০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
পেলেলিউ: স্বর্গের গুয়ের্নিকা যে আঁকিয়ে ছেলের চোখে যুদ্ধের নগ্ন সত্য মানবস্পর্শে বদলে যাচ্ছে ভবিষ্যতের ট্যাক্সি বহর: ওয়েমোর গাড়িতে শিল্পীদের রঙিন ছোঁয়া জেমস এল ব্রুকসের ‘এলা ম্যাকে’: রাজনীতিকে কেন্দ্র করে ব্যর্থ হাস্যরসের এক ক্লান্তিকর প্রত্যাবর্তন এআই–নির্ভর ভবিষ্যৎ পরিবার: ব্রডওয়েতে ‘মার্জোরি প্রাইম’ মঞ্চে আলোচনার ঝড় নিদা ইয়াসির বিতর্ক: ডেলিভারি রাইডার মন্তব্যে ক্ষমা চাইলেন টিভি উপস্থাপক ৪১৫ হাজার বছর আগেই আগুন তৈরির প্রমাণ: ইংল্যান্ডে নব্য আবিষ্কার বদলে দিচ্ছে মানব বিবর্তনের ইতিহাস জেন জেডের উৎসবপ্রীতি বদলে গেল অভিজ্ঞতায় ঢামেকে সাংবাদিকের ওপর হাদির সমর্থকদের হামলা বাড্ডায় চলন্ত বাসে আগুন পাবনায় বিষাক্ত মদপানে দুই তরুণের মৃত্যু

ইসরায়েলি সেনার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশে গাজা নগরে আতঙ্ক

গাজা নগরে নতুন আতঙ্ক

ইসরায়েলি সেনারা মঙ্গলবার গাজা নগরে বসবাসকারীদের উদ্দেশে আকাশপথে লিফলেট ফেলেছে। এতে বলা হয়, সবাইকে নগর ছাড়তে হবে, কারণ শিগগিরই হামাসকে শেষ আঘাত দেওয়ার জন্য ব্যাপক হামলা চালানো হবে। নগরটি যুদ্ধের আগে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষের আবাস ছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে মানুষ এই হামলার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছিল।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেন, “গাজার মানুষকে বলছি—এই সতর্কবার্তা শোন, সময়মতো সরে যাও।”

বাসিন্দাদের বিভ্রান্তি ও সংকট

এই ঘোষণা সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি করে। গাজাবাসীর অভিযোগ, নগর ছাড়লেও কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই। অনেকে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার কথা ভাবলেও অনেকেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তেমন কোনো গণপ্রস্থানও দেখা যায়নি।

৫৫ বছর বয়সী উম মোহাম্মদ বলেন, “গত সপ্তাহের বোমাবর্ষণেও আমি থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এবার মেয়ে যেখানে আছে সেখানে চলে যাচ্ছি।”

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নগরের প্রধান দুটি হাসপাতাল—আল শিফা ও আল আহলি—সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে চিকিৎসকেরা রোগীদের ফেলে যাবেন না।

যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষতি

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ মানুষ হত্যা করে ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে। সেই থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব। পুরো জনসংখ্যাই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ভূমির অনেক অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং খাদ্যসংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, গাজার বাসিন্দাদের আল-মাওয়াসি অঞ্চলে যেতে হবে। সেখানে তাঁবুতে আগে থেকেই হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ অঞ্চলও বারবার বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছে।

উম সামেদ নামের ৫৯ বছরের এক নারী বলেন, “এখন প্রশ্ন হলো, ঘরে থেকে গাজায় মরব, নাকি দক্ষিণে গিয়ে ইসরায়েলের বোমায় মরব।”

‘মাইটি হারিকেন’ হুমকি

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ সোমবার বলেন, যদি হামাস বন্দীদের মুক্তি না দেয় ও আত্মসমর্পণ না করে, তবে সেনারা গাজায় ‘মাইটি হারিকেন’ চালাবে।

ইসরায়েল ইতোমধ্যে লক্ষাধিক রিজার্ভ সেনা ডেকেছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, সেনারা গাজা নগরে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে পূর্ণাঙ্গ স্থল অভিযান অবিলম্বে শুরু হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সেনারা শহরের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে দাবি করেছে।

এই হামলা শুরু হলে প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি আলোচনায় আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক সংকট

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক মহলকে আহ্বান জানিয়েছে হাসপাতালগুলো রক্ষায় এগিয়ে আসতে। তারা বলেছে, হাজারো রোগী ও আহত মানুষের জীবন হুমকির মুখে।

কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ইসরায়েলের হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে জানিয়েছে, এই মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকে তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করছে।

সমালোচকেরা বলছেন, পুরো গাজা উপত্যকাকে নিরস্ত্রীকরণ ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরিকল্পনা মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বিপর্যস্ত করবে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ব্যবহৃত বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে গাজা নগরকে দুর্ভিক্ষগ্রস্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

নেতানিয়াহুর দাবি, হামাস অস্ত্র না ছাড়ায় এবং জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ায় ইসরায়েলের হাতে আর কোনো পথ নেই। অন্যদিকে হামাস বলছে, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া তারা অস্ত্র ছাড়বে না এবং জিম্মিদের মুক্তিও যুদ্ধ শেষ করার শর্ত ছাড়া সম্ভব নয়।

নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা

এদিকে গাজায় ত্রাণ পাঠাতে ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করা একটি বহর জানিয়েছে, তাদের একটি প্রধান নৌকা তিউনিসিয়ার বন্দরে ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে। তবে ছয়জন যাত্রী ও নাবিক নিরাপদ আছেন। বহরে সুইডিশ কর্মী গ্রেটা থানবার্গও আছেন। তিনি গত জুনে গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টার সময় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে আটক হয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিলেন।

গাজা নগরের বাসিন্দাদের সামনে এখন দোটানা—বোমা ঝুঁকি নিয়ে ঘরে থাকা, নাকি দক্ষিণে গিয়েও একই বিপদের মুখে পড়া। আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধবিরতির আশা করলেও ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পেলেলিউ: স্বর্গের গুয়ের্নিকা যে আঁকিয়ে ছেলের চোখে যুদ্ধের নগ্ন সত্য

ইসরায়েলি সেনার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশে গাজা নগরে আতঙ্ক

০৪:২৮:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজা নগরে নতুন আতঙ্ক

ইসরায়েলি সেনারা মঙ্গলবার গাজা নগরে বসবাসকারীদের উদ্দেশে আকাশপথে লিফলেট ফেলেছে। এতে বলা হয়, সবাইকে নগর ছাড়তে হবে, কারণ শিগগিরই হামাসকে শেষ আঘাত দেওয়ার জন্য ব্যাপক হামলা চালানো হবে। নগরটি যুদ্ধের আগে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষের আবাস ছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে মানুষ এই হামলার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছিল।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেন, “গাজার মানুষকে বলছি—এই সতর্কবার্তা শোন, সময়মতো সরে যাও।”

বাসিন্দাদের বিভ্রান্তি ও সংকট

এই ঘোষণা সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি করে। গাজাবাসীর অভিযোগ, নগর ছাড়লেও কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই। অনেকে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার কথা ভাবলেও অনেকেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তেমন কোনো গণপ্রস্থানও দেখা যায়নি।

৫৫ বছর বয়সী উম মোহাম্মদ বলেন, “গত সপ্তাহের বোমাবর্ষণেও আমি থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এবার মেয়ে যেখানে আছে সেখানে চলে যাচ্ছি।”

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নগরের প্রধান দুটি হাসপাতাল—আল শিফা ও আল আহলি—সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে চিকিৎসকেরা রোগীদের ফেলে যাবেন না।

যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষতি

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ মানুষ হত্যা করে ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে। সেই থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব। পুরো জনসংখ্যাই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ভূমির অনেক অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং খাদ্যসংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, গাজার বাসিন্দাদের আল-মাওয়াসি অঞ্চলে যেতে হবে। সেখানে তাঁবুতে আগে থেকেই হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ অঞ্চলও বারবার বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছে।

উম সামেদ নামের ৫৯ বছরের এক নারী বলেন, “এখন প্রশ্ন হলো, ঘরে থেকে গাজায় মরব, নাকি দক্ষিণে গিয়ে ইসরায়েলের বোমায় মরব।”

‘মাইটি হারিকেন’ হুমকি

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ সোমবার বলেন, যদি হামাস বন্দীদের মুক্তি না দেয় ও আত্মসমর্পণ না করে, তবে সেনারা গাজায় ‘মাইটি হারিকেন’ চালাবে।

ইসরায়েল ইতোমধ্যে লক্ষাধিক রিজার্ভ সেনা ডেকেছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, সেনারা গাজা নগরে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে পূর্ণাঙ্গ স্থল অভিযান অবিলম্বে শুরু হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সেনারা শহরের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে দাবি করেছে।

এই হামলা শুরু হলে প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি আলোচনায় আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক সংকট

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক মহলকে আহ্বান জানিয়েছে হাসপাতালগুলো রক্ষায় এগিয়ে আসতে। তারা বলেছে, হাজারো রোগী ও আহত মানুষের জীবন হুমকির মুখে।

কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ইসরায়েলের হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে জানিয়েছে, এই মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকে তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করছে।

সমালোচকেরা বলছেন, পুরো গাজা উপত্যকাকে নিরস্ত্রীকরণ ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরিকল্পনা মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বিপর্যস্ত করবে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ব্যবহৃত বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে গাজা নগরকে দুর্ভিক্ষগ্রস্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

নেতানিয়াহুর দাবি, হামাস অস্ত্র না ছাড়ায় এবং জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ায় ইসরায়েলের হাতে আর কোনো পথ নেই। অন্যদিকে হামাস বলছে, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া তারা অস্ত্র ছাড়বে না এবং জিম্মিদের মুক্তিও যুদ্ধ শেষ করার শর্ত ছাড়া সম্ভব নয়।

নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা

এদিকে গাজায় ত্রাণ পাঠাতে ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করা একটি বহর জানিয়েছে, তাদের একটি প্রধান নৌকা তিউনিসিয়ার বন্দরে ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে। তবে ছয়জন যাত্রী ও নাবিক নিরাপদ আছেন। বহরে সুইডিশ কর্মী গ্রেটা থানবার্গও আছেন। তিনি গত জুনে গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টার সময় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে আটক হয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিলেন।

গাজা নগরের বাসিন্দাদের সামনে এখন দোটানা—বোমা ঝুঁকি নিয়ে ঘরে থাকা, নাকি দক্ষিণে গিয়েও একই বিপদের মুখে পড়া। আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধবিরতির আশা করলেও ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।