মজুরি ও ব্যয়ের নতুন চিত্র
জুলাই মাসে সাত মাস পর প্রথমবার জাপানের বাস্তব মজুরি বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীন বোনাস বৃদ্ধির প্রভাবে এ বৃদ্ধি হয়েছে। একইসঙ্গে ভোক্তা ব্যয়ও টানা তৃতীয় মাসে বেড়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য বলছে, এসব ইতিবাচক অগ্রগতি সত্ত্বেও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এখনও ভোগব্যয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যা জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (BOJ)-এর সুদের হার বাড়ানো নিয়ে সিদ্ধান্তকে জটিল করে তুলছে।
বাস্তব মজুরি ও বোনাসের প্রভাব
মুদ্রাস্ফীতি সমন্বিত বাস্তব মজুরি জুলাই মাসে আগের বছরের তুলনায় ০.৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরের পর এটাই প্রথম ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি। বিশেষ ভাতা ও বোনাস ৭.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই বোনাস বৃদ্ধিই মূলত বাস্তব মজুরি বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির অবস্থা
ভোক্তা মূল্য সূচক অনুযায়ী জুলাইয়ে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৩.৬ শতাংশ। এটি গত বছরের নভেম্বরের পর সবচেয়ে ধীর গতি হলেও এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ২ শতাংশ লক্ষ্যকে অনেক ছাড়িয়ে গেছে।
সোম্পো ইনস্টিটিউট প্লাসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাসাতো কোইকে বলেন, “গ্রীষ্মকালীন বোনাস বৃদ্ধির প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এ বিশেষ ভাতা ছাড়া বাস্তব মজুরি ইতিবাচক থাকবে এমন প্রবণতা এখনো নেই। তাই এ ফলাফল দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়াবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া আগাম হবে।”
নিয়মিত আয় ও কর্পোরেট কার্যক্রম
নিয়মিত বেতন বা মূল বেতন জুলাই মাসে ২.৫ শতাংশ বেড়েছে, যা সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি। অতিরিক্ত কাজের আয় বা ওভারটাইম মজুরি বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালের নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ।
মোট নামমাত্র আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,১৯,৬৬৮ ইয়েন (প্রায় ২,৮৪৮ ডলার), যা ৪.১ শতাংশ বৃদ্ধি। এটিও সাত মাসের মধ্যে দ্রুততম প্রবৃদ্ধি।
এ বছর বসন্তের বার্ষিক মজুরি আলোচনায় বড় জাপানি কোম্পানিগুলো গড়ে ৫ শতাংশের বেশি বেতন বাড়াতে সম্মত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর কাজুও উএদা সম্প্রতি বলেছেন, বেতন বৃদ্ধি এখন বড় প্রতিষ্ঠানের বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে এবং কর্মসংস্থানের চাপ বাড়ায় এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ধীর করে দিতে পারে এবং কর্পোরেট মুনাফায় চাপ সৃষ্টি করতে পারে—এ নিয়েও উদ্বেগ রয়ে গেছে।
ভোক্তা ব্যয়ের অবস্থা
অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আলাদা তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে জাপানের পারিবারিক ব্যয় আগের বছরের তুলনায় ১.৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে এটি বাজারের ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রত্যাশার চেয়ে কম।
মৌসুমি সমন্বিত তথ্য অনুযায়ী, মাসিক ভিত্তিতে ব্যয় ১.৭ শতাংশ বেড়েছে, যা অনুমিত ১.৩ শতাংশের চেয়ে বেশি। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ বিল ও গাড়ির খরচ বাড়ায় ব্যয় বেড়েছে। তবে খাদ্যপণ্যে ব্যয় এখনও সীমিত রয়েছে, কারণ মূল্যস্ফীতি সাধারণ পরিবারের দৈনন্দিন খরচে চাপ তৈরি করছে।
কর্মকর্তা বলেন, “ভোক্তা ব্যয়ের পুনরুদ্ধার এখনো শক্তিশালী নয়।”
মজুরি ও ব্যয় বৃদ্ধির সাম্প্রতিক তথ্য জাপানি অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলেও, মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াচ্ছে।