নেটফ্লিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দেখা সিনেমা
জুন মাসে মুক্তির পর থেকেই নেটফ্লিক্সে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অ্যানিমেটেড মিউজিক্যাল চলচ্চিত্র কেপপ ডেমন হান্টারস। ইতিমধ্যেই এটি নেটফ্লিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দেখা সিনেমা, মোট ২৩৬ মিলিয়ন দর্শক উপভোগ করেছেন। ছবিতে কেপপ গার্ল ব্যান্ড ‘হানট্রিক্স’ দানব ছদ্মবেশী বয় ব্যান্ড ‘সাজা বয়েজ’-এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। দানবরা তাদের ভক্তদের আত্মা চুরি করে, যা পরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের রাজা খেয়ে ফেলে।
সাফল্যের তিনটি প্রধান কারণ
১. আকর্ষণীয় গান
সিনেমার সাফল্যের অন্যতম বড় কারণ এর গান। বেশিরভাগ অ্যানিমেটেড মিউজিক্যাল শিশুদের জন্য ব্রডওয়ে ধাঁচের গান ব্যবহার করে, কিন্তু ডেমন হান্টারস সরাসরি প্রাপ্তবয়স্ক শ্রোতাদের মাথায় রেখে কেপপের স্বতন্ত্র সুর ও ছন্দ ব্যবহার করেছে।
- গানগুলো সহজেই মুখে লেগে যায়, ফলে দর্শকরা দীর্ঘ সময় মনে রাখেন।
- প্রযোজক দলের মধ্যে ছিলেন ব্ল্যাকপিঙ্ক-সহ জনপ্রিয় কেপপ ব্যান্ডের হিটমেকাররা।
- ছবির গান ‘গোইন আপ’ Billboard Hot 100 চার্টে এক নম্বরে পৌঁছায়।
- অন্যান্য গান যেমন ‘ইওর আইডল’ এবং ‘সোডা পপ’-ও চার্টে জায়গা করে নেয়।
- আসল কেপপ গার্ল গ্রুপ টোয়াইস ছবির একটি গান কভার করে, যা ‘হানট্রিক্স’-এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়ায়।
এতটাই উন্মাদনা তৈরি হয়েছে যে কিছু দেশে হলে বিশেষ ‘সিং-অ্যালং’ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি টিকটকে গান ও নাচ কভার করে ভক্তরা আলোচনায় রাখছেন সিনেমাটিকে।
২. গল্পে বন্ধুত্ব ও আত্ম-স্বীকৃতির বার্তা
হানট্রিক্স ত্রয়ী শুধু লড়াই নয়, বরং বন্ধুত্ব আর আত্ম-স্বীকৃতির গল্পও শোনায়।
- তারা একসাথে রামেন খায়, সাজা বয়েজদের প্রথম দেখায় মুগ্ধ হয়।
- রুমি, মূল চরিত্র, অর্ধেক দানব—তার শরীরে বিশেষ নকশা দেখা যায় যা সে লুকিয়ে রাখে।
- সত্য প্রকাশের পর সহকর্মীরা প্রথমে বিস্মিত হলেও পরে তাকে মেনে নেয়।
লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দা মাইক জেন্টাইল বলেন, “এ ছবিতে নিজের প্রকৃত সত্তা খুঁজে পাওয়ার দুর্দান্ত বার্তা আছে।”
৩. কেপপ ফ্যান সংস্কৃতির ব্যবহার
সিনেমার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো কেপপ ভক্তদের আবেগকে কাজে লাগানো।
- ভক্তরা বারবার দেখে স্ট্রিমিং সংখ্যাকে বাড়াচ্ছেন।
- কাহিনীতে ‘হনমুন’ নামের এক জাদুকরী সুরক্ষা ঢাল দেখানো হয়েছে, যা হানট্রিক্সের ভক্তদের ভালোবাসা থেকে শক্তি পায়।
- ছবির চরিত্ররা স্পষ্টভাবে বলে: “যখন আমাদের ভক্তদের আঘাত করো… তখন তার মূল্য দিতে হবে।”
ফ্যান দৃশ্যে শুধু তরুণী নয়, বরং পুরুষ ও বয়স্ক দর্শকদেরও দেখানো হয়েছে। সিডনির ম্যাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পপ-সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ টমাস বডিনেট মন্তব্য করেন, “কোরিয়া ও কোরিয়ার বাইরের ভক্তরা নিজেদের এখানে দেখতে পাচ্ছেন।”
কেপপ ডেমন হান্টারস শুধু অ্যানিমেশন বা সঙ্গীতের গল্প নয়, বরং কেপপ সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বব্যাপী ভালোবাসার প্রতিফলন। গান, কাহিনি ও ফ্যান শক্তি—এই তিন মিলেই এটি নেটফ্লিক্সের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে।