প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়ে চাপের মুখে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেলকে লেখা পদত্যাগপত্রে ওলি বলেন, দেশের ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির কারণে তিনি পদত্যাগ করছেন, যাতে রাজনৈতিক সমাধানের পথ তৈরি হয় এবং সংকট মোকাবিলা করা যায়।

বিক্ষোভের প্রেক্ষাপট
বিক্ষোভ শুরু হয় সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির ইস্যুতে। সোমবার পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই স্কুলের পোশাকে থাকা তরুণ। এ আন্দোলনকে “জেন জেড প্রোটেস্ট” বলা হচ্ছে। তারা দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছিল। মঙ্গলবার সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এর আগে ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ ছিল, তবে টিকটক ও ভাইবার চালু ছিল। অনেকে ভিপিএন ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলছিলেন।
সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ
কাঠমান্ডুতে সোমবার কারফিউ জারি হলেও মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা তা অমান্য করে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তারা স্লোগান দিতে দিতে সরকারি ভবনে হামলা চালায়। মন্ত্রীদের বাড়ি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও আগুন দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে রাজধানীর আকাশে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।

নেতাদের মুক্তি
মঙ্গলবার রাতেই বিক্ষোভকারীরা একটি আটককেন্দ্রে হামলা চালিয়ে সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির চেয়ারম্যান রবি লামিছানেকে মুক্ত করেন। তিনি ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে একাধিক সমবায় দুর্নীতি মামলায় আটক ছিলেন, যা তার সমর্থকদের মতে ওলি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশোধ।
সরকারি ভবনে হামলা
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুর কেন্দ্রে সুপ্রিম কোর্ট, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ অবস্থায় নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীরা সংযমের আহ্বান জানান এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষার অনুরোধ করেন।
রাজনৈতিক সংকট ও ভবিষ্যৎ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিনেশ কাফলে মন্তব্য করেছেন, বিক্ষোভকারীদের হত্যাকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো বৈধতা হারিয়েছে। দলগুলো একসঙ্গে কাজ না করলে তাদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
ওলি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট)-এর চেয়ারম্যান, যা সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। তিনি নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকার পরিচালনা করছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সালে তাকে ক্ষমতা নেপালি কংগ্রেসের সভাপতি শের বাহাদুর দেউবাকে হস্তান্তর করার কথা ছিল। এখন সেই জোট চুক্তি অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
৭৩ বছর বয়সী ওলি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। চীন ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই অভিজ্ঞ নেতা স্বৈরশাসিত পঞ্চায়েত আমলে ১৪ বছর কারাভোগ করেছিলেন।

পরবর্তী পদক্ষেপ
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের সবচেয়ে বড় দলের নেতা সরকার গঠনের চেষ্টা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ওলির দল নতুন একজন সিনিয়র নেতাকে মনোনীত করতে পারে অথবা রাষ্ট্রপতি নেপালি কংগ্রেসকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















