আকাশসীমা লঙ্ঘন ও পোল্যান্ডের প্রতিক্রিয়া
পোল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক বিমান হামলার সময় একাধিক ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। ন্যাটো ও পোল্যান্ড যৌথভাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে এসব ড্রোনের কিছু ভূপাতিত করে। সামরিক কমান্ড এটিকে “আগ্রাসনের কাজ” আখ্যা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক জানান, অভিযান এখনও চলমান এবং তিনি ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি মন্ত্রিসভাকে জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছেন।

সতর্কতা ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি
সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাডারে ১০টির বেশি বস্তু শনাক্ত করা হয়, যেগুলোর মধ্যে হুমকিস্বরূপগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করার কাজ চলছে।
কমান্ড কর্তৃপক্ষ জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে পোডলাসকি, মাজোভিয়েচকি এবং লুবলিন অঞ্চলে ঝুঁকি বেশি বলে সতর্ক করা হয়েছে।
বিমানবন্দর বন্ধ
ওয়ারশ’র শোপেন বিমানবন্দরসহ অন্তত চারটি বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে অনেক ফ্লাইটকে কাটোভিৎসে, ভ্রোৎসলাভ এবং পোজনানের মতো শহরে সরিয়ে নিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন প্রশাসনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন সিনেটর ডিক ডারবিন বলেছেন, ন্যাটোর আকাশসীমা লঙ্ঘন করে রাশিয়া মূলত ন্যাটোর প্রতিরোধ শক্তি পরীক্ষা করছে। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জো উইলসন আরও সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, পোল্যান্ডে রুশ ড্রোন হামলা আসলে “যুদ্ধের কাজ”। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।
ট্রাম্প সম্প্রতি জানিয়েছেন, রাশিয়ার ওপর নতুন ধাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা তিনি বিবেচনা করছেন। আগস্টে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর পরও এ ইঙ্গিত দেন যে, ব্যর্থ শান্তি আলোচনার পর এখন চাপ বাড়ানোর সময় এসেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নিষেধাজ্ঞা কর্মকর্তা সোমবার ওয়াশিংটনে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
সীমান্ত উত্তেজনা ও মহড়া
২০২২ সালে ইউক্রেনের একটি ভ্রান্ত ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ পোল্যান্ডে পড়ে দুইজন নিহত হওয়ার পর থেকে দেশটি আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের ব্যাপারে উচ্চ সতর্কতায় আছে। তবে এবারই প্রথম পোল্যান্ড বা মিত্র বাহিনী সফলভাবে ড্রোন ধ্বংস করেছে।
এদিকে, রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়া “জাপাদ” নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ কারণে পোল্যান্ড বেলারুশ সীমান্ত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিবেশী লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, তাদের সীমান্ত প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করা হবে।

সামরিক বিশ্লেষণ
মার্কিন সেনাবাহিনীর ইউরোপীয় সাবেক কমান্ডার বেন হজেস বলেছেন, রুশ ড্রোনের এসব অনুপ্রবেশ আসলে ন্যাটো ও জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা যাচাইয়ের কৌশল। তার মতে, প্রতিবারই কার্যকরভাবে জবাব দেওয়া জরুরি, এবং এর জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
রুশ ড্রোন হামলায় পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের সীমারেখাই বদলাচ্ছে না, বরং ন্যাটো জোটের সরাসরি সম্পৃক্ততার শঙ্কাও বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে, সংঘাতটি আরও বিস্তৃত ভূ-রাজনৈতিক সংকটে রূপ নিতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















