সংক্ষিপ্তসার
- ইথিওপিয়া বলছে, বাঁধ দেশ ও অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে
- মিসরের দাবি, উদ্বোধন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে
- ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিলেন
- এখনো বহু ইথিওপিয়ান জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত নন
ইথিওপিয়ার স্বপ্ন ও বাঁধের গুরুত্ব
ইথিওপিয়া মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ উদ্বোধন করেছে। গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ ড্যাম (GERD) নামে পরিচিত এই প্রকল্প লক্ষ লক্ষ মানুষের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাবে, তবে একই সাথে এটি মিসরের সাথে বিরোধ আরও বাড়িয়েছে।

১২ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ ইথিওপিয়া এই ৫০০ কোটি ডলারের প্রকল্পকে তার অর্থনৈতিক স্বপ্নের মূলভিত্তি হিসেবে দেখছে। বাঁধটি নীলনদের একটি শাখানদীতে নির্মিত।
২০২২ সালে প্রথম টারবাইন চালুর পর থেকে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার এটি সর্বোচ্চ ৫,১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পৌঁছায়। এভাবে এটি বিশ্বের ২০টি বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আকাশে যুদ্ধবিমান প্রদর্শনী হয় এবং প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ সোমালিয়ার, জিবুতির ও কেনিয়ার প্রেসিডেন্টদের উপস্থিতিতে বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, “সুদান ও মিসরের ভাইদের প্রতি আমাদের বার্তা—এই বাঁধ নির্মিত হয়েছে উন্নয়নের জন্য, অঞ্চলকে বিদ্যুতায়িত করার জন্য এবং কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের ইতিহাস পাল্টানোর জন্য। কাউকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে নয়।”
জনগণের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর অঙ্গীকার
আবি আহমেদ জানান, এই বাঁধ প্রায় অর্ধেক জনগণের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে যারা ২০২২ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের আওতার বাইরে ছিলেন। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রতিবেশী দেশগুলোতে রপ্তানির পরিকল্পনাও রয়েছে।
বাঁধের জলাধার লন্ডনের চেয়ে বড় এলাকা প্লাবিত করেছে। সরকার দাবি করছে, এটি সেচের জন্য স্থায়ী পানি সরবরাহ করবে এবং বন্যা ও খরা মোকাবিলায় সাহায্য করবে।
মিসর ও সুদানের উদ্বেগ
নীলনদের নিম্নপ্রবাহে থাকা মিসর ও সুদান শুরু থেকেই এ প্রকল্পকে আশঙ্কার চোখে দেখছে। মিসরের ভয়, খরার সময় বাঁধ তার পানির প্রবাহ সীমিত করতে পারে এবং ভবিষ্যতে আরও বাঁধ নির্মাণকে উৎসাহিত করবে।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে, বাঁধ উদ্বোধন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। দেশটির অভিযোগ, এটি শতবর্ষ পুরনো পানিবণ্টন চুক্তি ভঙ্গ করছে এবং মিসরের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।
১০ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার মিসর তার পানির প্রায় ৯০% নীলনদের উপর নির্ভরশীল। কায়রো ঘোষণা দিয়েছে, “জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার” তাদের রয়েছে।
যদিও মিসর সরাসরি কোনো প্রতিশোধ নেয়নি, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইথিওপিয়ার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে সম্পর্ক গভীর করেছে। সুদানও বাঁধের পানি ভরাট ও পরিচালনার জন্য আইনগত চুক্তির দাবি তুলেছে, যদিও এটি সস্তা বিদ্যুৎ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে লাভবান হতে পারে।

ইথিওপিয়ার পাল্টা যুক্তি
ইথিওপিয়া ২০২০ সাল থেকে ধাপে ধাপে জলাধার পূরণ করছে। তাদের দাবি, এতে নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না। স্বাধীন গবেষণাতেও দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য পানি সংকট দেখা দেয়নি। অনুকূল বৃষ্টিপাত ও সতর্কভাবে ভরাট করাই এর কারণ।
দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জর্জরিত ইথিওপিয়ার জন্য এই বাঁধ জাতীয় গৌরবের প্রতীক। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক গবেষক মেকদেলাওইত মেসাই বলেন, “এটি আমাদের একত্রিত করেছে এবং প্রমাণ করেছে আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে কী অর্জন করতে পারি।”
অর্থায়ন ও স্থানীয় অভিজ্ঞতা
স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, প্রকল্পের ৯১% অর্থায়ন করেছে রাষ্ট্র এবং ৯% এসেছে সাধারণ মানুষের বন্ড কেনা ও অনুদান থেকে।
বাঁধের পাশে বসবাসকারী কৃষক সুলতান আবদুলাহি হাসান বলেন, “আমাদের গ্রামে এখন বিদ্যুৎ এসেছে। ফ্রিজ ব্যবহার করছি, ঠান্ডা পানি পান করছি। সবকিছুর জন্য এখন বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে।”
তবে গ্রামীণ এলাকায় অনেকেরই এখনো অপেক্ষা করতে হবে। বিদ্যুৎ পরিবহনের অবকাঠামো দুর্বল থাকায় সবার কাছে দ্রুত বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ২০২২ সালের হিসাবে শহরাঞ্চলে ৯৪% বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও সার্বিকভাবে কেবল ৫৫% মানুষ বিদ্যুতের আওতায় ছিলেন।

ইথিওপিয়া বলছে, এই বাঁধ হুমকি নয়, বরং উন্নয়ন ও বিদ্যুতায়নের প্রতীক। কিন্তু মিসর ও সুদানের উদ্বেগে আঞ্চলিক উত্তেজনা থেকেই যাচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















