০২:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুবাই থেকে রাস আল খাইমাহে পাড়ি: কম খরচ, প্রকৃতির শান্তিতে নতুন জীবন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত জীবনযাত্রার আকর্ষণ

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমাহ (আরএকে) ক্রমে দুবাইবাসীদের কাছে নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে। দুবাইয়ের ব্যস্ততা, উচ্চ জীবনযাত্রার খরচ এবং যানজট এড়িয়ে অনেকেই এখন আরএকে চলে যাচ্ছেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাগর ও পাহাড়ের কাছাকাছি থাকার সুবিধা, কম খরচ এবং শান্ত জীবনযাপন মানুষকে টানছে।

উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ ও আর্থিক সাশ্রয়

ব্রিটিশ উদ্যোক্তা বেঞ্জামিন মসম্যান ২০২৫ সালের মে মাসে দুবাই ছেড়ে আরএকে চলে আসেন। তিনি নিজের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন রাস আল খাইমাহ ইকোনমিক জোন (RAKEZ)-এর মাধ্যমে। তার মতে, “দুবাই আর আরএকের তুলনা করলে মনে হবে তারা দুই ভাই—একই রকম হলেও সম্পূর্ণ আলাদা।”

মসম্যান জানান, আরএকে আসার পর তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, “এখানকার রেস্তোরাঁ আর ক্যাফেগুলোতে দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং মানও ভালো।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আরএকের সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার ও সুন্দর, প্রায়ই কাছেই কচ্ছপ দেখা যায়। স্বাস্থ্যসচেতনতার জন্য এখানে রয়েছে স্বাধীনভাবে পরিচালিত জিম, ডায়েট রেস্তোরাঁ ও সাপ্লিমেন্ট শপ। তার ভাষায়, “এখানকার জীবনধারা অনেকটা মায়ামির মতো।”

সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো যানজটের অনুপস্থিতি। মসম্যানের ভাষায়, “এখানে কখনো ট্রাফিকের জট হয় না, শহরটি নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত।” এছাড়া স্থানীয় এমিরাতিদের আন্তরিক আতিথেয়তায় তিনি মুগ্ধ হয়েছেন।

নতুন প্রকল্প ও সম্ভাবনা

আরএকের বড় আকর্ষণগুলোর একটি হলো আসন্ন উইন আল মারজান প্রকল্প, যা দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। মসম্যানের মতে, “এখানে প্রচুর অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনা রয়েছে।”

দুবাই থেকে আরএকের দূরত্বও বেশি নয়। ফলে আরএকে থেকে বসবাস করেও দুবাইয়ের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করা সম্ভব।

নারী উদ্যোক্তার নতুন পথচলা

ভারতীয় উদ্যোক্তা সাগরিকা সাহু দীর্ঘ দুই দশক দুবাইয়ে কাটানোর পর ২০২৩ সালের শেষ দিকে আরএকে চলে আসেন। তিনি বলেন, “রাস আল খাইমাহ শুধু ব্যবসার জন্য নয়, মনের সঙ্গেও গভীরভাবে মিলে যায়।”

দুবাইয়ের ব্যস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি নতুনভাবে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। সাহু জানান, “এখানে সমুদ্রতটে হাঁটা, পাহাড়ের ওপরে সূর্যাস্ত দেখা, স্থানীয় বাজারের নীরবতা—সবকিছু আমাকে এক ধরনের আপন অনুভূতি দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, আরএকে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী, বাড়িঘর প্রশস্ত, আধুনিক সুবিধা আছে, আর নেই যানজট। প্রতিবেশী, সহকর্মী ও ব্যবসায়ীরা আন্তরিকভাবে তাকে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

প্রবাসীদের নতুন অভিজ্ঞতা

দক্ষিণ আফ্রিকার সিনেড মারাইস মে ২০২৫-এ স্বামীর কর্মসূত্রে আরএকে চলে আসেন। তিনি বলেন, “আমি শান্তি, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা আর পরিবার-বান্ধব পরিবেশকে গুরুত্ব দিই। এখানকার জীবন আমাদের ধীর গতির, কিন্তু গভীরভাবে সংযুক্ত করে।”

তিনি সমুদ্র ও পাহাড়ের সহজ প্রাপ্যতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমার বাসা থেকে পাঁচ মিনিটেই সৈকত, আর অর্ধ ঘণ্টায় পাহাড়ে পৌঁছানো যায়।”

তার মতে, দুবাই ও আবুধাবির তুলনায় আরএকে জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম। “এখানে জীবন চাপমুক্ত মনে হয়। ভালো রেস্তোরাঁ, সেবা ও নানা কার্যক্রম আছে, তবে তা অতিরিক্ত নয়।”

সৃজনশীলতা ও মানসিক স্বস্তি পাওয়াকে তিনি সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। “এখানে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট আছে, দূর থেকে কাজ করার জায়গা আছে, আবার প্রকৃতিতে গিয়ে নিজেকে রিচার্জও করা যায়—এ যেন দুই দুনিয়ার সেরা সমন্বয়।”

রাস আল খাইমাহ এখন শুধু একটি বিকল্প শহর নয়, বরং প্রবাসী, উদ্যোক্তা ও পরিবারগুলোর জন্য নতুনভাবে জীবন সাজানোর স্থান হয়ে উঠছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাশ্রয়ী খরচ, যানজটমুক্ত পরিবেশ ও আন্তরিক মানুষের কারণে আরএকে ধীরে ধীরে নতুন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।

দুবাই থেকে রাস আল খাইমাহে পাড়ি: কম খরচ, প্রকৃতির শান্তিতে নতুন জীবন

১২:০১:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত জীবনযাত্রার আকর্ষণ

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমাহ (আরএকে) ক্রমে দুবাইবাসীদের কাছে নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে। দুবাইয়ের ব্যস্ততা, উচ্চ জীবনযাত্রার খরচ এবং যানজট এড়িয়ে অনেকেই এখন আরএকে চলে যাচ্ছেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাগর ও পাহাড়ের কাছাকাছি থাকার সুবিধা, কম খরচ এবং শান্ত জীবনযাপন মানুষকে টানছে।

উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ ও আর্থিক সাশ্রয়

ব্রিটিশ উদ্যোক্তা বেঞ্জামিন মসম্যান ২০২৫ সালের মে মাসে দুবাই ছেড়ে আরএকে চলে আসেন। তিনি নিজের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন রাস আল খাইমাহ ইকোনমিক জোন (RAKEZ)-এর মাধ্যমে। তার মতে, “দুবাই আর আরএকের তুলনা করলে মনে হবে তারা দুই ভাই—একই রকম হলেও সম্পূর্ণ আলাদা।”

মসম্যান জানান, আরএকে আসার পর তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, “এখানকার রেস্তোরাঁ আর ক্যাফেগুলোতে দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং মানও ভালো।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আরএকের সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার ও সুন্দর, প্রায়ই কাছেই কচ্ছপ দেখা যায়। স্বাস্থ্যসচেতনতার জন্য এখানে রয়েছে স্বাধীনভাবে পরিচালিত জিম, ডায়েট রেস্তোরাঁ ও সাপ্লিমেন্ট শপ। তার ভাষায়, “এখানকার জীবনধারা অনেকটা মায়ামির মতো।”

সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো যানজটের অনুপস্থিতি। মসম্যানের ভাষায়, “এখানে কখনো ট্রাফিকের জট হয় না, শহরটি নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত।” এছাড়া স্থানীয় এমিরাতিদের আন্তরিক আতিথেয়তায় তিনি মুগ্ধ হয়েছেন।

নতুন প্রকল্প ও সম্ভাবনা

আরএকের বড় আকর্ষণগুলোর একটি হলো আসন্ন উইন আল মারজান প্রকল্প, যা দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। মসম্যানের মতে, “এখানে প্রচুর অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনা রয়েছে।”

দুবাই থেকে আরএকের দূরত্বও বেশি নয়। ফলে আরএকে থেকে বসবাস করেও দুবাইয়ের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করা সম্ভব।

নারী উদ্যোক্তার নতুন পথচলা

ভারতীয় উদ্যোক্তা সাগরিকা সাহু দীর্ঘ দুই দশক দুবাইয়ে কাটানোর পর ২০২৩ সালের শেষ দিকে আরএকে চলে আসেন। তিনি বলেন, “রাস আল খাইমাহ শুধু ব্যবসার জন্য নয়, মনের সঙ্গেও গভীরভাবে মিলে যায়।”

দুবাইয়ের ব্যস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি নতুনভাবে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। সাহু জানান, “এখানে সমুদ্রতটে হাঁটা, পাহাড়ের ওপরে সূর্যাস্ত দেখা, স্থানীয় বাজারের নীরবতা—সবকিছু আমাকে এক ধরনের আপন অনুভূতি দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, আরএকে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী, বাড়িঘর প্রশস্ত, আধুনিক সুবিধা আছে, আর নেই যানজট। প্রতিবেশী, সহকর্মী ও ব্যবসায়ীরা আন্তরিকভাবে তাকে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

প্রবাসীদের নতুন অভিজ্ঞতা

দক্ষিণ আফ্রিকার সিনেড মারাইস মে ২০২৫-এ স্বামীর কর্মসূত্রে আরএকে চলে আসেন। তিনি বলেন, “আমি শান্তি, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা আর পরিবার-বান্ধব পরিবেশকে গুরুত্ব দিই। এখানকার জীবন আমাদের ধীর গতির, কিন্তু গভীরভাবে সংযুক্ত করে।”

তিনি সমুদ্র ও পাহাড়ের সহজ প্রাপ্যতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমার বাসা থেকে পাঁচ মিনিটেই সৈকত, আর অর্ধ ঘণ্টায় পাহাড়ে পৌঁছানো যায়।”

তার মতে, দুবাই ও আবুধাবির তুলনায় আরএকে জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম। “এখানে জীবন চাপমুক্ত মনে হয়। ভালো রেস্তোরাঁ, সেবা ও নানা কার্যক্রম আছে, তবে তা অতিরিক্ত নয়।”

সৃজনশীলতা ও মানসিক স্বস্তি পাওয়াকে তিনি সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। “এখানে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট আছে, দূর থেকে কাজ করার জায়গা আছে, আবার প্রকৃতিতে গিয়ে নিজেকে রিচার্জও করা যায়—এ যেন দুই দুনিয়ার সেরা সমন্বয়।”

রাস আল খাইমাহ এখন শুধু একটি বিকল্প শহর নয়, বরং প্রবাসী, উদ্যোক্তা ও পরিবারগুলোর জন্য নতুনভাবে জীবন সাজানোর স্থান হয়ে উঠছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাশ্রয়ী খরচ, যানজটমুক্ত পরিবেশ ও আন্তরিক মানুষের কারণে আরএকে ধীরে ধীরে নতুন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।