ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলন
ব্রাজিলে আয়োজিত “ব্রিকসভুক্ত মুসলিম নেতাদের দ্বিতীয় সম্মেলন” এই ফোরামের জন্য নতুন এক অধ্যায় এবং ব্রিকস জোটকে আরও শক্তিশালী করার একটি মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংকট মোকাবিলায় ব্রিকস কাঠামোয় মুসলিম নেতাদের পরামর্শ ও সমন্বয় শুধু কাম্য নয়, বরং অপরিহার্য।
সংস্কৃতি ও বৈশ্বিক রাজনীতি
বর্তমান বিশ্বে শাসন ও যৌথ ব্যবস্থাপনার যেকোনো মডেল গড়ে তুলতে হলে এর সাংস্কৃতিক ভিত্তি ও মাত্রা বিবেচনা করা জরুরি। ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো এ বিষয়ে সচেতন এবং একমত। তাই এই সম্মেলন কেবল বিশ্ব সংকট নিয়ে আলোচনা করার স্থান নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ সংহতি, সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মডেল গড়ে তোলার প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে একটি টেকসই কাঠামোয় রূপ দেওয়া সম্ভব হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে ব্রিকস নেতাদের অঙ্গীকার প্রশংসনীয়।

ইরানের ভূমিকার স্বীকৃতি
সম্মেলনে তিনটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
প্রথমত, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে ব্যাপকভাবে প্রশংসা করা হয়েছে। সম্প্রতি জায়নিস্ট শত্রুর আক্রমণের শিকার হলেও ইরান কঠোর জবাব দিয়েছে এবং বহু বছর ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এই অবস্থান ব্রিকস সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং ইরানের প্রস্তাবগুলোর গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে।
ইরান সম্মেলনে দেখিয়েছে কীভাবে জায়নিস্ট শাসন ও তাদের মিত্ররা মানবতার জন্য অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে হুমকি সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে ব্রিকস ও সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) স্পষ্ট করেছে যে তাদের কৌশলের মূল কেন্দ্রে থাকতে হবে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং ধর্মীয় সহাবস্থানের প্রচার। বৈশ্বিক দমননীতি ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ইরানের অগ্রণী ভূমিকা এখন আরও স্পষ্ট। সংস্কৃতি ও ভূ-রাজনীতিকে ভিত্তি করে কৌশল নির্ধারণ যৌথ সহযোগিতা বাড়াবে এবং নানা হুমকি মোকাবিলায় কার্যকর হবে।
সংস্কৃতির প্রধান ভূমিকা
দ্বিতীয়ত, সংস্কৃতি সবসময়ই ইনপুট ও আউটপুট তৈরি করে। আজকের বিশ্বে ব্রিকস ও এসসিও হলো সেই মঞ্চ, যেখানে এই সাংস্কৃতিক ইনপুট কার্যকর হয়। এ ধরনের জোট কেবল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্য গড়ার সুযোগ নয়, বরং বহুসংস্কৃতিবাদকে প্রসারিত করা এবং নতুন এক সাংস্কৃতিক পূর্ব গড়ে তোলার প্ল্যাটফর্ম।
হেজেমোনিক শক্তিগুলোর নীরবতা কিংবা বিরক্তি প্রমাণ করে যে ব্রিকসে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নেতাদের অংশগ্রহণ তাদের অস্বস্তিতে ফেলছে। কারণ সংস্কৃতি শুধু একটি উপকরণ নয়, বরং এটি ব্রিকস ও এসসিওর যৌথ জীবনের চালিকাশক্তি। সংস্কৃতি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে দিকনির্দেশনা দেয় এবং তাদের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রয়োজন
তৃতীয়ত, বর্তমান বৈশ্বিক সম্পর্কের কাঠামোয় বিশেষ মনোযোগ দরকার। বিশ্ব এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সহমর্মিতা, সমন্বয় ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দাবি করছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার এই সময়ে আন্তঃধর্মীয় সহাবস্থান কেবল নৈতিক বা মানবিক দাবি নয়, বরং কৌশলগত প্রয়োজন।
তাই প্রথমে একটি অভিন্ন ও পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক ধারণা তৈরি করতে হবে। এরপর সেই বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে কাঙ্ক্ষিত অবস্থান ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াকে একত্রে বাঁধতে পারে কেবল সংস্কৃতি ও সভ্যতাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এখন ব্রিকসে ধর্মীয় নেতাদের সমন্বয়কে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। ইতিমধ্যে এ পথে কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। এই কৌশলগত সম্পদের চারপাশে সমন্বয় গড়ে উঠলে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে, সাধারণ হুমকি মোকাবিলা সহজ হবে এবং সীমাহীন সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















