শিশুদের জরুরি ঘটনায় নামার আগে তাকে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম ও ধ্যান করতে হয়।

মানসিক চাপ ও লড়াই

প্যারামেডিকরা খুব কম মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পান। তবে আর্থিক সচ্ছলতার কারণে ক্লেইজনার নিয়মিত থেরাপি নিতে পারেন। ছুটি নিয়ে পাহাড়ি কেবিনে মাছ ধরা বা বই পড়ায় সময় কাটান। তবুও ভীতিকর স্মৃতিগুলো তাকে তাড়া করে ফেরে।

তিনি বলেন, “এগুলো কোনোদিনও যাবে না। এর সঙ্গে বাঁচতে শেখাই আসল।”

নতুন উপলব্ধি

দুটি পেশায় দীর্ঘ প্রতিযোগিতার পর তিনি এখন উপলব্ধি করেছেন—এখানে জেতার কিছু নেই। আসল প্রশ্ন হলো, কিভাবে টিকে থাকা যায়।